মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার ১৪টি প্রকল্প চলছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নে চলছে নয়টি। এগুলোর কোনোটি মোটামুটি চলছে, কোনোটি ভালো চলছে, কোনোটি নিয়ে আছে বিতর্ক।
এর মধ্যেই মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নে প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার (প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার) বড় একটি কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে সরকার।
পাঁচ বছর মেয়াদি এই কর্মসূচিতে সরকারের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইউনিসেফ, ব্রিটিশ কাউন্সিলসহ কয়েকটি বিদেশি সংস্থা আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।
বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে ‘প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-৩ (পিইডিপি)’ নামে একটি বড় কর্মসূচি চলছে। এর মোট ব্যয় প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এই কর্মসূচির আদলেই এখন ‘মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি’ হাতে নেওয়া হচ্ছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এই কর্মসূচি শুরুর সম্ভাবনা আছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী দাতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। দাতারাও ইতিবাচক।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বব্যাংক বর্তমানে মাধ্যমিকের একটি প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। সেটি আগামী জুনে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তারা মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত থাকতে চাইছে। এ জন্য শিগগির এই কর্মসূচি করতে চাইছে। আর এডিবির সঙ্গে যে প্রকল্প চলছে, সেটি আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তাবিত এই কর্মসূচিতে বিশ্বব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন ডলার ও এডিবি ৫০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতে পারে। কর্মসূচির অধিকাংশ টাকাই দেবে সরকার। ওই কর্মকর্তা বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি এই কর্মসূচির অধীনে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নে চলমান প্রকল্পগুলো এর অধীনে চলে আসবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোকে সামনে রেখেই কর্মসূচি সাজানো হচ্ছে। এ জন্য স্বচ্ছভাবে শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করা, মাধ্যমিকে ঝরে পড়া রোধ, বিদ্যমান ব্যবস্থাপনাকে কীভাবে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহি করা, জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষিত প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার জন্যও সহায়তা দেওয়া, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষাক্রমে উপযোগী করা, নবম, দশম ও দ্বাদশ ক্লাসে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা, শ্রেণিকক্ষ, গবেষণাগার, স্যানিটারিসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে এর এই কর্মসূচিতে। এ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন, শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান শিখন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এখন যেসব প্রকল্প চলছে: বর্তমানে ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রকল্পের (সেকায়েপ) ব্যয় ধরা আছে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। মাধ্যমিকের শিক্ষকদের উন্নয়নে ‘টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট-২ ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন প্রজেক্টের ব্যয় ধরা আছে ৬৪৬ কোটি টাকা। আগামী জুন মাসে এর মেয়াদ শেষ হবে। এ ছাড়াও সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ), মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উপবৃত্তি প্রকল্প, আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রচলন প্রকল্পসহ কয়েকটি প্রকল্প চালু আছে।
সৌজন্যে: প্রথম আলো।