শিক্ষার্থীরা টু-থ্রি-ফোর বানান না পারায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

শেরপুর প্রতিনিধি |

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর কাছে ইংরেজিতে টু-থ্রি-ফোর বানান বলতে ও লিখতে না পারায় সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শেরপুরের  নলিতাবাড়ী ‍উপজেলার কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে ওই বিষয়ে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।

শেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এনামুল হক দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) নার্গিস সাজেদা সুলতানা স্বাক্ষরিত পত্রে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। তাতে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান, সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজিলাতুন নেছার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজিলাতুন নেছা মোবাইল ফোনে জানান, ব্যাখ্যার জবাব দিতে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে তিনি বলেন, ‘আমি ৯ মাস হয় নালিতাবাড়ীতে যোগদান করেছি। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষায় অনেক সমস্যা রয়েছে। সেসব চিহ্নিত করে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাাফিজুর রহমানকে ইংরেজিতে টু, থ্রি ও ফোর বানান বলতে পারেনি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। ৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার কদমতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দৈনিকশিক্ষাকে জানান, গণশিক্ষা মন্ত্রী উপজেলার রূপনারায়ণকুড়া ইউনিয়নের নিজপাড়া গ্রামে নতুন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় উদ্বোধন করে ফিরছিলেন। নালিতাবাড়ী শহরে ফেরার পথে হঠাৎ রাস্তার পাশে কদমতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখে মন্ত্রীর গাড়িবহর থেমে যায়। গাড়িবহরের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। তখন বিকেল পৌনে ৩টা। গাড়ি থেকে নেমে মন্ত্রী সোজা চলে যান বিদ্যালয়টির চতুর্থ শ্রেণির কক্ষে। সেখানে ছোট ছোট কিছু শিক্ষার্থীকে দেখে মন্ত্রীর সন্দেহ জাগে তারা আসলেই চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী কি না।

এ সময় কর্তব্যরত শিক্ষক মন্ত্রীকে জানালেন, ওরা সবাই চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। মন্ত্রী তখন শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকে ইংরেজিতে ‘ফোর’ বানান লিখতে বলেন। কিন্তু কেউই ফোর বানান লিখতে না পারায় তাদের ফোর বানান বলতে বলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কেউই ফোর বানান বলতে পারেনি। তখন তিনি প্রধান শিক্ষককে ওই শ্রেণিকক্ষে ডাকেন। তাঁকে ক্লাসের ফার্স্ট বয়, সেকেন্ড বয় কে জানতে চান। কিন্তু দেখা যায়, তারা দুজনের কেউই বিদ্যালয়ে উপস্থিত নেই। শিশুরা কেন বানান বলতে পারছে না, মন্ত্রী তা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, শিশুরা হয়তো ঘাবড়ে গেছে। মন্ত্রী তখন ক্ষোভের সঙ্গে ওই শ্রেণিশিক্ষকের কাছে তিনি কত বেতন পান জানতে চান। শিক্ষক তখন মন্ত্রীকে জানান, তিনি ২৬ হাজার টাকা বেতন পান। মন্ত্রী বলেন, ‘বেতন তো বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু আপনি শিশুদের কী শেখাচ্ছেন? তারা তো ফোরে পড়ে, অথচ ফোর বানান জানে না। ’ তখন কতজন শিক্ষক আছেন জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জানান পাঁচজন শিক্ষক আছেন।

এই সময় সেখানে উপস্থিত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জনপ্রতিনিধি, কিন্তু এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর কোনো খোঁজ-খবর রাখেন না। এটা কী করে হয়, বলুন!’ কথা বলতে বলতেই মন্ত্রী ঢোকেন পাশের তৃতীয় শ্রেণির কক্ষে। সেখানে তিনি এক ছাত্রকে থ্রি বানান ইংরেজিতে লিখতে বললে সে সেই বানান শুদ্ধভাবে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে সক্ষম হয়। তার কাছে মন্ত্রী জানতে চান কে তাকে বাসায় পড়ায়। শিশুটি জানায় বাবা পড়ায়। পরে মন্ত্রী বলেন, ‘সে হয়তো মেধাবী, বাড়িতে ভালো যত্ন পাচ্ছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কৃতিত্ব কতটা, দেখি একটু যাচাই করে। এই বলে মন্ত্রী ওই শ্রেণিকক্ষের অন্তত ১৫ জনের কাছে থ্রি ও টু-এর ইংরেজি বানান জানতে চান। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীই সেই বানান বলতে পারেনি।

এই পর্যায়ে মন্ত্রী হতাশার সুরে বলেন, ‘আমরা মানসম্মত শিক্ষার কথা বললে কী হবে, মাঠপর্যায়ের চিত্র আসলে খুবই করুণ। এই বিদ্যালয়ের অবস্থা দেখে আমি খুবই মর্মাহত। মন্ত্রী তখন ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি জানি না, আপনাদের কোথায় আসলে যাওয়া দরকার। কোথায় বদলি করা দরকার। আমি কী বলব, আল্লাহ মালুম।

এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, পরিচালক প্রশাসন সাবের হোসেন, জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার রফিকুল হাসান গণি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুল হক এবং স্থানীয় প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল - dainik shiksha স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025179386138916