টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী প্রায় দুই বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। পরিবারের দাবি, একটি হত্যা মামলার আসামি এ দুজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে একদল সশস্ত্র লোক তুলে নিয়ে যায়।
নিখোঁজ দুজন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম এবং রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এস এম রবিউল হাসান। মনিরুল টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকার খালেক খানের ছেলে। রবিউল সখীপুর উপজেলার হামিদপুর গ্রামের মৃত এস এম শওকত আলীর ছেলে। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাদাত খালেদ মোশারফ হত্যা মামলার এক ও দুই নম্বর আসামি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১৩ মে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ-সমর্থিত দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আবু সাদাত খালেদ মোশারফ নিহত হন। নিহত ব্যক্তির বাবা বাদী হয়ে ১৬ মে টাঙ্গাইল সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় মনিরুলকে এক নম্বর এবং রবিউলকে দুই নম্বর আসামি করা হয়।
রবিউলের ভাই এস এম রওশন জলিল বলেন, মনিরুল ও রবিউল গ্রেপ্তার এড়াতে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার রামডাঙ্গা গ্রামে মকলেছার রহমান মাস্টারের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট দিবাগত গভীর রাতে মাইক্রোবাসযোগে একদল সশস্ত্র লোক বাড়িটি ঘেরাও করে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে রবিউল ও মনিরুলকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে এ দুই শিক্ষার্থীর পরিবার থানা-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে। কিন্তু কেউই তাঁদের গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি।
রওশন জলিল ২০১৬ সালের ৬ মে নীলফামারীর ডিমলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে তিনি রবিউল ও মনিরুলকে তুলে নেওয়ার ঘটনা বর্ণনা দেন। পরে দুজনের পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে ধরনা দিলেও তাঁদের কোনো সন্ধান মেলেনি।
মনিরুলের ভাই মারিফুল ইসলাম বলেন, অনেক খুঁজেও তাঁরা ভাইয়ের কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে প্রায় দুই বছর কেটে গেছে। বর্তমানে পরিবারের লোকজন সীমাহীন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
এদিকে মোশারফ হত্যা মামলায় ২০১৫ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশ মনিরুল ও রবিউলসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অশোক কুমার সিংহ বলেন, অভিযোগপত্রে মনিরুল ও রবিউল দুজনকেই পলাতক দেখানো হয়েছে। তাঁদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে এ দুজনের পরিবারের কাছ থেকে তাঁদের তুলে নেওয়ার ঘটনাটি তিনি শুনেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, মোশারফ হত্যা মামলাটি এখন টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। মনিরুল ও রবিউল ছাড়া অন্য আসামিরা সবাই জামিনে রয়েছেন।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী প্রক্টর সিরাজুল ইসলাম বলেন, মনিরুল ও রবিউলকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার সংবাদ তাঁদের পরিবারের মাধ্যমে শুনেছেন। আবু সাদাত খালেদ মোশারফ হত্যার ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেখানেও মনিরুল ও রবিউল কোনো বক্তব্য দিতে আসেননি। পরে এই দুজনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।