প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্যই পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগে বিদ্যালয়ের কয়েকজন নির্বাচিত শিক্ষার্থীকে বিশেষভাবে পড়াশুনা করানোর মাধ্যমে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হতো। এতে অন্য শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হতো। সরকার কয়েকজন বাছাইকৃত শিক্ষার্থী নিয়ে পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে সকলে যেন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে এ জন্য বর্তমান পদ্ধতি চালু করেছে।
তিনি মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সংসদে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ পয়েন্ট অর্ডারে পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়টি উত্থাপন করেন।
জবাবে ফিরোজ রশীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষাটি নিয়ে মাননীয় সংসদ সদস্যের আপত্তি কিসে তা বুঝতে পারছি না। জানি না উনি কিভাবে পড়াশোনা করে উঠে আসছেন। এই পরীক্ষা দুটো আমি চালু করেছি। সংসদ সদস্য প্রশ্ন তুললেন কেন পরীক্ষা হবে? এটা শুনে আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম। এই পরীক্ষার জন্য ছেলেমেয়েরা কি পড়াশোনায় মনোযোগী হচ্ছে না? এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার বাড়ছে না?’
এসময় প্রধানমন্ত্রী তার ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা ছাত্র অবস্থায় যখন আমাদের বৃত্তির জন্য সিলেক্ট করা হয়েছিল তখন দেখতাম যত পড়াশোনা আমাদের ওপর আর বাকিদের ছাড়া ছাড়া ভাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃত্তির জন্য শিক্ষকরা ছেলেমেয়েদের বেছে নেন। তারা যাদের বেছে নেন তাদের বাইরেও মেধাবী ছেলেমেয়ে থাকতে পারে। শিক্ষকরা সবাইকে যে বেছে নিতে পারবেন তার তো কোনও নিশ্চয়তা নেই। সেজন্য আমরা ঠিক করলাম– বাছা পরীক্ষার্থীদের নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা না করে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে সবাই পড়াশোনা করবে, সবাই পরীক্ষা দেবে সেখান থেকে যারা দরিদ্র মেধাবী তারা বৃত্তিটা পাবে।’
পিইসিই ও জেএসসি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাভীতি কাটিয়ে তোলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্কুলে পড়ে ১০ বছর পর যখন এসএসসি পরীক্ষা দিতে বসে তখন ভয়ভীতি কাজ করে। আত্মবিশ্বাসের অভাব হয়। বর্তমান পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা বোর্ড পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে উঠে যাচ্ছে, ফলে এসএসসি পরীক্ষার সময় ওই ভয়ভীতিটা তাদের মধ্যে থাকে না। তখন সহজভাবে পরীক্ষার হলে বসে, পাস করে। যার ফলে এখন পাসের হার বাড়ছে। স্কুলে ধরে রাখাটাও এই পরীক্ষার একটা উদ্দেশ্য। কোন শিক্ষার্থী কোন পথে যাবে এই পরীক্ষার মাধ্যমে তারও ফিল্টার করে ফেলা যাচ্ছে।’
সার্টিফিকেট পেলে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার পর ছেলেমেয়েরা হাতে যখন সার্টিফিকেট পাবে– এটা একটা আনন্দের বিষয়। সার্টিফিকেট পেলে নিজেদের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস আসে। এতে আপত্তিটা থাকতে পারে– বুঝতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেটা করেছি বাচ্চাদের ভবিষ্যত চিন্তা করেই করেছি। পৃথিবীর সব দেশে এ ধরনের পরীক্ষার সিস্টেম আছে।’
এ সময় রিটের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘লাখ লাখ মামলা পড়ে আছে কোর্টে। তার কোনও খবর নেই। কিন্তু বাচ্চারা পরীক্ষা দেবে কি দেবে না– তা নিয়ে একটা মামলা/রিট করে বসে থাকে। আর এটা নিয়েই কোর্ট সময় কাটায় অথচ অনেক জরুরি মামলা– সন্ত্রাসী, জেএমবি গ্রেফতার মামলা, অনেকের ফাঁসির শুনানি বাকি, সেগুলোর শুনানির সময় নেই। এই সমস্ত খুচরা জিনিস নিয়ে সময় কাটানো কেন? হয়তো দেখা যাবে কোনোদিন একটা রিট করে বসে থাকবে কেন বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে কিছু লোক যেন আছে অনবরত রিট করা আর এটার ওপর আলোচনা করা। বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়ে রিট–জানি না কোর্ট কী রায় দেবে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করার যদি রায় দেয় তাহলে এর থেকে দুঃখের আর কিছু থাকবে না।’
এর আগে ফিরোজ রশীদ তার বক্তব্যে পিইসিই পরীক্ষা নিয়ে অ্যাডভোকেট ইউনূস আলী আকন্দের রিট প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রিট নিষ্পত্তি না করে সরকার পরীক্ষা নিয়ে যাচ্ছে।’ কোনও ধরনের আইন প্রণয়ন ছাড়া এ ধরনের পরীক্ষা নেওয়াকে সংবিধান পরিপন্থী বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি। পরে তার জবাব দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘সংসদে পাস হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকেই এই পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে আইনের কোনও লঙ্ঘন হয়নি।’