নির্বাচনের বছর, তাই আগে ভাগেই পাঠ্যবই ছাপিয়ে সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু এ পরিকল্পনা অনুযায়ী বই ছাপা যাচ্ছে না। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সঠিক কৌশলের অভাবের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। আগামী বছরের জন্য প্রায় ৩৬ কোটি ৬ লাখ বই ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন ধারণা থেকেই বই ছাপার কাজ অক্টোবরে শেষ করতে চেয়েছিল কর্তৃপক্ষ। নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে সরকারি কর্মকর্তারাও ব্যস্ত থাকবেন। এছাড়া রাজনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক না থাকলে মাঠ পর্যায়ের স্কুলগুলোতে বই পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ছোট ৪শ প্রেস পাঠ্যপুস্তকসহ বই ছাপার সঙ্গে যুক্ত। এর বাইরে ৬৮টি বড় প্রেস রয়েছে। নির্বাচনের সময়ে সব প্রেস ব্যস্ত থাকবে নির্বাচনী পোস্টার ছাপায়। বেশি লাভের আশায় বইয়ের চেয়ে পোস্টার ছাপায় আগ্রহ থাকবে তাদের।
এ সব সমস্যা থেকে নিরাপদে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বিনামূল্যের বই পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। অন্যান্য বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বই পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ডিসেম্বর পর্যন্ত লেগে যায়।
এনসিটিবির একাধিক সূত্র বলেছেন, যে প্রক্রিয়া ও গতিতে কাজ চলছে তাতে সম্ভব হবে না। আর বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খানও একই শঙ্কার কথা বলেছেন। প্রেস মালিকরা বলছেন, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদাসীনতা এবং সমন্বয়হীনতা রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের বই ছাপার কার্যাদেশ দিতে পারেনি এনসিটিবি। কার্যাদেশ দেয়ার পর ১২৪ দিন সময় পায় প্রেস মালিকরা। মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ নিয়েও সংকট চলছে। আগামী ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণির শিক্ষাবর্ষ শুরু। এ বইয়েরও কোন খবর নেই। ফলে বই ছাড়াই ক্লাস শুরু করবে এই স্তরের শিক্ষার্থীরা।
প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার কাজের টেন্ডার আহ্বান করে এনসিটিবি। টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর পরই কাগজের মূল্য বেড়ে যায়। যাতে ওই মূল্যে কাজ করতে রাজি হয়নি প্রেস মালিকরা। এ কারণে দাম বাড়িয়ে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়।
কয়েকজন প্রেস মালিক বলেছেন, কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ার পরেও এনসিটিবির কর্মকর্তারা কম দামে প্রাক্কলিত দর নির্ধারণ করেন। টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে মূল্য বাড়িয়েও এটা সমাধান করা যেতো। মাধ্যমিকের অবস্থাও প্রায় একই। কিছু বইয়ের কাজ শুরু হলেও বেশিরভাগ বইয়ের কার্যাদেশ এখনো পাননি প্রেস মালিকরা।
তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রয়ারি মাসে প্রথমিক স্তরের বই ছাপার এটিপিপি (বার্ষিক সমায়াবদ্ধ পরিকল্পনা) অনুমোদন দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী টেন্ডারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ঠিকাদারদের সঙ্গে ৬ জুন চুক্তি করার কথা। দর নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের টেন্ডার বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিকের নতুন দরপত্র খোলা হবে আগামী ২০ জুন আর প্রাথমিকের ২১ জুন।
তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘অক্টোবরের মধ্যে বই পৌঁছে যাবে। কিছু বই পৌঁছতে নভেম্বর পর্যন্ত যেতে পারে। মাধ্যমিকের কার্যাদেশ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়েছে। প্রাথমিকের টেন্ডার ওপেন হবে এ মাসের ২০ ও ২১ জুন। ফলে অক্টোবরের মধ্যে বই ছাপা শেষ হবে। প্রেস মালিকরা যাই বলুক না কেন ছাপা নির্ধারিত সময়ে হবে। গতবারও শঙ্কার কথা বলেছিলেন প্রেস মালিকরা। কিন্তু ঠিক সময়েই বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা।’
মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, অক্টোবরের মধ্যে বই সরবরাহ করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে তিনি এনসিটিবির কর্মকর্তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সৌজন্যে:ইত্তেফাক