শিক্ষিকা থেকে ভিখারি, জানাজানিতে তোলপাড়!

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

স্বাধীনচেতা স্বভাবের বিদ্যা ভারতের একজন সরকারি কর্মকর্তা। দক্ষিণ ভারতের কেরালার রাজধানী তিরুঅনন্তপুরমে তার বসবাস। এক সকালে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে শহরের রেল স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন।

স্টেশনের বাইরে বন্ধুর জন্য অপেক্ষার সময় তার চোখ গেলো রাস্তার পাশে অবস্থানরত এক বৃদ্ধার দিকে। পরনের পোশাকটি জরাজীর্ণ। হাতে পলিথিন ব্যাগ, যাতে রয়েছে কয়েকটি খালি প্লাস্টিকের বোতল ও পুরনো একজোড়া কাপড়। রাস্তার পাশের একটি গাছ থেকে ফল ছিঁড়ে খাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি।

বৃদ্ধাকে দেখে শহরের আর দশটা ভিখারির মতোই লেগেছিল বিদ্যার কাছে। বিদ্যার মনে সহমর্মিতা জাগে। তিনি বৃদ্ধাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার কি ক্ষুধা লেগেছে’?

‘না’, সঙ্গে সঙ্গে জবাব বেরিয়ে আসে বৃদ্ধার মুখ থেকে। স্বীকার করতে না চাইলে কি হবে, তার মলিন মুখমণ্ডল ও ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য দেখলেই বোঝা যায় তিনি কতোটা ক্ষুধার্ত। বিদ্যা কাছাকাছি একটা খাবারের দোকান থেকে কিছু খাবার কিনে আনেন বৃদ্ধার জন্য।

নিজের ছাত্রীদের সঙ্গে সেই স্কুল শিক্ষিকাখাবার খাওয়ার সময় বৃদ্ধাটির সঙ্গে আলাপ চালানোর চেষ্টা করেন বিদ্যা। খেয়াল করলেন, বৃদ্ধার বাচনভঙ্গি বেশ মার্জিত। কথাবার্তায় শিক্ষার ছাপ। ফলে অতীত জীবন সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠলেন।

জানা গেলো, ভিখারির মতো ঘুরে বেরানো বৃদ্ধাটি একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা। উত্তর কেরালার মালাপ্পুরাম জেলার একটি স্কুলে দীর্ঘদিন শিক্ষাদান করেছেন তিনি। বৃদ্ধার কাহিনী কতটুকু সত্য তা নিয়ে সংশয় থাকায় মোবাইল ফোন দিয়ে তার কিছু ছবি তুলে রাখেন বিদ্যা।

বৃদ্ধা যদি আসলেই স্কুল শিক্ষিকা হয়ে থাকেন, তবে তার কোনো না কোনো ছাত্র-ছাত্রী তাকে অবশ্যই চিনতে পারবেন। এই ভেবে বৃদ্ধার ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করেন। ফলাফল পেতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। বৃদ্ধার কয়েকজন পুরনো ছাত্র-ছাত্রী চিনে ফেলেন ছবিটা, এ তো আমাদের ছোটবেলার ভালসা ম্যাডাম!

পুরনো ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যার সহযোগে আবার খুঁজে বের করেন তাকে। তারা সবাই গৃহহীন ভালসা ম্যাডামের জন্য শেল্টারের ব্যবস্থা করতে আগ্রহী। শহরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে তার থাকার ব্যবস্থা হয়ে যায়।

ভালসার আত্মীয়-স্বজনকে খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে পুলিশ স্টেশনে একটি জেনারেল ডায়রি করা হয়। সেখান থেকে জানা যায়, ভালসার পরিবার তাকে পরিত্যাগ করেছে। মায়ের ভরণপোষণের দ্বায়িত্ব এড়াতে ছেলে তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। পুলিশ ভালসার এক বোন ও কয়েকজন আত্মীয়ের সন্ধান বের করতে পারলেও, অনেক চেষ্টার পরও ছেলে বা স্বামীর কোনো খোঁজ পায়নি।

ভারতের সরকারি তথ্যমতে, কেরালায় প্রবীণ নাগরিকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশই প্রবীণ। একইসঙ্গে, প্রবীণ নাগরিকদের পরিত্যক্ত হওয়ার ঘটনাও এ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটতে দেখা যায়।

রাজ্যের একজন সাব-কালেক্টর দিব্য এস ইয়ের বলেন, এখানকার বেশির ভাগ কর্মজীবী মানুষের সন্তানরা ভবিষ্যতে নিজেদের অভিভাবকের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করতে চায় না। ফল স্বরূপ দেখা পেতে হয় ভালসার মতো হতভাগিনী মায়ের।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053071975708008