বড় শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা : প্রয়োজন দক্ষতা ও উপযুক্ত কৌশল

শরীফুল্লাহ মুক্তি |

বিগত দশকগুলোতে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের ফলে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যাগত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের বিদ্যালয়গুলো এখন শিক্ষার্থীতে পরিপূর্ণ। ভর্তির হারও শতভাগের কাছাকাছি। বর্তমানে সব শ্রেণী ও পেশার অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী। এমনকি প্রান্তিক শ্রেণীর জনগোষ্ঠীও। বাদ যাচ্ছে না বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরাও। কিন্তু এখনও আমরা সকল শিশুর জন্য মানসম্মত ও একীভূত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারিনি। বর্তমানে এটি আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

আমাদের দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে সর্বাগ্রে প্রয়োজন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা অনেক কম। বিশেষ করে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এ সমস্যা আরও প্রকট। তাছাড়া আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা হলো যারা প্রাথমিক স্তরে শিক্ষকতা করতে আসেন তারা কোনোরকম পূর্ব-অভিজ্ঞতা ছাড়াই শিক্ষকতা করতে আসেন। সরকারের বিভিন্ন বিভাগে, যেমন_ স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদ বা যে কোন বিভাগে টেকনিক্যাল পেশায় চাকরি করতে হলে তাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষিত ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন হতে হয়। শিক্ষিত বলতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নূ্যনতম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা ডিপ্লোমাধারীকে বোঝানো হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে শিক্ষকতা একটি জটিল পেশা সত্ত্বেও এ বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান বা কোনরকম পূর্ব-অভিজ্ঞতা ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষা হলো শিক্ষার মূল ভিত্তি_ এ সময়টা খুবই স্পর্শকাতর। তাই এ সময়ে শিক্ষার্থীদের সাথে যথেষ্ট আন্তরিক ও সতর্কতামূলক আচরণ করতে হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের অবশ্যই পেড্যাগোগিক্যাল জ্ঞান (Pedagogical Knowledge) ও শিশু মনোবিজ্ঞান (Child-Psychology) সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।

কিছুদিন পূর্বে ময়মনসিংহ জেলাধীন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে পাঠ-সমীক্ষা (লেসন স্টাডি) বিষয়ক প্রশিক্ষণের একটি অধিবেশন পর্যবেক্ষণ করছিলাম। সেখানে হাসের আলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজেদা সুলতানা প্রীতি ৩য় শ্রেণীর প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়ে একটি প্রদর্শনী পাঠ নিচ্ছিলেন। পাঠ শেষে পাঠ-উত্তর আলোচনার এক পর্যায়ে একজন শিক্ষক জানালেন যে, তার বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে ১১৮ জন শিক্ষার্থী আছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা ৪ জন। শিক্ষক স্বল্পতার জন্য ঐ শ্রেণীতে সেকশন বা শাখা করাও সম্ভব নয়। তারপর তিনি সকলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, এত বড় শ্রেণী আমরা কীভাবে ব্যবস্থাপনা (ম্যানেজ) করতে পারি। বিস্তারিত আলোচনায়ও তেমন কোনো কার্যকর পদ্ধতিতে একমত হওয়া যায়নি। বিষয়টি কার্যত আমাকে নতুন করে ভাবিয়ে তোলে। আসলে শুধু ঐ বিদ্যালয় নয়, বাস্তব অবস্থা হচ্ছে বাংলাদেশের অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক স্বল্পতায় ভুগছে এবং অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষই বেশি শিক্ষার্থীসমৃদ্ধ।

