ভুলে ভরা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক |

চলমান প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’ পরীক্ষার এক প্রশ্নপত্রে ব্যকরণগতসহ প্রায় চল্লিশটি ভুল ধরা পড়েছে। মঙ্গলবার (২১শে নভেম্বর) সিলেট অঞ্চলের  ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নপত্রের এই ভুলগুলো এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক ফেইসবুকে দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

প্রশ্নপত্রটির ৫০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের মধ্যে ৪০টিতেই ভাষা ও ব্যাকরণগত ভুল রয়েছে। এগুলোসহ পুরো প্রশ্নপত্রে ভুলের সংখ্যা অর্ধ শতাধিক।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্ত ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন  সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি আট সেট প্রশ্ন তৈরি করে থাকে।  একাডেমির কর্মকর্তারাই মূলত ইংরেজি ভার্সনের দায়িত্বে থাকে।

প্রাথমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ব্যাপক ভুল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। সমালোচনা চলছে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সামসাদ মর্তূজা বলেন, “আমি ফেইসবুকে প্রশ্নপত্রটি দেখেছি, ভুল ছাড়া কোনো বাক্য চোখে পড়েনি। আমি শকড।

“এই প্রশ্নগুলো যে বা যারা করেন, তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে আমার, আমি মনে করি না, তারা শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।”

প্রশ্নপত্রে ভুলের পেছনে নেপের কতিপয় কর্মকর্তা ও  শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলার দিকে ইঙ্গিত করেছেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক  অধিকার সুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক মো: সিদ্দিকুর রহমান।

তিনি বলেন, কম টাকা খরচ করে প্রশ্নের অনুবাদ করানো হয়। তাই প্রতিবছরই কমবেশি ভুল থাকে। এবারে একটু বেশি হয়েছে।

‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’ বিষয়ের ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নপত্রে ভুল থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তার জন্য জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে দায়ী করেছেন সিলেটের জেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি প্রশ্ন তৈরি করে থাকে।  আমরা যে প্রশ্ন পাই, সেটাই কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করি। প্রশ্নে ভুল আছে কী নেই, সেটা দেখা আমাদের দায়িত্বের ভেতর পরে না।”

 সিলেট অঞ্চলে যে সেটে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে অন্য অঞ্চলের প্রশ্নপত্রের মিল নেই।

সিলেটে ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’ বিষয়ে ইংরেজি ভার্সনের এই প্রশ্নপত্রে ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন বলে জানান জেলার কর্মকর্তা আমিরুল।

প্রশ্নপত্রে এই ভুলের বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. রমজান আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোনে তাদের পাওয়া যায়নি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান ও অতিরিক্ত সচিব এ এফ এম মঞ্জুর কাদিরও ফোন ধরেননি।

তবে, নেপের পরিচালক মো: শাহ আলম দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, আমরা প্রশ্নপত্র দেখতে পারি না। যারা ভার্সনের অনুবাদের দায়িত্বে ছিলেন তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভুল যত: 

বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি পরীক্ষার এক নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে– ‘What would happen if no the Mujibnagar govt. was formed?’ শুদ্ধ বাক্যটি হবে– ‘What would happen if the Mujibnagar govt. was not formed?’

বহুনির্বাচনীটির উত্তরেও বাক্যের ব্যাকরণেও ভুল পাওয়া যায়, d উত্তরে বলা হয়েছে- It wouldn’t be possible to train of freedom fighter, এখানে of এর স্থলে to হবে।

২ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে– ‘Why Bangladesh to import a lot of vegetable oil?’, এই প্রশ্নটিতে ‘to’ বসার কথা নয়। এর ‘b’ নং উত্তরেও ভুল বাক্য রয়েছে। বলা হয়েছ, ‘Because, Production is low than demand.’, সঠিক বাক্যটি হবে– ‘Because, Production is lower than demand.’।

৩ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে– ‘Why was built 177 secret room at Sompur Bihar in Paharpur?’ এই পুরো বাক্যটিই ভুল।

৪ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে- ‘What is happened in the people of this country as a result of ‘divide and rule’ policy of British? বাক্যটিতে what এরপর is হবে না এবং in এর স্থলে to হবে।

৫ নং প্রশ্নের ‘c’ অপশনে লেখা হয়েছে ‘Men became torture’ । এখানে বাক্যই ভুল।

৮ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘Why did the floting people of city pass their life in humanly?’ এই প্রশ্নের বাক্যে ব্যাকরণগত ও বিশেষণে ভুল ।

১০ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘What is the major cause of Bangladesh facing natural climates?’ ; এখানে climate ভুলভাবে ব্যবহার হয়েছে।

এরকম অন্তত ৪০টি ই ভুল পাওয়া যায় বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্রে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের 2 (c) তে লেখা রয়েছে ‘Why did the intellectuals kill?’ প্রশ্নের ব্যাকরণে ভুল থাকার পাশাপাশি বাক্যের ভাবও বোঝা যাচ্ছে না। ভুল রয়েছে 2(c), 2(h), 2(i), 2(m), 2(0), 3 (d), 3 (f) ও 3 (h) নং প্রশ্নে।

ভাষা ব্যবহার, ব্যাকরণগতের সঙ্গে তথ্যগত ভুলও রয়েছে নানা প্রশ্নে।

সমালোচনার ঝড়

মঙ্গলবার সিলেটের মাসুদ চৌধুরী নামের এক অভিভাবক ফেইসবুক পোস্টে পিইসির ভুল প্রশ্নপত্রটি দিলে তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় চলছে।

মাসুদ তার পোস্টে লিখেছেন, “আমার মেয়েটা আজ পিএসসই পরীক্ষা দিয়ে আসলো। তার প্রশ্নপত্র দেখে আমি হতবাক। কষ্ট করে শুধুমাত্র প্রশ্নগুলো পড়ুন। উত্তর পড়ার দরকার নাই। চিন্তাও করা যায় না, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নকর্তারা ক্লাস ফাইভের একটা প্রশ্ন ইংরেজিতে করতে পারেন না। আর আমাদের শিক্ষামন্ত্রী গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন, লেখাপড়ার মান অনেক বৃদ্ধি পাইছে।’

পোস্টে সোহেলি শায়লা নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছি। লজ্জাজনক।’

জাকারিয়া হাবিব নামের একজন ফেইসবুক লিখেছেন, ‘২০০ বছর ইংরেজি শেখার পর পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষার বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের ইংলিশ ভার্সনের প্রশ্নপত্রের এই দৈন্য দশা !!! এই পরীক্ষার প্রশ্ন প্রস্তুতকারী, নিরীক্ষক সর্বোপরি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমার আন্তরিক অভিনন্দন !!! কারণ সবাই মিলে অনেক পরিশ্রম না করলে একটা মাত্র প্রশ্নপত্রে এতগুলো ভুল করা সম্ভব না।

“সবার কাছে বোধগম্য হবে না, তাই প্রশ্নের মানের বিষয়টা আলোচনার বাইরেই রাখলাম। ন্যুনতম ইংরেজির জ্ঞান সম্পন্ন মানুষও ভুলগুলো বুঝতে পারবেন।

শুধু প্রাথমিকে নয় সদ্য সমাপ্ত জেএসসির গার্হস্থ বিজ্ঞান পরীক্ষার ইংরেজি ভার্সন প্রশ্নপত্রেও ভুল ছিলো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062720775604248