যানজটেই ভেসতে গেল রাবিতে পড়ার স্বপ্ন

রাবি প্রতিনিধি |

‘ভাই গত দুইদিন ধরে গাড়িতে আছি। স্বপ্ন ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব।

কিন্তু যানজটের কারণে তো ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতেই পারছি না। আমাদের বাসের সামনে পেছনে শুধু বাস আর বাস। সব বাসেই ভর্তিচ্ছু। আমাদের বাস এখনো বঙ্গবন্ধ সেতুর মাঝখানে। ১৩ বছর ধরে গড়ে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল ভাই। যানজটের কারণে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারলাম না। ’
রবিবার সকাল পৌনে ৮ টায় এই প্রতিবেদকের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন আল আমীন সাদিক নামের এক ভর্তিচ্ছ। চট্টগ্রামের মুরাদপুর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসছিলেন তিনি। ওই ভর্তিচ্ছুর রোল নম্বর- ২০০২৮।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ অধিভুক্ত ‘ই’ ইউনিটের সকাল সাড়ে ৮ টায় শুরু হওয়া ‘ই-১’ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু যানজটের কারণে তিনি ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।
তবে শুধু সাদিক নন, জানযটের কারণে কয়েক হাজার ভর্তিচ্ছু রাবির ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না বলে জানা গেছে। ঢাকা- টাঙ্গাইল অভিমুখী বিভিন্ন মহাসড়কে ৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটই কেড়ে নিল তাদের স্বপ্ন। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও চলমান রাস্তা সংস্কারের জন্য যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেশি।

সাদিক জানান, শুক্রবার সকাল ৬ টায় তিনি চট্টগ্রাম থেকে রওনা হন। ঢাকায় পৌঁছান দুপুর ২ টায়। এসময় রাজশাহীতে আসার মতো কোনো বাস পাচ্ছিলেন না। পরবর্তীতে শনিবার দুপুর ১.১৫ মিনিটে হানিফ ট্রাভেলসের অতিরিক্ত একটি গাড়িতে করে রাজশাহীর পথে রওনা হন তিনি। ওই গাড়িতে মোট ৩৬ জন ভর্তিচ্ছু রয়েছে। তারা কেউ-ই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।

মানিকগঞ্জের খাদিজা খান নামের অন্য এক ভর্তিচ্ছু জানান, তারও ‘ই-১’ ইউনিটের পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। তার রোল নম্বর ২০৭৩৬। রাজশাহীতে আসার জন্য তিনি শনিবার সকাল ৭ টায় বাসা থেকে বের হন। সকাল ১০ টায় ঢাকা থেকে তার বাস রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস ছেড়েছে দুপুর ১ টায়। বাস ছাড়ার পর ঢাকার নন্দনপার্ক থেকে শুরু হয় যানজট। যানজটের কারণে তিনিও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।

এ দিকে টাইঙ্গাইলের স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়ক জুড়েই এখন তীব্র যানজটে স্থবির। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে মির্জাপুর থেকে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা মোড় এলাকা পর্যন্ত। যানজটের কারণে উত্তরাঞ্চল ও টাঙ্গাইলের মধুপুর, ধনবাড়ি, জামালপুর ও শেরপুর জেলার বেশির ভাগ যানবাহন বিকল্প সড়ক হিসেবে সখীপুর-ভালুকা, টাঙ্গাইল- ময়মনসিংহ হয়ে ময়মনসিংহ-ঢাকা রাস্তায় চলাচল করছে। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ যানজট এখন চন্দ্রা থেকে গাজীপুর ও চন্দ্রা থেকে বাইপাইল-নবীনগর ও বাইপাইল-আশুলিয়া-উত্তরা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।

নুরাইয়া ইসলাম নামের আরেক ভর্তিচ্ছু জানান, ১৩ বছরের স্বপ্ন ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে পড়বেন। শনিবার সকাল সকাল ৯ টায় ঢাকা থেকে রাজশহীর উদ্দেশ্যে তিনি বাসে করে রওনা হন। কিন্তু এই প্রতিবেদন লেখার সময় (রবিবার সকাল সাড়ে ৯ টা) তিনি ছিলেন নাটোরে। ‘ই-১’ ইউনিটে পরীক্ষা দেয়া হয়নি। যানজটই তার স্বপ্ন কেড়ে নিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, “আমরা পরীক্ষার হলে দেখেছি ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। হয়তো রাস্তায় অল্পসংখ্যক আটকে আছে। তবে সাড়ে ১০টার পরীক্ষায় আশা করছি, তারা পৌঁছাবে। ”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, যানজট হলে তো আমাদের করার কিছু নাই। ‘ই-১’ ইউনিটের পরীক্ষা যথসময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030720233917236