মূল বই থেকে উত্তর লিখে বিপাকে জেএসসি পরীক্ষার্থীরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

চলতি বছরের জেএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ইংরেজি প্রথম পত্রের কয়েকটি প্রশ্ন হুবহু একটি গাইড বই থেকে এসেছে। কিছু শিক্ষার্থী ওইসব প্রশ্নের উত্তর লিখেছে সরকার প্রকাশিত  পাঠ্যবই থেকে। এখন তারাই বিপাকে পড়েছেন বলে জানা যায়। বোর্ডের মডেল উত্তরের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দেয়া উত্তরে মিল পড়েনি। এর ফলে অনেকেরই এখন ইংরেজিতে নম্বর কম পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এমনকি শিক্ষকরা পর্যন্ত শিক্ষা বোর্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির চালাচ্ছেন।

একাধিক সূত্রমতে, ইংরেজি প্রথম পত্রের ৭ নম্বর প্রশ্ন রিঅ্যারেঞ্জ। রবিনসন ক্রুসোর ব্যক্তিগত জীবনের ওপর ওই প্রশ্নে ১০ নম্বরের ১০টি বাক্য ছিল। রবিনসনের জীবনের ঘটনাক্রমের আলোকে সেটি সাজাতে হবে। অভিভাবকরা বলছেন, বোর্ডের ওই প্রশ্নটি অন্তত চারটি গাইড বইয়ে আছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ‘অ্যা’ আদ্যক্ষরের একটি গাইড পড়ে থাকে। তারা সেটি থেকে উত্তর দিয়ে এসেছে। তাছাড়া অষ্টম শ্রেণীতেই বাংলা দ্রুতপঠনে রবিনসন ক্রুসোর ওপর একটি পাঠ আছে। শিক্ষার্থীরা উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে ওই পাঠ অনুসরণ করেছে। কিন্তু বোর্ড কর্তৃপক্ষ ‘ন’ আদ্যক্ষরের একটি কোম্পানির গাইডের উত্তর সঠিক হিসেবে ধরে নিয়েছে।

একজন অভিভাবক জানান, পরীক্ষার মডেল উত্তর গোপনীয় বিষয়। তবে তার ছেলে পরীক্ষার্থী হওয়ায় কৌতূহলবশত তিনি তার এক ইংরেজি শিক্ষক আত্মীয়ের কাছে যান। সেখানে উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তর দেখেন। এরপর ছেলের সঙ্গে কথা বলে দেখেন চারটির উত্তরই সঠিক হয়নি। এ নিয়ে অনুসন্ধানে নেমে তিনি প্রশ্ন প্রণয়ন ও মডেল উত্তর তৈরিতে উল্লিখিত ব্যত্যয় পেয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করে রাজধানীর একটি স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক বলেন, বোর্ড কর্তৃপক্ষ যে গাইডের উত্তর সঠিক হিসেবে ধরে নিয়েছে, সেটির কারণে সরকারি বইয়ের আলোকে উত্তর দেয়া শিক্ষার্থীরা কমপক্ষে ৪ নম্বর কম পাবে। কেননা, ওই প্রশ্নে ১ এবং ৬-১০ নম্বর বাক্যের উত্তর বোর্ডের মডেল উত্তরের সঙ্গে মিল আছে। কিন্তু ২-৪ নম্বরের মিল নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা ৪ নম্বর কম পাবে। এতে কেউ কেউ ফেল করতে পারে। আবার অনেকের গ্রেড বিশেষ করে জিপিএ-৫ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ সমস্যা নিয়ে আমার কাছে কিছু অভিভাবক এসেছিলেন। তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রধান পরীক্ষকদের অবহিত করা হয়েছে। মডেল উত্তরের বাইরেও যদি কোনো শিক্ষার্থীর উত্তর সঠিক মনে হয়, তাহলে যেন তা গ্রহণ করা হয়।’

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘সৃজনশীলে গাইড বই থেকে প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ। ইংরেজি বিষয়টি সৃজনশীল নয়। তাছাড়া মূল পাঠ্যবইয়ের আলোকে কোম্পানিগুলো গাইড লিখেছে। প্রশ্ন গাইড বই থেকে করা হয়নি, পাঠ্যবই থেকেই করা হয়েছে। তবে শিক্ষকরা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, যারা প্রশ্ন সেট ও মডারেশন করেন তারা রহস্যজনক কারণে গাইডকে প্রাধান্য দেন। অতীতে বিভিন্ন বোর্ডের প্রশ্নের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট কিছু গাইড প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

তারা বলেন, যদি সরকার প্রকাশিত মূল পাঠ্যবইয়ের আলোকে মডেল উত্তর তৈরি হতো, তাহলে তা গাইডের সঙ্গে মেলার কথা নয়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ২শ’ প্রধান পরীক্ষক বসে এই মডেল উত্তর তৈরি করেছেন। এতে গাইডের উত্তরের প্রাধান্য থাকার কথা নয়। কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবক জানিয়েছেন, প্রধান পরীক্ষককে নম্বর দেয়ার ক্ষেত্রে নির্দেশনা পাঠানোর কথা বোর্ড বললেও বাস্তবে এর প্রতিফলন পড়বে না। কেননা, প্রধান পরীক্ষকরা মোট খাতার মাত্র ১২ শতাংশ নিরীক্ষা করেন। সে ক্ষেত্রে বাকি শিক্ষার্থীরা নম্বর বঞ্চিত থাকবে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অবশ্য এ ব্যাপারে বলেছেন, প্রত্যেকটি খাতাই দেখতে প্রধান পরীক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035130977630615