শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে দেশের সবচাইতে পুরনো ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সব ধরণের কার্যক্রম অনলাইনের আওতায় আসছে। এটি চালু হলে যে কোনও ধরণের সেবাপ্রত্যাশীদের রাজধানীর বকশিবাজারে অবস্থিত ঢাকা শিক্ষাবোর্ড অফিসে আসতে হবে না। অনলাইনের মাধ্যমে ৪০ ধরণের সেবা নিতে পারবেন। তবে, নাম ও বয়স সংশোধনের জন্য অবশ্যই প্রার্থীকে বোর্ড অফিসে যেতে হবে। বুধবার (৩০ মে) দৈনিক শিক্ষাডটকম’র সঙ্গে আলাপচারিতায় এতথ্য জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার নব নিযুক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক।
বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান পদের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জিয়াউল হক বলেন, ঢাকা বোর্ড দেশের সবচেয়ে পুরনো এবং প্রথম শিক্ষা বোর্ড। তাই ঢাকা বোর্ডের দায়িত্ব এবং দায়ভার অনেক বেশি। প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডেরই নিজস্ব কিছু দায়িত্ব ও দায়ভার আছে। ঢাকা বোর্ড যেহেতু প্রথম বোর্ড, একে মাদারবোর্ড হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। ফলে এর দায়িত্বটা অনেক।
আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, এ দায়িত্ববোধ থেকে আমাদের মূল কাজ হচ্ছে সেবা দেয়া। আমরা চাই আমাদের সেবাগ্রহিতারা যেন খুব দ্রুত এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের সেবাগুলো নিতে পারেন। এ জন্য আমরা বিশেষ করে আমাদের সব কার্যক্রম আগামী এক মাসের মধ্যে অনলাইনে নিয়ে আসবো। নথির কাজ দ্রুত নিষ্পন্ন করার ক্ষেত্রে আমরা ই-ফাইলিং শুরু করেছি।
চেয়ারম্যান পদে বসেই প্রশ্নফাঁসরোধে ক্যারিশমা দেখানো জিয়াউল হক বলেন, বোর্ড প্রায় ৪০ ধরণের সেবা দেয়। এই সব সেবা আমরা অনলাইনের মাধ্যমে দিবো যেন কোনও সেবাগ্রহীতাকে সেবার জন্য কষ্ট করে বোর্ড অফিসে আসতে না হয়। সরাসরি অনলাইনে এ সেবা দেয়া হবে। শুধু নাম এবং বয়স সংশোধনের জন্য বোর্ডে আসতে হবে। এছাড়া স্কুল কলেজের দৈনন্দিন সেবাগুলোর জন্য বোর্ডে আসতে হবে না। সবকিছু প্রস্তুত আছে। ঈদের পর সবধরণের অনলাইন কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বোর্ড চেয়ারম্যান।
একাদশে ভর্তির আবেদনে জালিয়াতির বিষয়ে দৈনিকশিক্ষা ডটকমের এক প্রশ্নের জবাবে জিয়াউল হক বলেন, এটা খুব দুঃখজনক। কিছু প্রতারক এগুলো করে। তবে এরা শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। একজন শিক্ষার্থীর রোল নম্বর রেজিস্ট্রেশন নম্বর যদি কেউ জানেন তাহলে তার নামে মেসেজ করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদেরও ব্যবস্থা আছে। যদি আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তার আবেদনটি বাতিল করে দেই এবং নতুনভাবে আবেদন করতে পারে।
চেয়ারম্যান বলেন, এবছর দিয়ে ৪র্থ বারের মত অনলাইনে একাদশে ভর্তির কার্যক্রম চলছে। তবে আশার বিষয় হচ্ছে, গত তিন বছর ভর্তি প্রতারণা হারে এর পরিমানটা ছিলো, এ বছর কিন্তু সে হারে নেই। একেবারেই কমে গেছে।
উল্লেখ্য, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের নির্ধারিত তারিখের আগের রাতেই নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজনদের ফল জেনে নিতেন কতিপয় আমলা ও শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা। রেওয়াজ অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেন। এরপর পরীক্ষার্থীরা জানতে পারেন। কিন্তু কয়েকবছর আগে ঢাকাবোর্ডের একজন চেয়ারম্যানের আত্মীয়ের একটি টেলিভিশনকে আগেভাগেই সব তথ্য দিয়ে দেয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২০ মার্চ ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন জিয়াউল হক। ৬ মে এসএসসির ফল প্রকাশ হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে কেউই ফল জানতে পারেননি। নতুন চেয়ারম্যানের এ কঠোর পদক্ষেপে সুন্দর মনের অধিকারী সবাই খুশী।