শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির মচ্ছব

নূর মোহাম্মদ |

গত তিন দশকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে ৪৬৫ কোটি টাকা। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর দু’মাসেই শতাধিক প্রতিষ্ঠান অডিট করে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর পৌনে দুই কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম পেয়েছে। এ সময়ে ১৮টি কলেজ ও ৭৪টি স্কুলের অডিট রিপোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দিয়েছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। সেখানে এ আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়েছে।

ডিআইএ’র প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে ১১টি কলেজ ও ৩২টি স্কুলসহ মোট ৪৩টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়েছে ১ কোটি ৬৭ লাখ ১৯ হাজার ২৮ টাকা। আর আগস্ট মাসে ৭টি কলেজ ও ৪২টি স্কুলসহ ৪৯টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে আর্থিক অনিয়ম পেয়েছে ১০ লাখ ৩৩ হাজার ২০০ টাকা।

জানা গেছে, ১৯৮১-৮২ সাল থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ৪৯ হাজার ১৫৬টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়। এতে বিধি বহির্ভূতভাবে ৪৬৫ কোটি ৬২ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনিয়মের তথ্য উদঘাটিত হয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০শে জুন পর্যন্ত ডিআইএ মোট ৭ হাজার ২২২টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ প্রতিষ্ঠান বিশেষভাবে পরিদর্শন করা হয়। এ সময়ে ৯৮ কোটি টাকার বেশি অবৈধভাবে গ্রহণের তথ্য পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়ে এমপিও

গ্রহণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকের মৃত্যুুর পরও তার নামে বেতন উত্তোলন করে আত্মসাৎ, শিক্ষক নিয়োগ না দিয়েই এমপিও গ্রহণ, প্যাটার্ন বহির্ভূত শিক্ষক নিয়োগসহ নানাভাবে ওই অর্থ লোপাট করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ডিআইএ যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছেন তারা। ইতিমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে পিয়ার ইন্সপেকশন (সমজাতীয় পরিদর্শন), গণশুনানির মতো জন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এ ছাড়াও বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার কাজ চলছে। এগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা ডিআইএ উদঘাটন করেছে ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষে। ওই বছর তারা ২ হাজার ৫৩৩টি পরিদর্শন রিপোর্ট সরকারের কাছে দাখিল করে। এতে তারা প্রতিষ্ঠানগুলির ৫৭ কোটি ১৩ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৬ টাকা লোপাটের চিত্র বের করে। সরকারি অর্থ লোপাটের তথ্য উদঘাটনের দ্বিতীয় বড় ঘটনা ধরা পড়ে এর পরের বছর ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষে। ওই বছর ৫৩ কোটি ৯১ লাখ ৯৮ হাজার ৯১৬ টাকার অনিয়ম ও অপচয় উদঘাটন করা হয়, যা সরকারি কোষাগারে জমাদানের নির্দেশনা ছিল। ২০০১ সালের পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলির আর্থিকসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ধরা পড়ার হার বেশি ছিল।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ওই সময়ে তদন্ত অনেকটা নির্মোহভাবে হয়েছে। যে কারণে আর্থিক দুর্নীতি উদঘাটনের হার বেশি ছিল। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানগুলির দুর্নীতি উদঘাটনের হার কমতে থাকে। দেখা গেছে, যেখানে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৪৪ টাকার দুর্নীতি ধরা পড়ে, সেখানে পরের বছরই তা অর্ধেকে নেমে আসে। ওই বছর ১৮ কোটি ৯ লাখ ৪৬ হাজার ২৬৩ টাকার অনিয়ম ধরা পড়ে। এরপর ত্রুমান্বয়ে কমতে থাকে। একপর্যায়ে ২০১১-১২ অর্থবছরে তা নেমে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৪৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকায়। অবশ্য ডিআইএ’র হিসেবে গেলো অর্থবছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি করে অর্থ লোপাটের পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি ৫০ লাখ ৬ হাজার ৪৮৩ টাকা। এর আগে নব্বইয়ের দশকের শেষে বা ১৯৮৯-৯০ সেশনে ডিআইএ সারা দেশে ২৩ কোটি ৩১ লাখ ৮৯ হাজার ৩১২ টাকার আর্থিক অনিয়ম ধরেছিল। তবে চলতি বছর থেকে আর্থিক দুর্নীতি ধরার পরিমাণ বাড়ছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অনলাইনে মনিটরিং, পেয়ার ইন্সফেকশন, গণশুনানির মধ্যে কার্যত্রুম চালু করেছে। পেয়ার ইন্সফেনশন চালু হলে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়ম অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন ডিআইএ কর্মকর্তারা।

সৌজন্যে: মানবজমিন


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033168792724609