অটোপাস দিতে পারবে স্কুল-কলেজগুলো

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রাণঘাতী করোনার মধ্যে স্কুল-কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা নেয়ার বাধ্যবাধকতা রাখার পক্ষে নয় শিক্ষা প্রশাসন। অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা না নিয়েও পরবর্তী ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ করতে পারবে স্কুল কলেজ। ফলে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোন পরীক্ষা ছাড়াই দ্বাদশ শ্রেণিতে উন্নীত করার ক্ষেত্রেও কোন বাধা নেই। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেছেন, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এদিকে করোনার মধ্যেই বিভিন্ন শ্রেণিতে পরীক্ষা গ্রহণের নোটিস ও ফি আদায়ের নামে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার (৫ জুলাই) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।

প্রতিবেদনে আরও জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনার ছোবলের কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধে সঙ্কটে পড়েই কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা না নিয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করেছে। আরও কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে একই পদক্ষেপে যাচ্ছে। ঠিক এমন অবস্থার প্রেক্ষাপটে শিক্ষা প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ‘অটোপ্রমোশন’ বা পরীক্ষা ছাড়া পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করার বিষয়ে নমনীয় অবস্থান নিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার বিষয়ে পৃথক কোন আদেশ জারি না করলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তারা পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উন্নীত করতে পারবে। এখানে শিক্ষা বোর্ডের কোন আপত্তি নেই।

করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্ধ আছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময়ে অনুষ্ঠিত হয়নি অভ্যন্তরীণ কোন পরীক্ষা। সেশনের সময় চলে যাওয়ায় একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে কলেজগুলো। আগামী বছর এপ্রিল মাসে তাদের এইচএসসি পরীক্ষা নির্ধারিত আছে। চলমান পরিস্থিতির কারণে রাজধানীর নটরডেম কলেজের একাদশ শ্রেণি থেকে সকল শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা ছাড়া দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়েছে।

উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আগামী ২৬ তারিখের মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি’র নয় হাজার ৪০০ টাকাসহ চলতি জুলাই মাস ও আগামী আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসের সাত হাজার ৮০০ টাকা পরিশোধের জন্য নোটিস দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

দ্বাদশে অটোপ্রমোশন নিয়ে আপত্তি না থাকলেও ফি আদায়ের এমন আদেশে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। তাদের দাবি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় করোনাকালে টিউশন ফি আদায়ে শিক্ষার্থীদের চাপ দিতে নিষেধ করেছে। সেখানে এভাবে নোটিস দিয়ে তিন মাসের বেতন ফি পরিশোধ করতে বলা আপত্তিজনক।

রাজউক উত্তরা মডেল কলেজও পরীক্ষা ছাড়া দ্বাদশে শিক্ষার্থী উন্নীত করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তারা একাদশের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ভিত্তিতে পদোন্নতি দিয়েছে শিক্ষার্থীদের। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া জানিয়েছেন, একাদশের প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের দ্বাদশে উত্তীর্ণ করার চিন্তা করছেন তারা। রাজধানীর আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে একই প্রক্রিয়ায় চলমান এ শিক্ষা সঙ্কট উত্তরণের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। যদিও এক্ষেত্রে প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে অনুমতি নিতে চাচ্ছে।

এমন অবস্থার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক শনিবার বলেছেন, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তারা পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উন্নীত করতে পারবে। এখানে শিক্ষা বোর্ডের কোন আপত্তি নেই।

আর সব বিষয়ে তো শিক্ষা বোর্ড হস্তক্ষেপ করতে পারেনা। এটা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। বোর্ড কোন আপত্তি করবেনা। এজন্য আলাদা আদেশ দেয়ার কোন প্রয়োজনও নেই। করোনার এই সময়ে সকল প্রতিষ্ঠানেই শ্রেণিতে কাজ বন্ধ আছে। বন্ধ আছে পরীক্ষা। তবে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক রেকর্ড কলেজে আছে। সেটার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ দেখাতে পারে।

এদিকে করোনার মধ্যেই বিভিন্ন শ্রেণিতে পরীক্ষা গ্রহণের নোটিস ও ফি আদায়ের নামে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজধানীর অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। আগামী ১৫ জুলাই দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নেয়া হবে বলে হঠাৎ করে আদেশ জারি করেছে সরকারী অবকাঠামোসহ নানা সুযোগ নিয়ে চলা রাজধানীর বিয়াম মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ।

ইস্কাটনে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠান সরকারী নানা সুযোগ পেলেও মাসিক উচ্চ বেতনের এ প্রতিষ্ঠানে সকল বকেয়া একসঙ্গে দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। এখানে দফায় দফায় অভিভাবকদের নোটিস দেয়া হচ্ছে বেশ কয়েকদিন ধরেই। এর সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণিতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা গ্রহণের নোটিস। অভিভাবকদের মোবাইলে পরীক্ষা নেয়ার নোটিস পাঠানো হলেও কিভাবে এখন পরীক্ষা নেয়া হবে তার কোন সদুত্তরও দিচ্ছেনা কর্তৃপক্ষ।

এক অভিভাবক বলছিলেন, সেলফোনে জানানো হয়েছে ১৫ জুলাই পরীক্ষা। কিভাবে পরীক্ষা নেয়া হবে জানতে চাইলে বলা হয় ‘আমরাও এখনও জানিনা কিভাবে পরীক্ষা হবে’।

বসুন্ধরায় অবস্থিত হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল করোনাকালে বন্ধের সময়ে টিউশন ফি দিতে ব্যর্থ শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে প্রমোশন আটকে দিয়েছে। বকেয়া পরিশোধ করে সন্তানদের স্কুল থেকে টিসি নিয়ে যেতে অভিভাবকদের নোটিস দিয়েছে। এই নোটিসের প্রতিবাদে এবং করোনাকালীন সময়ে টিউশন ফি ৫০ শতাংশ করার দাবিতে শনিবার সকালে অভিভাবকরা স্কুলের সামনে মানববন্ধন করেছেন। তারা অবিলম্বে এই নোটিস প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

মানববন্ধনে অভিভাবক ফোরামের আহ্বায়ক কল্যাণ ওয়ার্দ্দার, পারভিন আখতার, সাকলায়েন, মঞ্জুর এ চৌধুরী, জাহিদুর রহমান, আশফাক চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধন শেষে তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেন।

অভিভাবকরা বলেছেন, গত ২৯ জুন এই নোটিস পাঠানো হয়েছে স্কুল থেকে। বকেয়া টিউশন ফি পরিশোধের শেষ দিন ছিল ২৫ জুন। ১ জুলাই থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও টিউশন ফি পরিশোধ না করায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী নতুন ক্লাসে এখনও প্রমোশন পায়নি। অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষা নেয়া হলেও ফি যাদের বাকি রয়েছে সবার ফল ও রিপোর্ট কার্ড আটকে দেয়া হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026881694793701