বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। আর এ পরিবর্তনের জন্য সরকার নানামুখী কর্মসূচি পরিচালনা করছে। সেসব কার্যক্রমের মধ্যে বিনামূল্যে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বই বিতরণ, উপবৃত্তি ইত্যাদি ছাত্র-ছাত্রীদের ঝরে পড়া রোধে তাৎপর্যপূর্ণ।
কিন্তু অনুতাপের বিষয় যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করার জন্য পর্যাপ্ত জনবল যেমন ডিপিইও,এডিপিইও টিইও, এটিইও, পি টি আই ইন্সট্রাক্টর ও পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে তত্ত্বাবধান করার জন্য স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তা লক্ষ করা যায়, যা দিয়ে পরিপূর্ণরূপে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো তত্ত্বাবধান করার জন্য মাত্র একজন ডিইও, এডিইও, প্রতি উপজেলায় একজন করে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী মাধ্যমিক কর্মকর্তা রয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে ১৯৯৯ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টম্যান্ট প্রজেক্ট (সেসিপ) নামে একটি প্রকল্প শুরু হয়, যার পরিপূর্ণ কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৩ থেকে। সে প্রকল্পে নিয়োগ কার্যক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন পদে বেশ কিছু জনবল নিয়োগ দেয়া হয়, যে নিয়োগ পরিক্রমায় উল্লেখ ছিল- প্রকল্পের মেয়াদ শেষে ওই জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। পাশাপাশি সচিব পর্যায়ের আলোচনায় তাদেরকে আশ্বস্ত করা হয় যে, তারা যেন বিসিএস বাদে অন্য কোনো চাকরিতে দরখাস্ত না করে এবং উক্ত পদে মনোযোগ সহকারে কাজ করে।
কিন্তু পাঁচ বছর পর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে তাদেরকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর তো দূরের কথা, তাদের পুনরায় পরীক্ষা পরিচালনার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়। এরই মাঝে অনেক কর্মকর্তার বয়স সরকারি চাকরিতে প্রবেশ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু এরই মাঝে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে সেপিপ-এর ৫, ৭, ৯, ১১ ও ১৬ গ্রেডের সকল আইসিটি ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদকে অত্যাবশ্যকীয় জনবল হিসেবে রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু বাকি রয়ে যায় সহকারি পরিদর্শক, গবেষণা কর্মকর্তাসহ একাডেমিক সুপারভাইজার পদের বেশ কিছু¸ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, যারা শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
তারপরও তাদের দিকে কখনোই দৃষ্টিপাত করা হয় না। শুধু আশ্বাস ও সান্ত্বনা দিয়ে তাদেরকে কাজ করিয়ে নেয়া হয়। এমতাবস্থায় ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। যা ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে দীর্ঘ এক বছর পর পুনরায় নিয়োগ দেয়া হয়, যেখানে ৭/৮ বছর একই পদে চাকরি করার পরও সে পদটি ধরে রাখতে ৩৫/৪০ বছর বয়সে সদ্য পাস করা প্রার্থীর সাথে নামতে হয় প্রতিযোগিতায়।
আরও বলা হয় যে, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে আবারও পরীক্ষা নেয়া হবে। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? প্রতি তিন বছর অন্তর পরীক্ষা দেবার কথা মাথায় রেখে মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন কতটা সম্ভব?
সেসিপ কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যক্তিনিষ্ঠভাবে মাঠে নামানো হলেও মেয়াদান্তে দিতে হচ্ছে আবারও পরীক্ষা। এতে অন্ধকারে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে কর্মকর্তারা। যেখানে কর্মকর্তাদের কোন নিরাপত্তা নেই, নেই কোনো আশার আলো, সেখানে কিভাবে তারা উন্নয়নের বাণী শুনাবে আমাদের? তাই প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের পাশাপাশি যদি মাধ্যমিক শিক্ষার অব্যাহত উন্নয়ন, ঝরে পড়া রোধ ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই তাহলে সেসিপ-এর সকল কর্মকর্তাদের অত্যাবশ্যকীয় জনবল হিসাবে রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরের মাধ্যমে শিক্ষার অব্যাহত উন্নয়ন ধরে রাখতে হবে।
নতুবা তিন বছর অন্তর প্রকল্প মেয়াদ বাড়িয়ে কিছু ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল হলেও শিক্ষার মানে ধস অনিবার্য হয়ে পড়বে। তাই বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে চাইলে সেসিপ-এর সকল কর্মকর্তাদের রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তর করে কর্মকর্তাদের নিশ্চিন্তে কাজ করে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে ভিশন ২০২১ বা শিক্ষার ১০০ ভাগ অর্জন সম্ভব হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এ সমস্যার সমাধান করেছে প্রায় ১০ বছর আগে। যে পদগুলো রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রস্তাব ছিল পিইডিপি-২-তে সব অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির সুপারিশক্রমে শিক্ষক ইউআইসি ইন্সট্রাক্টর, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ মাঠপর্যায়ের প্রায় ১৫ হাজার পদ রাজস্ব খাতে সৃজন করে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পিইডিপি-৩-তেও একই কাজ করা হয়েছে। কর্মসূচি চলাকালে তারা কর্মসূচি থেকে বেতন পেয়েছে। কর্মসূচি শেষ হবার পরও রাজস্ব খাত থেকে তারা বেতন পাচ্ছে।
মো. ওমর ফারুক: সহকারী প্রোগ্রামার, জেলা শিক্ষা অফিস, জয়পুরহাট।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়]