বয়স তার বড়জোর বছর চারেক। কচি হাতদু’টো জোড় করে হিন্দিতে মিনতি করছে, ‘একটু ভালোবেসে পড়াও, এত বকা দিও না আমায়।’ তার গলা বুজে আসছে। দু’চোখ ফেটে পানি বের হচ্ছে। ছোট্ট আঙুলে পেনসিল।
এটা ভারতের এক শিশুকে পড়ানোর সময়ে তার প্রতি নিষ্ঠুর না হবার জন্য তারই করুন আকূতির ভিডিওচিত্র। এটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট মাধ্যমে শেয়ার হয়েছে লাখ লাখ বার। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ছাড়াও ভারতের প্রধান প্রধান সংবাদপত্রে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হয়েছে এই ভিডিও। এমনকি দেশটির সেলিব্রিটিরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে শেয়ার করেছেন এটি। এদের মধ্যে আছেন দেশটির ক্রিকেট অধিনায়ক বিরাট কোহলিও।
ভিডিওতে দেখা যায় খাটের ওপর একটি জলচৌকি। তার উপরে অঙ্ক খাতা। খাতায় সার দিয়ে লেখা ১, ২, ৩, ৪, ৫…। এক মহিলার তেতো গলা শোনা যাচ্ছে—‘ওয়ান কঁহা হ্যায় (এক কই)? টু কঁহা হ্যায়?’ সে আঙুল বুলিয়ে দেখিয়ে চলেছে। থামতেই ফের গর্জন, ‘থ্রি কঁহা হ্যায়? ওয়ান কঁহা হ্যায়?’ একই উত্তর বার বার দিতে দিতে বাচ্চা মেয়েটার মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে, সে পাগলের মতো দু’হাতে খামচে ধরছে নিজের মাথা। বিরক্তি ভরে উত্তর দিল, ‘এই তো দেখালাম ওয়ান!’
ভিডিওর শেষ দিকে দেখা যায় ‘ওয়ান-টু-থ্রি’ আওড়াতে আওড়াতে মাথা বিগড়ে গেছে মেয়েটির। একটি সংখ্যাকে কখনও বলছে ‘থ্রি’, কখনও ‘ফাইভ’। সাথে সাথে মহিলার ঝাঁঝালো কণ্ঠ—‘এটা কী?’ বিরক্ত বাচ্চাটি বলে ফেলে, ‘কিছু না।’ তার পরেই গালে পড়ল রাম থাপ্পড়।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওর দর্শকদের একটাই প্রশ্ন—কে পড়াচ্ছিল তাকে? গৃহশিক্ষিকা নাকি তার মা? এই উত্তর এখনো জানা যায়নি। ভিডিও বা করল কে তাও জানা যায়নি। তবে ক্ষুব্ধ-উদ্বিগ্ন হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। দেশটির শিক্ষাবিদরা বলেছেন, এটা শিশুদের শেখানোর পদ্ধতি নয়। ভয় পেলে শিশুরা কিছুই শিখতে পারবে না। হয়তো ধীরে ধীরে মানসিক রোগীতে পরিণত হবে।
এই ভিডিওটা শেয়ার করেছেন ক্রিকেট তারকা বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ান, যুবরাজ সিং, রবিন উথাপ্পাসহ অনেকে। বিরাট এই ভিডিও শেয়ার করেছেন ইনস্টাগ্রামে। সেটি গতকাল পর্যন্ত দেখেছে ২৭ লাখ লোক। আর কমেন্ট করেছেন ২৩ হাজার লোক। ভিডিওর নিচে তিনি লেখেন ‘মায়া-দয়া বলে কিছু নেই। বাচ্চাটার রাগ-যন্ত্রণা, কিছুরই তোয়াক্কা না করে একজন নিজের অহঙ্কারের বশে তাকে শিখতে বাধ্য করছে। জোর করলে বাচ্চা কিছুই শেখে না।’ শিখর ধাওয়ান এটি পোস্ট করেছেন টুইটারে। এটি রিটুইট হয়েছে ৩ হাজার বারের বেশি। তিনি লিখেছেন, ‘এত অসহ্য ভিডিও আগে দেখিনি। বাবা-মা হওয়াটা বিরাট দায়িত্ব। বাচ্চারা যা হতে চায়, সেভাবেই তাদের গড়ে তোলা উচিত। মারধর করে কিছু শেখানোর চেষ্টা করবেন না।’ সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস