যৌন নির্যাতন থেকে বাঁচতে গার্হস্থ্য পাঠবইয়ে এ কেমন কৌশল!

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক: |

অষ্টম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ে জীবন দক্ষতা শেখানোর ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা আছে তাতে মেয়েদের  স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন,যৌন নিপীড়ন থেকে মেয়েদের বাঁচাতে কিছু আত্মরক্ষার ‘কৌশল’ শেখাতে গিয়ে তার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত না। আর এ অধ্যায়ের লেখক ও বইটির সম্পাদক বলছেন,কিভাবে মেয়েরা সাবধান ও জীবনদক্ষ হবে তা শেখাতেই এগুলো লেখা হয়েছে। তবে কিছু জায়গায় ব্যবহৃত ভাষা নিয়ে তাদেরও আপত্তি আছে।

প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষার কৌশল হিসেবে বইয়ে বলা হয়েছে, বাড়িতে কখনোই একা না থাকা, অন্যকে আকর্ষণ করে এমন পোশাক না পরা, মন্দ স্পর্শ করলে এড়িয়ে যেতে হবে অথবা পরিত্যাগ করতে হবে, পরিচিত-অপরিচিত কারোর সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া যাবে না। আর বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষা করার পাঠ দেওয়া হয়ে। এ অধ্যায়ে মাদকাসক্তি, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, যৌন নিপীড়ন, বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা আছে। যৌন হয়রানির পরিস্থিতিতে করণীয় বলতে গিয়ে বলা হয়েছে, পাড়ার বখাটেদের কথা-কাজের সরাসরি প্রতিক্রিয়া না দেখানো কৌশল অবলম্বন করা। যেমন জুতা খুলে দেখানো, চড় দেখানো, গালাগাল না করে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলানো।

শুধু অধ্যায় না,ছবি ব্যবহারে জেন্ডার সংবেদনশীলতা নেই বলেও সমালোচনা চলছে। বইয়ের ১১১ পাতায় রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতি দেখাতে নারীর রান্না করার ছবি দিলেও কৈশোরের বন্ধুত্ব বিষয়ে কথা বলা হচ্ছে তখন দুজন ছেলের ছবি রয়েছে।

এ বিষয়ে নারীনেত্রী ও জেন্ডার গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের উপস্থাপন মেয়েদের মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে একজন কিশোরিকে কী শেখানো হবে,তার মাথায় কোন বিষয়গুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বসানো হবে সে বিষয়ে সতর্কতা জরুরি। নারীর চলাফেলা,স্বাধীন পোশাকে বাধা দেওয়া বা আরোপিত বিধি-নিষেধের মধ্য দিয়ে আসলে বিকাশ সম্ভব না। শুরুতেই এমন হলে সে নিজেকে ‍গুটিয়ে রাখবে।

২০১২ সালে প্রথম প্রকাশিত বইটি ২০১৪ সালে পরিমার্জিত সংস্করণ হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের জুলাইয়ে পুনঃমুদ্রণ করা হয়। বইয়ের সম্পাদনা পরিষদে আছেন লায়লা আরজুমান্দ বানু ও সৈয়দ নাসরীন বানু। লায়লা আরজুমান্দ বানু একজন আমলা।

বইটির এই অংশের লেখক শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইসমত রুমিনা বলেন, ‘এই বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, কিন্তু এগুলো আমাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। মূলত মেয়েরা এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবে সেটা তাকে শেখানোর জন্যই এটা এভাবে লেখা।’

পোশাক সাবধানতা ও বাড়িতে একা না থাকার বিষয়ে তিনি একমত কিনা প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বাড়িতে একা না থাকার কথা না লিখে একা সাবধানে থাকার কথা লেখা দরকার ছিল। আমাদেরকে নির্দেশনা যেভাবে দেওয়া হয়েছিল, সেভাবেই করা হয়েছে। আমি কিছু সংশোধনীও দিতে চেয়েছি। কিন্তু এরই মধ্যে পরের বছরের বইও ছাপা হয়ে গেছে।’

নারীনেত্রী খুশী কবীর মনে করেন, ‘এ ধরনের পাঠ্যক্রম নারীকে অধিকার সচেতন বা সাবধান করবে এমন না। এটি কিশোরী মেয়েটির স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত করবে। নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে মেয়ে শিশু বড় হয় এটি আজকের সময়েই কেবল ঘটছে তা নয়। এসব বরাবরই ছিল। কিন্তু এতদিনের আন্দোলনের পরও এখনও এমন চললে আমরা আসলে পিছিয়ে পড়ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে গ্রামের মেয়েদের কথা বলে এসব পাঠ্যপুস্তকে ঢোকানো হচ্ছে সেই গ্রামের মেয়েরাই ফুটবল খেলে দেখিয়ে দিয়েছে এটা ভুলে গেলে চলবে না। এসব জেন্ডার অসংবেদনশীল লেখা পাঠ্যপুস্তক থেকে দ্রুত সরানো প্রয়োজন।’

মনোরোগ বিশ্লষক মোহিত কামাল বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে যা শেখানো হবে,মানসিকতা সেভাবেই গড়ে উঠবে। ফলে যে বয়সে তার পৃথিবীটা চেনার কথা সে বয়সে পুরুষকে তার শত্রু হিসেবে জানতে শিখবে। পরবর্তী জীবনে সেটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032429695129395