মাগুরা সদরের আঠারখাদা ইউনিয়নের কৃষ্ণবিলা এলাকায় বনশ্রী রবীন্দ্র স্মরণী কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ নানা পেশার মানুষের নামে নিয়োগ ও টাকার বিনিময়ে ভুয়া হাজিরা দেখানোসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একটি তদন্ত দলও সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। অধ্যক্ষ কালি চরণ বিশ্বাস এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় প্রকাশ্যে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারছে না।
খালেদ নূর, সীমান্ত ইসলাম, রত্না বিশ্বাসসহ ওই কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগে জানান, কলেজের অধ্যক্ষ কালি চরণ বিশ্বাস নিজে টাকা দিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ নিয়েছেন। এরপর তিনি মোটা টাকার বিনিময়ে কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে আহাদ আলী, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন বিষয়ে নিখিল বিশ্বাস ও জসিম উদ্দিন নামে একজনকে যুক্তিবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু নিয়োগের দীর্ঘদিন পরও ওই শিক্ষকরা কখনোই কলেজে আসেন না। অথচ প্রধান শিক্ষক টাকার বিনিময়ে ওই শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দেখিয়ে দেন। এরমধ্যে আহাদ আলী কয়েকবছর ধরে পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদহের শৈলকুপার ওমেদপুর ইউনিয়নের তামিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। অন্যদিকে নিখিল বিশ্বাস মানিকগঞ্জের একটি এনজিও ও জসিম উদ্দিন মাগুরায় একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে চাকরি করছেন। কলেজে ওই সকল শিক্ষকদের ক্লাসগুলো কখনোই হয় না। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানায় তারা।
ছাত্র-ছাত্রীরা আরও জানায়, কলেজটি গ্রামের ভেতরে হলেও এ বছরও ১৬৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। অনেক সম্ভবনা থাকার পরও কলেজটির অধ্যক্ষের দুর্নীতির ফলে দিনদিন পিছিয়ে পড়ছে। কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা টিউশন ফি, ভর্তি, ফরম ফিলআপ, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফি সবই প্রধান শিক্ষক একাই পকেটস্থ করেন। এর কোনো খরচের হিসাব তিনি কলেজেই রাখেন না। কলেজের অন্য শিক্ষকদের কোন টাকা পয়সা না দেয়ায় তারাও পড়ানোর কাজে ঠিকমতো মনযোগী হন না। অথচ শিক্ষার্থীরা ঠিকই মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা এ অবস্থার উত্তোরণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে ওই তিন শিক্ষক তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে থাকার কথা স্বীকার করে জানান, কলেজে নিয়োগ নিয়ে রেখেছি। সরকার এমপিও দিলে আর কলেজটি এমপিওভুক্ত হলে এখনকার চাকরি ছেড়ে কলেজে যোগদান করব।
তবে এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ কালি চরণ বিশ্বাস দাবি করেন, ওই তিন শিক্ষক নিয়মিত কলেজে আসেন। এমনকি যেদিন জেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা ভিজিট করেছেন সেদিনেও তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই শিক্ষকরা অন্য কোন জায়গায় কাজ করেন এ বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান এ অধ্যক্ষ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় তিনি অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে মাগুরার সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম মাজেদুর রহমান জানান, আমরা ঝটিকা সফরে কলেজটিতে গিয়ে সেখানে ওই তিন শিক্ষককে অনুপস্থিত পেয়েছি। একই সঙ্গে তারা যে বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেন তারও প্রমাণ পেয়েছি। অধ্যক্ষ অনৈতিক লেনদেন নিয়ে তাদেরকে কলেজে উপস্থিত দেখিয়ে কাজ চালানোর বিষয়টিও আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। যেহেতু এমপিও না হওয়ায় কলেজে কোন সরকারি সহায়তা দেয়া হয় না তাই আমরা বিষয়টিকে অভ্যন্তরীণভাবে সমাধানের নির্দেশ দিয়েছি।