অনলাইন শিক্ষা নিয়ে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে রুটিন ছাড়া। কোন কোন ক্লাস রাতেও নেয়া হচ্ছে। এক শ্রেণীর শিক্ষক নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো ক্লাস নিচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থীই রুটিনবিহীন ক্লাসের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে চলছে সেটা সরকার মনিটর করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের শিক্ষা-বাণিজ্য অব্যাহত রাখার জন্য অনলাইন ক্লাস তড়িঘড়ি করে চালু করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইন ক্লাস প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করতে শুরু থেকেই ব্যর্থ হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীই এখনও অনলাইন ক্লাসের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি। অনলাইন ক্লাসে অংশ না নিলে বা পরীক্ষা না দিলে সেমিস্টার মিস হতে পারে এমন আশঙ্কায় অনেক শিক্ষার্থী অনিচ্ছা সত্ত্বেও এতে অংশ নিচ্ছে। তবে শিক্ষকদের খামখেয়ালির কারণে এর প্রকৃত সুবিধা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের খামখেয়ালির শিকার হয়েছে, এখন দায়িত্বজ্ঞানহীন এক শ্রেণীর শিক্ষকের খামখেয়ালির শিকার হচ্ছে।
নানা আপত্তি সত্ত্বেও সরকার অনলাইন ক্লাস নেয়ার অনুমতি দিয়েছে। ইউজিসি একটি গাইডলাইন তৈরি করেই দায়িত্ব সেরেছে। সব বিশ্ববিদ্যালয় গাইডলাইন মেনে চলছে কিনা সেটা নিশ্চিত করছে না। শিক্ষকরা সময়মতো ক্লাস নিচ্ছেন কিনা, মানসম্মত পাঠদান করা হচ্ছে কিনা সেটা দেখভাল করার যেন কেউ নেই। ফ্রি স্টাইলে অনলাইন ক্লাস চলছে। একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অনলাইন ক্লাসের বাইরেই রয়ে গেছে। তাদের ভবিষ্যৎ কী সেটা অনিশ্চিত। যারা মহামারী চলাকালীন আর্থিক দুরবস্থার মধ্যেও ফোন বা কম্পিউটার জোগাড় করে, ইন্টারনেটের পেছনে টাকা খরচ করে অনলাইন ক্লাসে হাজির হচ্ছে তাদের অন্তত সময়মতো পাঠ দেয়া হোক।
আমরা বলতে চাই, অনলাইন ক্লাস নিতে হবে রুটিন মেনে। রুটিনবিহীন ক্লাস নেয়া হলে অনেক শিক্ষার্থীই পাঠবঞ্চিত হয়। এটা কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রুটিন মেনে ক্লাস নিচ্ছে কিনা সেটা ইউজিসিকে নিয়মিত মনিটর করতে হবে। রুটিনের বাইরে গিয়ে কোন শিক্ষক যেন তার খেয়াল-খুশিমতো সময়সূচি পরিবর্তন না করে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কঠোর অবস্থান নিতে হবে। নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষার বড় একটি অনুষঙ্গ। শিক্ষকরা যদি নিয়মানুবর্র্তী না হন তবে শিক্ষার্থীরা নিয়মানুবর্তী হবে কীভাবে। অনলাইন ক্লাস নিয়ে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এসব অভিযোগের সুরাহা করতে হবে।