শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ছাত্রীদের জন্য নতুন হোস্টেল নির্মানের পরেও কমেনি আবাসন সংকট। আর তাই হলে জায়গা না পাওয়া ছাত্রীদের স্থান হয়েছে মর্গ এন্ড মচুয়ারী ভবনে। তাছাড়া বিডিএস (ডেন্টাল) ছাত্রীদের থাকতে হচ্ছে ভাড়া বাড়িতে। ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করা পরিত্যাক্ত ছাত্রী নিবাসেও থাকছেন অনে। এর ফলে ছাত্রীরা যেমন নিরাপত্তা হিনতায় ভুগছেন তেমনি মাসের পর মাস কর্তৃপক্ষকে গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, ছাত্রীরা নিজ ইচ্ছাতেই মর্গ এন্ড মর্চ্যুয়ারী ভবনে বসবাস করছেন। তাদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রয়েছে। তাছাড়া নতুন ছাত্রীনিবাস বর্ধিতকরনের মাধ্যমে ছাত্রীদের আবাসন সংকট দুর করা সম্ভব হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ভাস্কর সাহা।
মেডিকেল কলেজ ছাত্রশাখা সূত্রে জানাগেছে, কলেজটিতে ছাত্র’র তুলনায় ছাত্রী সংখ্যা অনেকাংশে কম। এমবিবিএস কোর্সে প্রতি ব্যাচে গড়ে ৮২ থেকে ১০৭ জন করে ছাত্রী রয়েছে। তাছাড়া বিডিএস বিভাগে ১০ থেকে ২১ জন।
সে অনুযায়ী এমবিবিএস এর পাঁচটি ব্যাচে মোট ছাত্রী সংখ্যা ৪৫৪ জন এবং বিডিএস’র চারটি ব্যাচে মোট ছাত্রীর সংখ্যা ৯৫ জন। এদের মধ্যে এমবিবিএস কোর্সের ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত হলের ব্যবস্থা থাকলেও বিডিএস ছাত্রীদের জন্য নেই সেই ব্যবস্থা। এমবিবিএসদের জন্য হলের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানেই নেই পর্যাপ্ত কক্ষ এবং শয্যার ব্যবস্থা।
তাছাড়া বিডিএসদের জন্য হলের ব্যবস্থা না থাকার ফলে গত কয়েক বছর ধরে শেবামেকে বিডিএস ছাত্রীদের থাকতে হচ্ছে ক্যাম্পাসের বাইরে ভাড়া বাড়িতে। বিডিএস’র ছাত্ররাও ক্যাম্পাসের বাইরে উপাধ্যক্ষের বাসভবনটি হোস্টেল হিসেবে ব্যবহার করতেন। পরবর্তীতে তাদেরকে স্থানান্তর করে ছাত্রবাসে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু আবাসন সংকট চরম আকার ধারণ করায় মর্গ এন্ড মচুয়ারী ও ভাড়া বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে ছাত্রীদের।
মেডিকেল কলেজ ছাত্রী হলের দায়িত্বে থাকা অফিস সহকারী আবুল কালাম জানান, এমবিবিএস ছাত্রীদের জন্য ক্যাম্পাসের মধ্যেই পৃথক দুটি হলের ব্যবস্থা ছিলো। দুটি ছাত্রীনিবাসেই ৮০টি করে কক্ষে ৩২০ টি করে আসনের ব্যবস্থা ছিলো। কিন্তু তার পরেও আবাসন সংকট ছিলো। এমবিসিএস এর পাশাপাশি বিডিএস’র ছাত্রীদেরও ওই দুটি ছাত্রীনিবাসেই থাকতে দেয়া হয়।
অধ্যক্ষ বলেন, আবাসন সংকট নিরসনে পুরাতন ছাত্রী নিবাসের পেছনে ৭তলা ফাউন্ডেশনে তিনতলা বিশিষ্ট আরো একটি ভবন নির্মান কাজ শুরু হয় বছর দুই পূর্বে। কাজ শুরু করতেই ভিম স্থাপনের সময় পুরাতন ছাত্রীনিবাসটি নড়েচড়ে ওঠে। এতে করে আতংক ছড়িয়ে পড়ে ছাত্রীদের মাঝে। শেষ পর্যন্ত বুয়েট থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে ভবনটি ঝুকিপূর্ণ এবং পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়।
মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ভাস্কর সাহা বলেন, পুরাতন ছাত্রী নিবাস ঝুকিপূর্ণ ঘোষণার কারনে কোথাও স্থান না পেয়ে এমবিবিএস ছাত্রীদের কিছু অংশ ক্যাম্পাসের মধ্যে লাশ কাটা ঘরের পাশেই নির্মাণ করা মর্গ এন্ড মচ্যুয়ারী ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে ১০ থেকে ১৫ জনের মত ছাত্রী বসবাস করছে। মর্গ এন্ড মচ্যুয়ারী ভবনটি নির্মাণের পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে লাশের ময়না তদন্ত কিংবা ক্লাস কার্যক্রম শুরু হয়নি। পাশের পুরানো মর্গেই লাশ কাটার কার্যক্রম চলছে।
তাছাড়া বিডিএস ছাত্রীদের আবাসন ব্যবস্থা করা হয় ক্যাম্পাসের বাইরে দুটি ভাড়া বাড়িতে। মেডিকেল কলেজ লেনে লুৎফা নিলয় ও রুবীকা নিলয় নামক বাড়ি দুটি প্রতি মাসে ১০ ও ১২ হাজার টাকা করে ভাড়া নিয়ে মেয়েদের সেখানে থাকতে দেয়া হয়। এজন্য ওই বাড়িতে নিরাপত্তা কর্মীর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
অধ্যক্ষ বলেন, ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসে পুরাতন ছাত্রী নিবাসের পেছনে তিন তলা বিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস নির্মান কাজ শেষে ভবনটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু তাতে আবাসন সংকট দুর হয়নি। ৪০ কক্ষের এই ছাত্রীনিবাসে মোট আসন সংখ্যা ১৬০টি। এর মধ্যে তৃতীয় তলায় ২৮টি, ২য় তলায় মসজিদ এবং ৮টি রুম এছাড়া নিচ তলায় ডায়নিং ও টিভি রুম। আবাসন সংকটের কারনে এখানেও ছাত্রীদের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে মর্গে বসবাসকারী ছাত্রীদের সাথে আলাপকালে তারা অভিযোগ করেন, লেখাপড়ার স্বার্থে আমাদের লাশের সাথে বসবাস করতে হচ্ছে। ভয়ে সারা রাত বিদ্যুৎ এর আলো জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে। অনেক অনেক সময় গভীর রাতে অজানা ভয়ে শরীর শীউরে উঠছে।
তারা বলেন, আমরা ছাত্রীনিবাসে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্যাররা আমাদেরকে সেখানে যায়গার ব্যবস্থা করে দিতে পারেননি। কোন কোন সিনিয়র আপুরা একাই একটি কক্ষ দখল করে রেখেছেন। ছাত্রী নিবাসে আপুদের কাছে র্যাগিং এর শিকারও হতে হয় বলে অভিযোগ মর্গে থাকা ছাত্রীদের।
তবে অভিযোগ সঠিক নয় দাবী করে অধ্যক্ষ ভাস্কর সাহা বলেন, মর্গে থাকা মেয়েদের নতুন ছাত্রীনিবাসে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আসতে চাচ্ছে না। কারন ওখানে থেকে ছাত্রীরা নিজেদের মত করে ঘোরাফেরা করতে পারে। হলে আসলে তো চাইলে তারা বাইরে বের হতে পারবে না। এজন্য ওখান থেকে আসতে চাচ্ছে না।
তাছাড়া ঝুকিপূর্ণ পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা ঝুকিপূর্ণ হলেও ছাত্রীরা বসবাস করছে। তাদেরকে ঝুকিপূর্ণ ওই ছাত্রীনিবাস ত্যাগ করতে বহুবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনছে না। আমাদের অনুমতি না নিয়ে এমনকি কিছু না জানিয়েই ঝুকিপূর্ণ ভবনে বসবাস করছে তারা। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের কি করার আছে বলে মন্তব্য করে অধ্যক্ষ ভাস্কর সাহা বলেন, নতুন নির্মাণ হওয়া ছাত্রীনিবাসটি সাত তলায় উন্নীতকরণ কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে বলে গণপূর্ত বিভাগ আশ্বাস্থ করেছেন। ওই ভবনের কাজ শেষে হলে সকল ছাত্রীদের এক স্থানেই নিয়ে আসা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।