চাকরি স্থায়ীকরণ অথবা পরবর্তী প্রকল্পে স্থানান্তরের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষকরা। সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে সকাল ৯ টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তারা অবস্থান নিয়েছেন তারা। এর আগে অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষকরা রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
এদিকে অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষকদের অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কৌশিক চন্দ্র বর্মনের বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়, ভুল তথ্য দিয়ে সময়ক্ষেপণ, বিতর্কিত কর্মকর্তা মাহমুদুল হকের দালালিসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তারা দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, ভুল তথ্য আর সেকায়েপের কর্মকর্তাদের দালালি করার কারণে আমাদের দাবি আদায় হয়নি।’
নাজমুল নামে একজন শিক্ষক বলেন, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে সমাপ্ত সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্টে (সেকায়েপ) নিয়োগ পাওয়া অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষকদের (এসিটি) চাকরি স্থায়ী করার আশ্বাস দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাঁচ হাজার শিক্ষকের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ফরিদপুরের এসিটি মো: শহিদুল ইসলাম বিনা শর্তে এসইডিপিতে প্রকল্পে চাকরি স্থানান্তরের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানিয়ে চাপানবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষক মো. শাহাদাতুল ইসলাম দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, আমরা শিক্ষক রাস্তায় থাকতে চাই না। শিক্ষক হিসেবে অপমানিত হতে চাই না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের সেকায়েপ শিক্ষক শাহনাজ আক্তার দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, আজ তো আমাদের রাস্তায় থাকার কথা নয়। কিন্তু আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। তাই রাস্তায় নেমেছি। শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন আমাদের চাকরি স্থায়ী করুন।
মাগুরার এসিটি শামিমা আক্তার দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য অবস্থান কর্মসূচিতে এসেছি। আমাদের চাকরি স্থায়ী করতে বা অন্য কোনো প্রকল্পে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী পারবেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
অপর একজন এসিটি সাদাতুল মুঈদ বলেন, সেকায়েক শিক্ষকদের এসইডিপিতে প্রকল্পে নেয়ার সুপারিশ থাকলেও সেটি কার্যকর হচ্ছে না। গত ১৩ মাস আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।
প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও মৌখিক আশ্বাসে ক্লাস করে আসছি দাবি করলেও বাস্তবে তারা ক্লাস করেনি বলে দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।
চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে কয়েকদফা মানববন্ধন করেছেন শিক্ষকরা। প্রথমে তারা এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। পরে ওই দাবি থেকে সরে এসেছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে বলেছেন, এসি্টিদের মধ্যে যারা যোগ্য তারা অন্যত্র চাকরি নিয়ে চলে গেছেন। এমপিও ও জনবলা কাঠামো নীতিমালা অনুযায়ী তাদের নিয়োগ না হওয়ায় এমপিওভুক্ত করা সম্ভব নয়। তবু প্রকল্পের কতিপয় কর্মকর্তার কথিত আশ্বাস অনুযায়ী মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়নে নতুন প্রকল্প এসইডিপিতে সেকায়েপের বিভিন্ন কম্পোনেন্টের (পাঠাভ্যাস ও উপবৃত্তি) কার্যক্রম চালু হলেও এসিটিদের চাকরি স্থায়ী করার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এতে চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন অভিজ্ঞ এ শিক্ষকরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন রাফিউল ইসলাম রাফি, আতিকুর রহমান, মহিউদ্দিন মাহি, মো: শহিদুল ইসলাম, মো; রইজ উদ্দিন, মো: ওসমান গণি প্রমুখ।