আমাদের দেশে প্রতিটি বিদ্যালয়েই ১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণীতে শিশুসংখ্যা গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন বা এরও বেশি। আবার কোনো কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিটি শ্রেণীতেই শিশুসংখ্যা ৭০/৮০ জনের বেশি। শ্রেণীতে শিশুসংখ্যা ৪০ জনের অধিক হলেই আমরা ঐ ধরনের শ্রেণীকে অধিক শিশু সংবলিত শ্রেণী বলে থাকি। একজন শিক্ষকের পক্ষে অধিক সংখ্যক শিশু সংবলিত শ্রেণীতে শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য। তাই অধিক শিশু সংবলিত শ্রেণী ব্যবস্থাপনায় শিক্ষককে কিছু বিশেষ দক্ষতা ও কৌশল প্রয়োগ করতে হয়।

অধিক শিশু সংবলিত শ্রেণীতে শিখন-শেখানো কার্যক্রম সুষ্ঠু ও ফলপ্রসূভাবে সম্পাদন ও কাঙ্ক্ষিত শিখনফল/আচরণিক উদ্দেশ্য অর্জন করানোর জন্য শিক্ষক তাৎক্ষণিকভাবে অবস্থা অনুধাবন করে বিশেষ কিছু দক্ষতা ও কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। অধিক শিশু সংবলিত শ্রেণীতে শিখন-শেখানো কাজে যে ধরনের দক্ষতা ও কৌশল প্রয়োগ করা প্রয়োজন, সে ধরনের কিছু দক্ষতা ও কৌশল অল্প কিছু সংখ্যক শিক্ষকই জানেন। তাছাড়া সেগুলো দৈনন্দিন শ্রেণী শিখন-শেখানো কার্যক্রমে অনেকে প্রয়োগও করে থাকেন। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষকই কীভাবে বড় শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনা করতে হয় তার পদ্ধতি/কৌশলসমূহ জানেন না। আবার অনেক শিক্ষকেরই দৃষ্টিভঙ্গিই বিষয়টির প্রতি ইতিবাচক নয়, এটাকে তারা অতিরিক্ত ঝামেলা মনে করেন।

অপেক্ষাকৃত বেশি শিশু সংবলিত শ্রেণীতে শিখন-শেখানো পেশাগত কাজকে আরো ফলপ্রসূ করার জন্য যে সকল দক্ষতা ও কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে তার কিছু বিবরণ এ পর্যায়ে তুলে ধরা হলো।

বছরের শুরুতেই শিক্ষক শ্রেণীতে শিশুদের অনুসরণীয় একটি চার্ট তৈরি করে তা পালনের জন্য শ্রেণীকক্ষের দেয়ালে ঝুলিয়ে দিতে পারেন। শিখন-শেখানো কাজ পরিচালনার শুরুতেই দেয়ালে টানিয়ে দেওয়া চার্টের বিষয়ের প্রতি শিশুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে। এটি শিখন-শেখানো কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যেমন_ শিক্ষকের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনব, দলে কাজের সময় সবার মতামত শুনব, অন্যের মতের সাথে একমত না হলে ভদ্রভাবে যুক্তি দিয়ে তার মতো খ-ন করব, দলে সক্রিয় অংশগ্রহণ করব, কিছু বলার আগে হাত তুলব, সবার সাথে ভালো ব্যবহার করব এবং সদ্ভাব বজায় রাখব, আমার খাতায় আমার কথা বা চিন্তা নিজেই লিখব, সবাই একসাথে কথা বলব না, একজন বলার পর অন্যজন বলব, সবাইকে দলের কাজ উপস্থাপন করার এবং অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেব, শান্তি বজায় রাখব যাতে সবাই সবার কথা শুনতে পায়, দলের কাজ পরিচালনায় একে অন্যকে সহযোগিতা করব ইত্যাদি।

শিক্ষক বছরের শুরুতে বেইজলাইন সার্ভের মাধ্যমে শ্রেণীতে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠগত অবস্থান নির্ধারণ করে স্তরভিত্তিক পাঠদানের ব্যবস্থা করতে পারেন। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রতি বছরের শুরু থেকেই বিশেষ নজর দেয়া জরুরি। পাঠ পরিকল্পনায় তাদের জন্য আলাদা কাজ (তাদের উপযোগী কাজ) রাখতে হবে। নতুবা তারা শিক্ষকের সাথে শ্রেণীতে তাল মেলাতে পারবে না। ফলশ্রুতিস্বরূপ তারা আরও পিছিয়ে পড়বে এবং শ্রেণীকক্ষে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করবে।

