বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার নিয়ে মতবিরোধ

নিজামুল হক |

আগামী বছর থেকে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে বছরে দুটি সেমিস্টার চালুর নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এ সিদ্ধান্ত মানতে আপত্তি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু থেকেই এ পদ্ধতি ভালোভাবে চলছে। এর পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে তারা বলেন, ওই সব দেশে বছরে দুইয়ের বেশি সেমিস্টার পদ্ধতি চালু রয়েছে।

আগামী বছর থেকে দুই সেমিস্টার চালুর নির্দেশনা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসি বলছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রথা বাতিল করে জানুয়ারি থেকে দুই সেমিস্টার চালু করতে হবে। পাশাপাশি মানসম্মত সিলেবাস-কারিকুলাম পড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।

ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই তিন সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। বছরে তিনটি সেমিস্টার থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের টিউশন ও সেশন ফিসহ নানা খাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া তিন সেমিস্টারের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী মাত্র একটি সেমিস্টারের জন্য চার মাস সময় পায়। ফলে কোর্স নামে মাত্র শেষ হলেও শিক্ষার্থীরা চাহিদা অনুযায়ী শিখতে পারে না। সেশন চার্জ, উন্নয়ন, ল্যাবরেটরিসহ বিভিন্ন খাতের ফি হিসেবে ৯-১১ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। বছরে দুটি সেমিস্টার হলে ১০ হাজার টাকা ব্যয় কমবে।

তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের বক্তব্য ভিন্ন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি) বলছে, বর্তমান পদ্ধতিই সফল ও পরীক্ষিত।

সংগঠনটি বলছে, সরকারের পক্ষ থেকে হঠাত্ প্রতিষ্ঠিত ও সফল একটি পদ্ধতিকে ভেঙে দুই সেমিস্টারের নির্দেশনা তাদের কাছে বোধগম্য নয়। এতে শিক্ষার্থীদের খরচ কমবে না বরং বাড়বে।

রাজধানীর সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বলেন, ‘যেহেতু তিন সেমিস্টারের চেয়ে দুই সেমিস্টারের প্রতি সেমিস্টারের ব্যাপ্তিকাল কম, তাই শিক্ষার্থীরা তিন সেমিস্টার পদ্ধতিতে তাদের পড়াশোনার প্রতি বেশি মনোযোগী থাকেন। কারণ, দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা আপাত দৃষ্টিতে সময় বেশি আছে মনে করে পড়াশোনাতে মনোনিবেশ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না, যা তাদের পরীক্ষার ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিক্ষার্থীরা ট্রাইমেস্টারে অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক কোর্স নেন কিন্তু বাই সেমিস্টারে বেশি সংখ্যক কোর্স নিতে হয়। দুই সেমিস্টার শেষে এতগুলো কোর্সের সিলেবাস শিক্ষার্থীদের জন্য মনে রাখা কষ্টকর হয়ে পরে, দীর্ঘ মেয়াদে এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি জানিয়েছে, দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হলে শিক্ষার্থীদের খরচ কমার কোনো কারণ নেই। উল্টো মাসভিত্তিক ফি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংগঠন মনে করে, এমন একটি সিদ্ধান্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব সময়ই সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। আমরা আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে চাই।

তবে প্রাইম ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় অনুষদের প্রধান অধ্যাপক আব্দুর রহমান বলেন, দুই সেমিস্টার পদ্ধতি ভালো। কারণ এর ফলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন সেমিস্টার প্রথা নেই। ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সেমিস্টার চলে। এ ছাড়া শুরু থেকেই ১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সেমিস্টার চালু রয়েছে। তা হলে অন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পারবে না কেন।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, মানসম্মত উচ্চ শিক্ষার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি সেমিস্টার থাকা বাঞ্ছনীয়। এ ছাড়া বিদেশেও কোথাও তিন সেমিস্টার চালু নেই। ইউজিসি তার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না। এ সিদ্ধান্ত মানতেই হবে।

সূত্র: ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055630207061768