ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল পুনঃমূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসব কলেজ সমূহের প্রায় প্রতিটি বিভাগে গড়ে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। সোমবার (৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন থেকে পরীক্ষার ফল পুনঃমূল্যায়নের দাবি জানানো হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, গণহারে ফেল করায় তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি। উত্তরপত্র সঠিক মূল্যায়নের দাবিতে অভিযোগ করলেও এ বিষয়ে পরীক্ষা কমিটি কোন সাড়া দেননি। তাই ফল বিপর্যয়ের একটি সমাধান করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বাজায় রাখতে এবং ফল বিপর্যয়ের শিকার পেরীক্ষার্থীদের মাস্টার্স ভর্তির সুযোগ দিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া হক বলেন, আমাদের কলেজ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ২৫ জনের একজনও পাস করেনি। একই হলের এক রুমে আমরা বসেছিলাম, তাদের সবাই অকৃতকার্য। আমরা আবারও খাতার পুনঃমূল্যায়ন চাই।
বাংলা কলেজের ছাত্র আলী কদর অভিযোগ করে বলেন, সরকারি বাংলা কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ৩৬০ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। সেখান থেকে মাত্র ৭ জন পাস করেছে বাকিরা অকৃতকার্য। আমরা এতোটা বেশি খারাপ ছাত্র না যে, পরীক্ষায় অংশ নিলেই ফেল করবে। আমার মনে হয়, আমাদের খাতার ভালো মূল্যায়ন হয়নি। তাই পুনরায় মূল্যায়নের অনুরোধ জানাই।
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী মুশফিক বলেন, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আমরা। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে আমাদের অনার্স শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে এসে জানতে পারি- আমরা সবাই চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছি। আমাদের এখানে বাংলা বিভাগ থেকে ১১৩ জনের মধ্যে মাত্র ১২ জন , দর্শন বিভাগে ১১৬ জনের মধ্যে ২৮ জন, ইতিহাস বিভাগে ১৪২ জনের মধ্যে ৭১ জন এবং ইংরেজি বিভাগে ১২৬ জনের মধ্যে মাত্র ১৪ জন পাস করেছে। তিনি বলেন, ভালোভাবে আমাদের পরীক্ষার খাতার মূল্যায়ন হয়নি। আমরা মানববন্ধন থেকে এর প্রতিবাদ জানাই, পুনরায় ফল মূল্যায়নের দাবি
মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষার ফল বিপর্যয় ১০ দিনের মধ্যে সমাধানসহ অধিভুক্ত ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হল, উত্তরপত্রের যথাযথ পুনমূল্যায়ন করতে হবে, উত্তর পত্রের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণ এবং উত্তর পত্র পুনর্বিবেচনা পূবর্ক মাস্টার্স ভর্তির সুযোগ দেয়ার দাবি জানান।
গত ১১ অক্টোবর অধিভুক্ত ৭ কলেজের ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অধিকাংশ বিভাগের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করে এ পরীক্ষায়। সরকারি বাঙলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ৩৬০ জন শিক্ষার্থী অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও অকৃতকার্য করেছেন ৩৫৩ জন শিক্ষার্থীই। এ কলেজের ইংরেজি বিভাগে ১১৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিলেও পাস করেছেন মাত্র ১২ জন। ১০১ জন শিক্ষার্থী ফেল করেছেন।
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগ থেকে ২৫জন শিক্ষার্থী অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষায় অংশ নিলেও কৃতকার্য হননি কেউই। ফেল করেছেন ২৫ জনই। এ কলেজের ইংরেজি বিভাগ থেকে ৫৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩৬ জন এবং গণিত বিভাগ থেকে ৭৩ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২৬ জন শিক্ষার্থীই ফেল করেছেন।
সরকারি তিতুমীর কলেজের ইংরেজি বিভাগ থেকে ২২৫ জন শিক্ষার্থী অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও পাস করেছেন মাত্র ৩৫ জন। ফেল করেছেন ১৯০ জন শিক্ষার্থী। একই কলেজের দর্শন বিভাগ থেকে ১৫০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও ১৩৪ জনই ফেল করে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষায়। পাস করেছেন মাত্র ১৬জন।
সরকারি তিতুমীর কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২৮জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও কৃতকার্য হয় মাত্র ৭জন, অর্থনীতি বিভাগ থেকে ৬৫জন অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ২১জন এবং ইসলামী স্টাডিস বিভাগ থেকে ১২২জন অংশ নিয়ে মাত্র ৪৩ জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছেন।
ঢাকা কলেজের দর্শন বিভাগ থেকে পরীক্ষায় ১১০জন শিক্ষার্থী অংশ নিলেও ফেল করেছেন ৮২জন শিক্ষার্থী। অপরদিকে এ কলেজের রসায়ন বিভাগ থেকে ৪৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছেন মাত্র ৯জন শিক্ষার্থী।
অপরদিকে কবি নজরুল কলেজের ইংরেজি বিভাগে থেকে ১৪০জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলে ১১৪জন শিক্ষার্র্থীই ফেল করেছেন অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষায়। পাস করেছেন মাত্র ১৬জন।