শিক্ষক শিখন-শেখানো কাজ পরিচালনার সময় শ্রেণীকক্ষের সামনের দিকে অর্থাৎ লেখার বোর্ডের কাছাকাছি বেশি থাকবেন। আসন ব্যবস্থা এ-রকম রাখতে হবে যেন শিক্ষক মাঝে মাঝে ডান-বাঁয়ে ও পিছনের দিকে চলাচল করতে পারেন এবং সকল শিক্ষার্থীর কাছাকাছি যেতে পরেন। শিক্ষককে সকল শিশুর প্রতি সমানভাবে লক্ষ রাখা উচিত। শিক্ষক এমন স্থানে দাঁড়াবেন যেন অধিকাংশ শিশুর সাথে ‘আই কন্ট্যাক্ট’ (অাঁখি বন্ধন) রাখা যায়।

শিক্ষক বড় শ্রেণীতে কয়েকজন শ্রেণীনেতা ঠিক করবেন এবং শ্রেণীনেতাদের শ্রেণীকক্ষের বিভিন্ন জায়গায় বসতে উৎসাহিত করবেন। শিখন-শেখানো কাজ পরিচালনার সময় শিক্ষক এই শ্রেণীনেতাদের সহায়তা নেবেন। এর ফলে শিক্ষক অধিক শিশু সংবলিত শ্রেণী সহজেই ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন। তবে কয়েকদিন পর পর (হতে পারে প্রতি পনের দিন পর বা প্রতি মাসে) নতুন শ্রেণীনেতা নির্বাচন করতে হবে। নতুবা একজন বেশিদিন নেতৃত্ব দিলে তার মধ্যে অহমিকা এসে যেতে পারে। তাছাড়া অন্যরা নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। পালাক্রমে নেতৃত্ব দিলে সকল শিশুর মধ্যেই নেতৃত্বের গুণাবলি তথা আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা বিকশিত হবে। এই কাজের জন্য শিশুদের একটি নামের তালিকা শিক্ষকের কাছে থাকা বাঞ্ছনীয়। এমনকি শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের একটি নামের তালিকা ঝুলিয়ে রাখা যেতে পারে।

শ্রেণীতে দলগত কাজ দেয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে দল গঠন না করে পূর্ব থেকেই দল গঠন করে রাখা যেতে পারে। ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য শিক্ষক পারঙ্গম ও শিখন সমস্যাসম্পন্ন শিশুদের সমন্বয়ে ৫/৬টি দল গঠন করবেন। আবার কয়েকদিন পর পর দলীয় সদস্য পরিবর্তন করে নতুন দল গঠন করতে হবে। এতে সকলের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে এবং সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে বেড়ে উঠবে। শ্রেণীতে শিশুরা এই দল অনুযায়ী একসঙ্গে বসবে এবং প্রতি সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে বসার জায়গা পরিবর্তন করবে। শিক্ষক দলের নাম শিশু উপযোগী করার জন্য নদী/ফুল/ফল/রং ইত্যাদি নামে দলের নাম রাখবেন। এভাবে দলগতভাবে শিশুরা বসলে শিক্ষক খুব সহজেই শিশুদের দিয়ে দলগত কাজ করাতে পারবেন। যেমন_ সামনের বেঞ্চে যারা বসে আছে তারা ঘুরে পেছনের বেঞ্চের শিশুদের মুখোমুখি হয়ে বসবে এবং দলগত কাজে অংশগ্রহণ করবে। শিক্ষক প্রত্যেক দলকে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, প্রাথমিক বিজ্ঞান ইত্যাদি)-এর কাজ দেবেন এবং ঘুরে ঘুরে প্রতি দলের কাজ দেখবেন ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন। নির্দিষ্ট সময় পরে দলগত কাজের বিষয় পরিবর্তন করে নেবেন। তবে এক পিরিয়ডে একবারের বেশি পরিবর্তন করবেন না।

