মোতালেব-নাসিরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষামন্ত্রীর পিও মো: মোতালেব হোসেন ও অপর কর্মচারি নাসির এবং মোহাম্মদ আলীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। আজ সোমবার (২২ জানুয়ারি) দৈনিক প্রথম আলো ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে এ তথ্য জানা যায়।

প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণের শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত “দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পিওসহ দুজন গ্রেপ্তার: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আতঙ্ক” শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এর আগে ২০১২ সালের অক্টোবরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দপ্তরের  এমএলএস এস (পিয়ন) ও সরকারি চতুর্থ  শ্রেণির কর্মচারি সমিতির একাংশের নেতা মোহাম্মদ আলীকে ঘুষের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তিনি ছাড়া পান। তিনি এখনো শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে।’

যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ‘এদিকে গ্রেফতারের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারি ও মন্ত্রীর পিওর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ‘উচ্চমান সহকারি নাসির উদ্দিন এবং মন্ত্রীর পিও মোতালেব হোসেন এমপিও, বদলি, পদোন্নতি ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত। তাদের সঙ্গে ক্যাডার কর্মকর্তাসহ অনেক রাঘববোয়ালও জড়িত। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছিল। এর মাধ্যমে তারা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।’ কর্মকর্তারা বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, যে নির্মানাধীন ভবনের নীচ থেকে পিওকে তুলে নেয়া হয় সেটি তার নিজের। একজন পিওর পক্ষে কীভাবে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব?” 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সৎ কর্মকর্তা দৈনিকশিক্ষাডটকমকে বলেন, মোতালেব-নাসির-আনসার-মোহাম্মদ আলীর মতো মাত্র চার-পাঁচজন কর্মচারীর জন্য আজ আমাদের পুরো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমালোচনার মুখে। কেন চার-পাঁচজন কুলাঙ্গারের জন্য আমাদের সবাইকে কথা শুনতে হবে?

একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, বিশ বছরের বেশি সময় যাবত মন্ত্রণালয়ে কাজ করছি কিন্তু গত ৫/৭ বছরে চার-পাঁচজনের একটি সিন্ডিকেট মন্ত্রণালয়ের মান-সম্মান ভূলুণ্ঠিত করেছে। মাফিয়া টাউট-বাটপারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পিকনিক, সমিতি, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি বানানোর কী দরকার? আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরি করি এটাই অনেক সম্মানের।

নাম প্রকাশে অনিচছুক অপর একজন কর্মকর্তা দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। গ্রেপ্তার হন মোহাম্মদ আলী। বরখাস্ত করা হয়। ওই সংবাদটি দৈনিকশিক্ষায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু মন্ত্রী কেন বরখাস্ত  আদেশ প্রত্যাহার করে মোহাম্মদ  আলীকেই তাঁর দপ্তরে নিলেন? দৈনিকশিক্ষায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মন্ত্রী যদি মোহাম্মদ আলীকে অন্যত্র সরিয়ে দিতেন তাহলে আজ এমনটা হতোনা।’

তারা বলেন, একইভাবে ২০১৪ ও ২০১৫  খ্রিস্টাব্দে মোতালেবের কোটি টাকার ঘুষ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় দৈনিকশিক্ষায়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরিয়ে দেয়া হয় মোতালেবকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক শিক্ষা মাফিয়া চক্রের হোতা মোতালেবকে ফের মন্ত্রীর পিও পদে বসানো হলো কেন? যদি দৈনিকশিক্ষার প্রতিবেদনের পর মোতালেবকে দুদকে ধরিয়ে দেয়া হতো তাহলে মন্ত্রীর ভাবমূর্তি উজ্জল হতো।

অপর এক কর্মকর্তা বলেন, এমপিও জালিয়াতির দায়ে নাসিরের বিরুদ্ধে দুদক। অনুসন্ধান চলমান। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে এমপিও জালিয়াতির দায়ে নাসিরকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়। দৈনিকশিক্ষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে নাসিরের আরো দুর্নীতির খবর জানা যায়। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের তালাশ প্রোগ্রামেও নাসিরের বিরুদ্ধে ‍দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ হাজির করা হয়। সেই নাসিরকে কেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করতে হবে?


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026700496673584