রংপুরের সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের প্রধান সহকারী মো. সায়েম রহমানকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে কলেজের মাস্টাররোলের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী প্রধান সহকারীর অভিযোগ কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক চিন্ময় বাড়ৈর সামনেই তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগে দিয়ে এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন তিনি।
গত ২৯ জুন সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বেসরকারি কর্মচারীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন অভিযোগ করেছেন সায়েম রহমান। তিনি অভিযোগে জানান, গাড়ী চালক সেলিম বক্স, অফিস সহায়ক সৈয়দ নাসির আলী, নুর মোহাম্মদ, মো. রফিকুল ইসলাম, সৈয়দ রওশন আলী, মো. আকতারুল ইসলাম, মো. আব্দুল মতিন (অফিস সহকারী), মো. মাহবুব আলম মাসুদ (সেমিনার সহকারী) ২০ থেকে ২৫ জন বেসরকারি কর্মচারী আমার অফিস কক্ষে প্রবেশ করে আমাকে চড়া গলায় বলেন, আপনি কেন অধ্যক্ষ স্যারকে বেসরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে নিষেধ করেছেন। উত্তরে আমি বলি, এ বিষয়ে স্যারকে নিষেধ করিনি। তখন তারা আমার ওপর আরও চড়াও হয় ও এক পর্যায়ে মারধর শুরু করে।
অভিযোগে সায়েম আরও বলেন, বিষয়টি প্রমাণ করতে আমি চেয়ার থেকে উঠে অধ্যক্ষ স্যারের রুমের দিকে এগিয়ে যাই। তখন নুর মোহাম্মদ, নাসির হোসেন, রওশন আলী, সেলিম বক্স, মো. রফিকুল ইসলাম আমাকে পেছন থেকে টেনে ধরে এবং ধস্তাধস্তি করতে থাকে ও আমার পরনের শার্টটির পেছর দিকে ছিঁড়ে ফেলে। আমি অনেক কষ্টে প্রিন্সিপাল স্যারের কক্ষে প্রবেশ করি। তখন স্যারের কক্ষে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোজাফফার রহমান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। আমি প্রিন্সিপাল স্যারকে বিষয়টি বলার চেষ্টা করি। তিনি আমার কথায় কর্ণপাত করেননি। তখন কর্মচারীরা অধ্যক্ষ মহোদয়ের সামনে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এরপর তারা আমার রুমে তালা লাগিয়ে দেয়া হয় এবং আমার অপসারণ চেয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
সায়েম রহমান আরও জানান, পরে আমি অধ্যক্ষকে জানালে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। উল্টো আমার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ এনে শোকজ করেছেন, জানান ভুক্তভোগী কর্মচারী।
তিনি আরও বলেন, আমাকে যখন মারধর করছে তখন অধ্যক্ষ শুধু দেখেছেন। পরবর্তী সময়ে সুবিচার দাবি করলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি রংপুর কোতয়ালী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে সুবিচার চেয়েছি।
জানা গেছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মানসিক নিপীড়ন ও মহিলা কর্মচারীদের সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগে গত ২৯ জুন প্রধান সহকারী সায়েম রহমানের ব্যাখ্যা তলব করেন অধ্যক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক চিন্ময় বাড়ৈ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তিনি একজন দুর্নীতি পরায়ন কর্মচারী। আগের অধ্যক্ষের সকল অপকর্মের সাথে তিনি জড়িত। কলেজের দুজন মহিলা কর্মচারীর সাথে তিনি অশালীন আচরণ করেছেন। তাই অন্যান্য কর্মচারীরা ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। তার সাথে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে হয়ত। কিন্তু আমার সামনে মারধর করার অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, কর্মচারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধান সহকারী মো. সায়েম রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তাকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া তার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমি জানিয়েছি।
চিন্ময় বাড়ৈর বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ রয়েছে।