অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

বরগুনা প্রতিনিধি |

বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মাইনুল আহসানের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে, শূন্য পদের বিপরীতে সম্মানী দেওয়া, মালামাল না কিনে স্টক রেজিস্টারে ভুয়া তালিকা জমা, স্মারক খাতার পাতায় জায়গা ফাঁকা রেখে ‘ব্যাক ডেট’ কারসাজি করা। এ ছাড়া টাকার বিনিময়ে নিরীক্ষা (অডিট) প্রতিবেদন পাল্টানোর অভিযোগও রয়েছে।

তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট খতিয়ান তুলে ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

এর আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মাইনুল আহসানের দুর্নীতি নিয়ে ২০১৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ‘স্বেচ্ছাচারী অধ্যক্ষ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর এ নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদপত্রে। এর পরও রহস্যজনক কারণে তিনি বহাল।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা জানান, সরকারি ক্রয় নীতিমালা না মেনে ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৮০০, ৪৯০০ এবং ৬৮০০ উপকোডের বরাদ্দ তিনি ইচ্ছামতো ব্যয় করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে কোনো মালামাল না কিনে ভুয়া তালিকা জমা দিয়েছেন।

ইনস্টিটিউটের পরীক্ষা বিলের কিছু কাগজপত্রের অনুলিপি ঘেঁটে দেখা গেছে, অনুমোদনের আগে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি নিরীক্ষা কমিটির স্বাক্ষর থাকার নিয়ম। বাস্তবে কমিটির কারো নাম বা স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি। ২০১৭ সালের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাবহারিক পরীক্ষার পারিশ্রমিক ভাউচার ঘেঁটে দেখা গেছে, ওয়ার্কশপ সুপার পদ না থাকলেও নাম ছাড়াই চার হাজার ৩২২ টাকা পারিশ্রমিক পরিশোধ দেখানো হয়েছে। একইভাবে ইলেকট্রনিকস টেকনোলজি এবং এনভায়রনমেন্টাল টেকনোলজি বিভাগে কোনো কর্মকর্তা না থাকলেও বিপরীতে হাজার হাজার টাকা পারিশ্রমিক দেখানো হয়েছে।

অন্যদিকে ইনস্টিটিউটের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কাজে মেসার্স বায়েজিদ অ্যান্ড কোং, মেসার্স হানিফ কন্সট্রাকশন এবং হাসানুজ্জামানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। পিপিআর ২০০৮-এর ধারা ৪৮(২) (অ)-এর নিয়মানুযায়ী, ঠিকাদার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা যাচাই করতে হয়। অথচ যাচাই-বাছাই ছাড়া তিন প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১৪ লাখ টাকার আসবাব ও স্টেশনারি মাল সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়েছে।

জেলা হিসাব নিয়ন্ত্রক অফিসে সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১০ জুন ব্যয় দেখিয়ে মেসার্স বায়েজিদ অ্যান্ড কোং এবং হাসানুজ্জামানকে পৃথক পাঁচটি চেকের মাধ্যমে পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার জানান, দরপত্র ছাড়া এবং কাজ না করে এসব বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত সম্মানী ভাতা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নেওয়ার নিয়ম। তিনি ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে অতিরিক্ত সম্মানী নিয়েছেন ৫৬ হাজার টাকা। একই অর্থবছরে ৫৪ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩৭ টাকা খাতওয়ারি বণ্টন না করে খরচ করেছেন। ইনস্টিটিউটের ক্যান্টিন ইজারা না দিয়ে পছন্দের লোকজন দিয়ে চালাচ্ছেন। অধ্যক্ষের বাংলো ব্যবহার না করে রাত যাপন করেন একাডেমিক ভবনের একটি কক্ষে।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মঞ্জুরি এড়াতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাউচারে ৩৯ হাজার ৯৮০ টাকা খরচ করেছেন, যা পুরোপুরি নীতিমালা পরিপন্থী। সাতজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকা সত্ত্বেও একই অর্থবছরে আগাছা পরিষ্কার বিল দেখিয়ে ১০ হাজার ৬৬০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিযোগকারী জানান, ইনস্টিটিউটের নামে বরাদ্দ গাড়ি পরীক্ষার সময় ব্যবহৃত হয়। অথচ যাতায়াত ভাড়া দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেন অধ্যক্ষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিযোগকারী বলেন, ‘২০১৪-১৫ অর্থবছরে ইনস্টিটিউটে অডিট হয়েছিল। পর্যবেক্ষণে অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়লেও টাকার বিনিময়ে অনাপত্তির সনদ নেওয়া হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী জানান, প্রতিবছর ভর্তির সময় সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৪০০ টাকা হারে জামানত নেওয়া হয়। নিয়মানুযায়ী তা শিক্ষা শেষে প্রত্যেককে ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীকে তা ফেরত দেওয়া হয় না। এ ছাড়া ভর্তির সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ টাকা নেওয়া হয়, যার কোনো রসিদ দেওয়া হয় না।

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মাইনুল আহসান।

তিনি বলেন, ‘ওয়ার্কশপ সুপার পদে কোনো জনবল না থাকলেও কাউকে না কাউকে দিয়ে ওয়ার্কশপ চালাতে হয়। তাই তাদের নামে বিল দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘অনেক ঠিকাদার আছেন যাঁরা কাজ পাননি, তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে এসব অভিযোগ করছেন।’

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057649612426758