জটিলতায় ডা. এমআর খানের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। বিশ্ববিদ্যালয়টির উদ্যোক্তা ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন বিশিষ্ট শিশু চিকিত্সক ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. এমআর খান। ২০১৬ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদন লাভের কয়েক মাস পর ডা. এমআর খান মারা যান। এর কিছুদিন পর অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির দুজনের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অনুমোদনকালে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিওটি সদস্য ছিলেন ১৬ জন। প্রতিষ্ঠাকালীন বিওটি চেয়ারম্যান ডা. এমআর খানের মৃত্যুর পর গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর গাজী মাহবুবুল আলমকে চেয়ারম্যান ও গাজী এমএ সালামকে সদস্য সচিব করে বিশ্ববিদ্যালয়টির নয় সদস্যবিশিষ্ট নতুন বিওটি গঠন করা হয়েছে। এ সময় প্রতিষ্ঠাকালীন বিওটির ১১ জন ট্রাস্টি সদস্যকে বাদ দেয়া হয় ও নতুন করে চারজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অথচ বোর্ডের এত বড় পরিবর্তনে কোনো ধরনের অনুমোদন নেয়া হয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে। শুধু তা-ই নয়, আগের বিওটি সদস্যদের সভায় না ডেকে নিয়মবহির্ভূত উপায়েই নতুন বোর্ড গঠনের একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে উঠে এসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত উচ্চপর্যায়ের এক কমিটির তদন্তে।

কমিটির আহ্বায়ক হলেন, ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন ও সদস্য সচিব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সহকারী পরিচালক শাহনাজ সুলতানা। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. বেলায়েত হোসেন তালুকদার ও ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের উপপরিচালক জেসমিন পারভীন।

তদন্ত শেষে এ কমিটি সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আগের বিওটি সদস্যদের আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি মারফত সভায় না ডেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠিত সভার মাধ্যমে নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন করা হয়। কাজেই নিয়মবহির্ভূতভাবে গঠিত বিওটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে কমিটি মনে করে।’

বর্তমান বিওটির সদস্য সচিব গাজী এমএ সালাম কর্তৃক তদন্ত কমিটিকে পাঠানো তথ্যে দাবি করা হয়, ডা. এমআর খান ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিওটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদকে সব দায়িত্ব অর্পণ করেন। পাশাপাশি আগের বিওটির ছয়জন সদস্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলে জানান তিনি।

যদিও পদত্যাগপত্রের স্বাক্ষরটি ডা. এমআর খানের কিনা, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। স্বাক্ষরটি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পদত্যাগ করা বিওটি সদস্যদের পদত্যাগের কারণও প্রায় একই ধরনের বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

গাজী মাহবুবুল আলম ও গাজী এমএ সালাম বিওটি সদস্যদের পদত্যাগপত্র ও নতুন বিওটি গঠনসংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত কমিটিকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া গাজী মাহবুবুল আলম অবৈধভাবে নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে পরিচয় দেন বলে উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ‘গাজী মাহবুবুল আলম নিজেকে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশ করছেন এবং বিভিন্ন পত্রিকায় বক্তব্য প্রদান করছেন, যা আইনসম্মত নয়।’

এদিকে ডা. এমআর খানের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে গাজী এমএ সালাম ও গাজী মাহবুবুল আলম ভ্রাতৃদ্বয় ৪ কোটি টাকা আত্মসাত্ করেন বলেও তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ করেছেন তার মেয়ে ডা. মেন্ডি করিম।

বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের ক্ষেত্রে ৫ কোটি টাকা আমানত রাখার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ আমানতের বিপরীতে কোনো ধরনের ঋণ গ্রহণের বিধান নেই। যদিও নিয়মবহির্ভূতভাবে আমানতের বিপরীতে ঋণ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ।

সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদনও পায়নি। এখনই বিভিন্ন ধরনের বড় অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটি খুবই দুঃখজনক। আমাদের এমনিতেই জনবল অনেক কম। যদি এ ধরনের নোংরামি তদন্তে ব্যস্ত থাকতে হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার সময় কোথায়?


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060489177703857