পাঠের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মাঝে মধ্যে শিশুদের শ্রেণীকক্ষের বাইরে নিয়ে শিখন-শেখানো কাজ পরিচালনা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে শ্রেণীনেতাদের কাজে লাগানো যেতে পারে। যেমন- তৃতীয় শ্রেণীর আমার বাংলা বই এর ‘আমাদের গ্রাম’ কবিতাটি পড়ানোর জন্য শিশুদের বিদ্যালয়ের কাছাকাছি কোনো গ্রামে নিয়ে যেতে পারেন।

শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনায় দল ভাগ করে কয়েক দলকে শ্রেণীকক্ষে এবং কয়েক দলকে শ্রেণীকক্ষের বাইরে কাজ করানো যেতে পারে (তাত্তি্বক ও ব্যবহারিক)। এক্ষেত্রে শ্রেণীনেতাদের কাজে লাগানো যেতে পারে। যেমন- দ্বিতীয় শ্রেণির English for today Gi Lesson 4-6, Colours and numbers, A. Count and write-এর ব্যবহার শেখানোর জন্য শ্রেণীনেতাসহ দুই দল শিশুকে শ্রেণীকক্ষের বাইরে কাজ করার জন্য বলতে হবে এবং দুই দল শিশুকে শ্রেণীকক্ষের ভেতরে কাজ করতে বলতে হবে। তাদের মাঝে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার জন্য উৎসাহ সৃষ্টি করতে হবে (কোন দল বেশি জিনিস গুনতে ও লিখতে পারে)। যে দল বেশি জিনিস নির্ভুলভাবে গুনতে ও লিখতে পারবে তারা জয়ী হবে।

মাঝে মাঝে শ্রেণীতে শিশুদের বসার জায়গা পরিবর্তন করানো, যেমন_ সামনে যারা বসেছে তাদের পেছনে এবং পেছনের শিশুদের সামনে বসার সুযোগ দেয়া। তবে এই কাজটি মাসে এক/দুইবার করা যেতে পারে। শ্রেণীতে বসার বেঞ্চগুলো মাঝে মধ্যে ভিন্নভাবে সাজানো যেতে পারে। এতে শিক্ষক শিখন-শেখানো কাজ চলাকালে শিশুদের কাছাকাছি যেতে পারবেন। এই কাজটি অবশ্য নির্ভর করবে শ্রেণীকক্ষটির আকার-আয়তনের ও শ্রেণীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যার ওপরে।

শিক্ষক শ্রেণীতে যখন কোনো প্রশ্ন করবেন তখন প্রশ্নটি শ্রেণীতে উপস্থিত সকল শিশুর উদ্দেশ্যে করবেন। শিশুদের মধ্যে যারা উত্তরটি পারবে তারা হাত উঁচু করবে। শিক্ষক যেদিকে থাকবেন তার বিপরীত দিক থেকে যে সকল শিশু হাত উঁচুু করেছে তাদের মধ্য থেকে একজনকে (এমন একজন শিশুর কাছ থেকে উত্তর নিতে হবে যেন তার উত্তর সকল শিশু শুনতে পায়) উত্তর দিতে বলবেন। এরপর শিক্ষক তার অবস্থান পরিবর্তন করবেন এবং একই পদ্ধতি অনুসরণ করে অন্য একজন শিশুকে উত্তর দিতে বলবেন। এভাবে কয়েকজন শিশুর কাছ থেকে শোনার পর, যারা হাত উঁচু করেনি তাদের কাছ থেকে উত্তর শুনবেন। তবে উত্তরটি পেছনের দিকের/সারির শিশুদের দিতে উৎসাহিত করবেন। শিক্ষক একজন একজন করে উত্তর দেওয়াকে উৎসাহিত করবেন। সকল শিশুর একসাথে উত্তর দেওয়াকে নিরুৎসাহিত করবেন।

