সিলেটে সরকারিকৃত মদনমোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সর্ব্বানী অর্জুনকে গালাগাল ও মারধরের চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে কলেজের প্রভাষক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে। কলেজের শিক্ষকদের সামনে সমাজকর্ম বিষয়ের এই প্রভাষক তাকে গালাগাল ও মারধরের চেষ্টা করেছেন বলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা উপাধ্যক্ষ। অভিযোগ আমলে নিয়ে তা তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সরকারিকৃত মদনমোহন কলেজের সমাজকর্ম বিষয়ের প্রভাষক আবুল কাশেম সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস) সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
জানা গেছে, সম্প্রতি শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো এক লিখিত অভিযোগে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সর্ব্বানী অর্জুন দাবি করেন, গত ৫ জানুয়ারি শিক্ষক পরিষদ নির্বাচনের জরুরি সভা হচ্ছিল। সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার পরেও হঠাৎ প্রভাষক আবুল কাশেম আপত্তিকর মন্তব্য করতে প্রবেশ করেন এবং কিছু কাগজপত্র ছিড়ে ফেলে বের হয়ে যান। পরের দিন ৬ জানুয়ারি শিক্ষক মিলনায়তনে কলেজের ৪০ জন শিক্ষকের সামনে প্রভাষক আবুল কাশেম উত্তেজিত হয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে আপত্তিকর ভাষায় গালাগাল করেন ও মারমুখী হয়ে মারধরের চেষ্টা করেন। অভিযোগে এ ‘গুরুতর অসদাচরণের’ প্রতিকার চেয়েছেন উপাধ্যক্ষ।
যদিও অভিযুক্ত প্রভাষক আবুল কাশেম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়ার পরই শিক্ষক পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদকে মেয়াদ থাকার পরেও দায়িত্ব থেকে সড়িয়ে দেন। পরে ৬ জানুয়ারি হঠাৎ শিক্ষক পরিষদের নির্বাচন ডাকেন তিনি। সেখানে সব শিক্ষকরা উপস্থিত হয় নির্বাচনের নোটিশ জারি করা হয়েছিল কি না তা জানতে চান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে। সে সময় অধ্যক্ষ হঠাৎ বলতে শুরু করে আমি নাকি নোটিশটি ছিড়ে ফেলেছি, তাই শিক্ষকদের তিনি নির্বাচনের বিষয়ে জানাতে পারেননি। আমি এ কথার প্রতিবাদ করি। এ সভায় অধ্যক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সব শিক্ষকদের সামনে আমাকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন। আমাদের কলেজের ৬২ জন শিক্ষক। তাদের সাথে কথা বললেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
কলেজের সাবেক শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, অন্যান্য সরকারি কলেজে শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের মেয়াদ ২ বছর থাকে। কিন্তু আমার সময় থাকার পরও হঠাৎ করে অধ্যক্ষ আমাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। এরপর হঠাৎ এই শিক্ষক পরিষদের নির্বাচন ডাকেন। নির্বাচনে উপস্থিত হয়ে আমরা অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাই নির্বাচনের নোটিশ কই? তারপর তিনি হঠাৎ বলতে শুরু করেন একজন শিক্ষক নোটিশ ছিড়ে ফেলেছেন। তখন শিক্ষকরা প্রতিবাদ শুরু করেন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখন কলেজের বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক অধ্যক্ষ সভা সামলাতে পারেন না অভিযোগ তুলে সভা বয়কট করেন।
যদিও স্থানীয় শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রভাষক আবুল কাশেম একটু প্রতিবাদী ধরনের মানুষ। আর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সর্ব্বানী অর্জুন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা তদন্ত শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। সিলেট অঞ্চলের কলেজ শাখার সহকারী পরিচালককে অভিযোগ তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তদন্ত শেষে এ কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করবেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।