অধ্যক্ষের নিয়োগে জালিয়াতি থাকায় পুরো কলেজের পদসৃজনের কাগজ পাঠানো হয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে। জানা যায়, সদ্য সরকারিকৃত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন ও জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অর্থ কেলেঙ্কারিসহ অনিয়মের ১৪টি অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মার্চ তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুন সরদার তদন্ত করে এসব অভিযোগের সত্যতাও পান। তবুও আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার স্ত্রী রত্না খানমও অনিয়মের মাধ্যমে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, অধ্যক্ষের কাগজে জালিয়াতি থাকায় আটকে আছে সম্প্রতি সরকারি হওয়া এ কলেজের ১১২টি পদ সৃজন প্রস্তাব। তিনি, তার স্ত্রীসহ আরও এক প্রভাষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিক না হওয়ায় ও চাকরি সরকারিকরণের কাগজপত্র ঠিক না থাকায় আটকে গেছে এ প্রস্তাব। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এ প্রস্তাব পাঠানোর কথা থাকলেও গতকাল বুধবার পর্যন্ত পাঠানো হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তবে আব্দুর রহিম তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজ সূত্রে জানা গেছে, আব্দুর রহিম ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জুলাই অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। এর আগে তিনি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার এম এ রউফ ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০ আগস্ট যোগ দেন। কর্মরত অবস্থায় ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে ৬ জুন আর্থিক কেলেঙ্কারি, শ্রেণিকক্ষে তাস খেলাসহ নয়টি অভিযোগে ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকেসহ তিন জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। কিন্তু এ তথ্য গোপন রেখে বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন তিনি। তার পূর্ববর্তী কর্মস্থল এম এ রউফ ডিগ্রি কলেজ থেকে ছাড়পত্র নেন ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর। পরবর্তী সময়ে বাঞ্ছারামপুরের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুন সরদার অধ্যক্ষ আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগের তদন্ত করে সবগুলোর সত্যতা পান। তার স্ত্রী রত্না খানম ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ নভেম্বর বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় চতুর্থ হলেও প্রায় ৯ মাস পর তাকেই নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর অধ্যক্ষের সহযোগিতায় তথ্য জালিয়াতি করে এমপিওভুক্ত হন। অধ্যক্ষ পদে যোগদানের পর আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মেরও অভিযোগ ওঠে। কলেজের দুটি অভ্যন্তরীণ হিসাব নিরীক্ষা কমিটি তার বিরুদ্ধে ৫৬ হাজার ৯৪৫ ও ২ লাখ ৭১ হজার ৮৬৯ টাকার আর্থিক অনিয়ম পান।
কলেজের সহকারী অধ্যাপক এমতিয়াজ আহম্মেদ জানান, তথ্য গোপন করে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন আব্দুর রহিম। সরকারি হওয়ার পর কলেজের ১১২ জন শিক্ষক-কর্মচারীর পদ সৃজন প্রস্তাব আটকে গেছে তার অনিয়মের জন্য।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তৌহিদ সাংবাদিকদের জানান, কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক ইয়াছিনের নিয়োগে ত্রুটি রয়েছে। অধ্যক্ষের অনিয়মের বিষয়ে আগের এসি ল্যান্ড তদন্ত করেছেন। অধ্যক্ষের স্ত্রীর নিয়োগেও সমস্যা রয়েছে।
জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম বলেন, আমি কোনো অনিয়ম বা তথ্য গোপন করিনি। স্ত্রীর নিয়োগের কাগজেও কোনো সমস্যা নেই। কলেজের কয়েকজন শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। পদ সৃজন প্রস্তাব যথাসময়ে পাঠানো হবে বলে অধ্যক্ষ জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম জানান, অধ্যক্ষ আব্দুর রহিমকে পদ সৃজন-সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে আনতে বলেছি। তার নানা অনিয়ম ও তথ্য গোপন করে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। তার বিষয়ে তদন্ত করা হবে। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।