অধিক শিশু সংবলিত শ্রেণীতে শিক্ষক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে পাঠদান করবেন। এতে শিক্ষার্থীরা পাঠের বিষয়ের প্রতি বেশি মনোযোগী হবে এবং শ্রেণীতে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হবে না। অধিক শিশু সংবলিত শ্রেণীতে একই রকম একাধিক সেট উপকরণ ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন- একটি গ্লোবের স্থলে পাঁচটি গ্লোব, একটি মডেলের পরিবর্তে পাঁচটি মডেল, একসেট মার্বেলের জায়গায় পাঁচ সেট মার্বেল ইত্যাদি।

নিরাময়মূলক কাজের সময় পারঙ্গমে শিশুদের দিয়ে শিখন সমস্যাসম্পন্ন শিশুদের নিরাময়ের ব্যবস্থা নিতে পারেন। যেমন- প্রশ্নের উত্তর লেখার পর শিখন সমস্যাসম্পন্ন শিশুদের খাতা পারগ শিশুদের দিয়ে মূল্যায়ন করানো। একইভাবে শ্রেণীকক্ষে শিশুদের বাড়ির কাজ শিশুদের দিয়েই মূল্যায়ন করানো যেতে পারে। যেমন- বাড়ির কাজ শিক্ষকের কাছে জমা দেয়ার পর শিক্ষক একজনের খাতা অন্যজনকে দেবেন এবং মূল্যায়ন করতে বলবেন।

অপেক্ষাকৃত ভালো বা তাড়াতাড়ি পাঠ প্রস্তুত করতে পারে এমন শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণীকক্ষে একটি কর্নারে ছোট শেলফে কিছু শ্রেণী উপযোগী সম্পুরক পঠন সামগ্রী বা ড্রয়িং করার সামগ্রী রাখা যেতে পারে। যাদের পাঠ পূর্বেই প্রস্তুত হয়ে যাবে শিক্ষক তাদের এসব সম্পূরক পঠন সামগ্রী পড়তে দিতে পারেন বা তাকে ইচ্ছে মতো অাঁকতে দিতে পারেন। নতুবা তারা দুষ্টুমিতে জড়িয়ে পড়তে পারে।

এ ধরনের অনেক কৌশল শিক্ষক বড় শ্রেণীতে ব্যবহার করতে পারেন। এখানে যেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে এগুলো কিছু নমুনা মাত্র। শিক্ষক সময় ও অবস্থা অনুযায়ী তার বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে শিশুপোযোগী বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন। প্রবাদ আছে, ‘কোনো শিক্ষাদান পদ্ধতি স্বয়ং শিক্ষক অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে না’ (No system of education is better than it&_s teachers.) অথবা ‘শিক্ষকের পদ্ধতিই সেরা পদ্ধতি’ (Teacher&_s method is the best method)। কথাগুলো একেবারে সত্য। শিক্ষক যদি শিখন-শেখানো কার্যক্রমের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি ও কৌশল নির্বাচনে ব্যর্থ হন, অথবা উপযুক্ত পদ্ধতি নির্বাচন করেও যথাযথভাবে প্রয়োগে ব্যর্থ হন, তাহলে শিখন-শেখানো কার্যক্রম সার্থক ও কার্যকর করা সম্ভব হবে না। কাজেই শিক্ষক যদি পাঠদানের সকল পদ্ধতি/কৌশল এবং এর প্রয়োগকৌশল ভালোভাবে জেনে উপযুক্ত পদ্ধতি/কৌশল নির্বাচন করে তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারেন, তবে অধিক শিক্ষার্থী সংবলিত শ্রেণীকক্ষেও শিখন-শেখানো কার্যক্রমের উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব। তার পূর্বে শিক্ষকের অবশ্যই বড় শ্রেণীকক্ষ কীভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হয় সে কৌশলসমূহ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা থাকতে হবে।

[লেখক : ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ]


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029549598693848