সড়কের ওপর ছাত্রীকে পেটালেন উপাধ্যক্ষ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

ময়মনসিংহের নান্দাইলে একটি মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে সড়কের ওপর বেদম পিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার উপজেলার শেরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ওই ছাত্রীর নাম কাকলি আক্তার। সে নান্দাইল উপজেলার বরবরিকান্দা গ্রামের দিনমজুর মো. শাহজাহান মিয়ার মেয়ে ও শেরপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তাকে প্রথমে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে গতকাল বিকেলে তাকে চিকিৎসকদের পরামর্শে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জেরিন আবদুল্লাহ বলেন, মেয়েটি একাধিকবার বমি করে একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, গতকাল বেলা দেড়টার দিকে অনুমতি না নিয়ে মাদ্রাসা ত্যাগ করলে উপাধ্যক্ষ ক্ষুব্ধ হন। তখন তিনি পিছু ধাওয়া করে সড়কে গিয়ে তাকে বেদম পেটান। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২০১০ সালের আগস্ট মাসে পরিপত্র জারি করে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এরপরও মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মো. হোসেন আহমেদ তাঁকে পিটিয়েছেন বলে ছাত্রীর অভিভাবকেরা অভিযোগ করেছেন।

গতকাল দুপুরে ওই মাদ্রাসায় গেলে কাকলির চারজন সহপাঠী জানায়, নামাজের বিরতির সময় কাকলি কাউকে কিছু না বলে মাদ্রাসা থেকে চলে যাচ্ছিল। তখন উপাধ্যক্ষ মাদ্রাসার ফটকে এসে তাকেসহ অন্যদের অনুমতি ছাড়া মাদ্রাসা ত্যাগ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তারপরও কাকলি দ্রুত বাড়ির দিকে চলে যাচ্ছিল।

কাকলির মা নাদিরা আক্তার বলেন, মারধরের খবর পেয়ে তিনি শেরপুর গ্রামের মেনু মিয়ার বাড়িতে এসে মেয়েকে গুরুতর অসুস্থ দেখতে পান।

কাকলি অভিযোগ করে, নাশতা না খেয়ে গতকাল সকাল ছয়টার দিকে সে প্রাইভেট পড়তে বের হয়। প্রাইভেট পড়া শেষ হলে সে মাদ্রাসায় যায়। প্রচণ্ড খিদে পাওয়ায় সে টিফিনের সময় বাড়ি চলে যাচ্ছিল। তখন মাদ্রাসা থেকে হোসেন হুজুর (হোসেন আহমেদ) তার পিছু দৌড়ে এসে তাকে সড়কে কঞ্চি দিয়ে গরুর মতো পেটাতে শুরু করেন। মারধরের ফলে একসময় প্রচণ্ড যন্ত্রণায় সে সড়কে পড়ে যায়।

শেরপুর গ্রামের মেনু মিয়া বলেন, তিনি ছাত্রীটিকে সড়কে পড়ে থাকতে দেখেন। ঘটনাস্থলে কাউকে না পেয়ে মেয়েটিকে তিনি পাঁজাকোলা করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে তাঁর স্ত্রী ও বাড়ির অন্য নারীরা মাথায় পানি দিয়ে মেয়েটিকে কিছুটা সুস্থ করে তোলে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপাধ্যক্ষ মো. হোসেন আহমদ দাবি করেন, প্রতিদিন নামাজের বিরতির সময় মাদ্রাসা থেকে প্রচুরসংখ্যক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যায়। তিনি নানা উপায়ে শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসায় ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করেন। কাকলি নামের ছাত্রীকে তিনি মারধর করেননি।

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আইনুল ইসলাম বলেন, তিনি নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে গিয়ে মেয়েটিকে দেখে এসেছেন। তাঁর মনে হয়েছে মেয়েটির ওপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। এটা কোনো শিক্ষকের কাজ হতে পারে না।

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, তিনি ওই মেয়ের অভিভাবককে থানায় অভিযোগ দিতে বলেছেন।

শিক্ষকের বেত্রাঘাতে ছাত্রী আহত

আমাদের কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ওই ছাত্রী আহত হয়েছে। গতকাল সোমবার এ ঘটনা ঘটে।

আহত ছাত্রীর নাম সুরাইয়া ইয়াসমিন (৭)। সে উপজেলার শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। সে শ্রীপুর গ্রামের মোছাদ্দর আলীর মেয়ে। এ বিষয়ে ওই ছাত্রীর চাচা সিকন্দর আলী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

সিকন্দর আলী অভিযোগ করে বলেন, গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় বাংলা পরীক্ষা চলাকালে ছবি দেখে আম পাতা লিখতে পারছিল না সুরাইয়া। এতে প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে একটি বেত নিয়ে তাঁর পিঠে একাধিক আঘাত করেন। পরে সে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তার অভিভাবকদের জানায়। বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষকের কাছে ঘটনা জানতে চাইলেও ভালো জবাব পাননি তাঁরা। পরে এ বিষয়ে তাঁরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

তবে অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, ক্লাসে বারবার বোঝানোর পরও পরীক্ষার সময় লিখতে না পারায় তিনি ওই ছাত্রীকে দুটি বেত্রাঘাত করেন। ছাত্রীর চাচা বিদ্যালয়ে আসার পর ঘটনার জন্য তিনি অনুতপ্ত হয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করার পরও তিনি (ছাত্রীর চাচা) বিদ্যালয়ে ভাঙচুর করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027680397033691