অতিরিক্ত সচিব পিতা ও নটরডেমিয়ান পুত্রের করোনা জয়ের কাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

"আমি ২০১৬ ব্যাচের নটরডেমিয়ান অভিজিৎ। আমার বাবা জনাব বাবলু কুমার সাহা বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। করোনাকালে বাবা সরাসরি মাঠে থেকে কাজ করে যাচ্ছিলেন। দেশবাসী নিশ্চয়ই খেয়াল করেছে, এই কঠিন করোনাকালেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বেশ নিয়ন্ত্রণেই ছিলো - বাবার তত্ত্বাবধানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিরলস কর্মীবাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ফ্রন্টলাইন ফাইটাররা কেউ কিন্তু নিজেদের জীবনের মায়া করেননি। বাবাকে তো অফিসে যাওয়া থেকে আমরা ঠেকাতেই পারিনি। তাঁর এক কথা, "আমি মাঠে না গেলে আমার সহকর্মীরা সাহস পাবেন কীভাবে?" কাজপাগল বাবাকে নিয়ে আমাদের মনে সবসময়ই অন্যরকম তৃপ্তিবোধ কাজ করে, কিন্তু এই করোনাকালে ভয়ও পাচ্ছিলাম।

আরও পড়ুন : করোনায় আক্রান্ত ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার

তাই, যা হবার কথা ছিলো - গত ১৪ মে আমার বাবা ও আমার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। আমাদের পুরো পরিবার ভয় পেয়ে গেলেও বাবার মনে ভয় নেই! তাঁকে দেখি আর অবাক হই!

যাইহোক, পরম করুণাময়ের কৃপায় গতপরশু ( ৩০ মে ) আমাদের দু'জনেরই করোনা টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। আমরা বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিয়েছি, হাসপাতালে যাইনি - কারণ, এই সময়টায় হাসপাতাল মোটেও সুবিধার জায়গা নয়। এই সময়ে আমরা কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।

সকলের সাথেই আমি আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাচ্ছি, যেটা আসলে কোনো মানদণ্ড দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব না; শুধুমাত্র করোনা নামক ট্রমার মধ্যে দিয়ে যারা গেছেন তারা ছাড়া আর কেউ হয়তো এটা আন্দাজ করতে পারবেন না। 

বাবা যেহেতু করোনায় ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা ছিলেন, তখন থেকেই আসলে মেন্টালি করোনা মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সেখান থেকেই আমি নিজের অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করছি। এটি থেকে যদি আপনাদের সামান্য উপকার হয়, তবেই সার্থকতা।

১. করোনা প্রতিরোধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। রাতে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। ভোরে ওঠার চেষ্টা করতে হবে এবং হালকা এক্সারসাইজ করতে হবে। খালি পেটে নিয়মিত লেবু ও মধু দিয়ে পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। 

২. করোনার সবচেয়ে বড় চিকিৎসা হলো মনোবল ঠিক রাখা। সোশ্যাল মিডিয়া এবং ফোন কল যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে এবং চিকিৎসকের নির্দেশনামতো চলতে হবে।

৩. যে সকল উপসর্গ থাকতে পারে, হালকা জ্বর ( ৯৯-১০০℃ ), হালকা কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা- এগুলো কে 'মাইল্ড সিম্পটম অফ কোভিড' বলা যায়। 'লস অফ স্মেল এন্ড টেস্ট' ও শ্বাস-কষ্ট হলো 'সিভিয়ার সিম্পটম অফ কোভিড'। 

৪. 'মাইল্ড সিম্পটম অফ কোভিড' যদি দেখা দেয়, তখন থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নিজেকে আইসলেটেড করে ফেলতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে 'অক্সি পালস মিটার' কিনে ফেলতে হবে। মনে রাখা জরুরি যে, কোভিড/করোনা অনেকটা সিজোনাল ফ্লুর মতো। কিন্তু করোনা Hypoxia ( Shortness of oxygen in tissues ) এর রাস্তা খুলে দেয়। এর ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। 'অক্সি পালস মিটার' দিয়ে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ট্র্যাক করে রাখতে হবে। ৯০ এর নিচে চলে গেলে অতি দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

৪. বলতে খারাপ লাগলেও আমাদের অনেক হাসপাতালই এখনো কোভিড চিকিৎসার জন্য উপযোগী নয়। তাই "মাইল্ড সিম্পটম'স এর ক্ষেত্রে বাসায় অবস্থান করাই বেটার, তবে জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা ৪/৫ দিনে না কমলে টেস্ট করে নেয়া উচিত।

৫. টেস্টের সময় অবশ্যই পিপিই পরে যেতে হবে। যদি পিপিই ব্যবস্থা করা সম্ভব না হয়, তবে ফুল স্লিভ কাপড় সাথে জুতা মোজা, মাস্ক এবং গ্লাভস ও গগলস পড়তে হবে। হাত কোনো ক্রমেই মুখে দেয়া যাবে না।

৬. পজিটিভ আসলেও ঘাবড়ে যাওয়া যাবে না। নিজেকে আইসলেটেড করে রাখতে হবে। যেহেতু আমার ক্ষেত্রে আমার এবং বাবার ২ জনের পজিটিভ আসে সে ক্ষেত্রে, আমরা ১৫ দিন অন্য দের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলি। 

৭. প্রতি দিনের কাপড় প্রতিদিন সেভলন দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ফ্লোর প্রতিদিন ক্লিন করে রাখা জরুরি। 

৮. খাবারের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভিটামিন সি, আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। আমরা ৩ বেলা খাবারের মধ্যে ডিম রাখতাম। প্রেশারের সমস্যা না থাকলে ডিম খাওয়া উচিত।

৯. মনে রাখতে হবে, কোভিডের প্রধান প্রতিষেধক হচ্ছে 'গরম'। ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার সর্বোপরি পরিহার করতে হবে। খাবার সব সময় গরম করে খেতে হবে। মুখ ও গলা কখনোই শুষ্ক রাখা যাবে না। কিছুক্ষন পর পরই পানি খেতে হবে।

১০. ৩ বার আদা, লবঙ্গ, তেজ পাতা দিয়ে কড়া লিকারের চা খেতে হবে। একই উপকরণ দিয়ে ফুটানো পানির ভাপ নিতে হবে এবং গড়গড়া করতে হবে। করোনাকে প্রতিহত করার এটিই সর্বোত্তম উপায় বলে আমি মনে করি। 

১১. এ সময়েও হালকা ব্যায়াম, মেডিটেশন এবং 'ব্রিদিং এক্সারসাইজ' করে যেতে হবে। মাইন্ড রিফ্রেশের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। যে কাজ গুলো করতে ভালো লাগে, সে কাজ গুলো করতে হবে। সব ধরনের নিউজ দেখা পরিহার করতে হবে!

১২. আমরা সকলেই যার যার নিজস্ব ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করবো এবং সব সময় মনে রাখতে হবে, করোনায় মৃত্যু ঝুঁকি অন্যান্য অনেক রোগের থেকে কম বরং সুস্থ হওয়ার হারই অনেক বেশি। 

সকলের জন্য শুভকামনা “

নটরডেমিয়ান অভিজিৎ সাহা 
কলেজ রোল: ১১৬৬১২০

বাবলু কুমার সাহার ফেসবুক থেকে নেয়া। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059030055999756