রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদকে পানিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। রোববার (৩ নভেম্বর) সকালে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সন্ধ্যায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এসেছিলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্ত শেষে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (প্রশাসন) মনজুরুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (বিআইডব্লিউ) এস এম ফেরদৌস আলমকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) নুরুল ইসলাম ও রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ওমর ফারুক।
এদিকে, শনিবার (২ নভেম্বর) রাতভর মহানগরীর বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় ২৬ জনকে আটক করে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ৷ তবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার দুপুরে অধ্যক্ষের দায়ের করা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে, এ ঘটনার মূলহোতা রাজশাহী পলিটেকনিক ছাত্রলীগ শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভ ও তার অনুসারীদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগের এ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
শনিবার রাতে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ছাত্রলীগের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই জরুরি সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রকি কুমার ঘোষ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ওই সভায় ঘটনাটি তদন্তের জন্য মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ কুমার রায়কে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তিনদিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডাকা হয়। ওই সভায় অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভসহ ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মীকে ইনস্টিটিউট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববার কারিগরি অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়। পরে এ ঘটনা তদন্তের জন তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে অধিদপ্তর।
শনিবার দুপুরে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা সৌরভকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেলা ১১টার দিকে অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে তার কার্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা হয়। দুপুরে ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ এবং তার অনুসারীরা অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে। এর পর ক্যাম্পাস মসজিদ থেকে যোহরের নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর তারা অধ্যক্ষকে টেনেহিঁচড়ে মসজিদের পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।
ঘটনাস্থলে থাকা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন ছাত্র অধ্যক্ষকে টেনেহিঁচড়ে মসজিদের পাশের পুকুরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ অধ্যক্ষের হাত ধরে টানছিল আবার কেউ পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছিলো। মুহূর্তের মধ্যেই অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়। পরে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা গিয়ে অধ্যক্ষকে পুকুর থেকে ওপরে ওঠান।
এরপর শনিবার রাতে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ বাদী হয়ে আটজনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রিমা থানায় মামলা দায়ের করেন। অধ্যক্ষের অভিযোগ করেন, প্রাণনাশের উদ্দেশেই তাকে পুকুরে ফেলা হয়। পুকুরের মধ্যে বাঁশ পুঁতে রাখা ছিল। তিনি ধারালো সেই বাঁশের ওপরে পড়লে কিংবা সাঁতার না জানলে মরেই যেতেন। এ ঘটনায় হতবম্ব হয়ে পড়েন- যোগ করেন অধ্যক্ষ।
চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অধ্যক্ষের মামলার পর শনিবার রাতভর অভিযান চলে। অভিযানে বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে মোট ২৬ জন ছাত্রকে আটক করা হয়। এর মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পাঁচজনকে শনাক্ত করা যায়। ওই পাঁচজনকে অধ্যক্ষের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা সৌরভসহ নামোল্লেখ করা আট নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।