অনশন ভাঙলেন ননএমপিও শিক্ষকরা (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এমপিওভুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের উত্তর পাশের সড়কে অনশনরত ননএমপিও শিক্ষকরা অনশন ভেঙেছেন। বুধবার (১১ জুলাই) দুপুরে অবস্থান কর্মসূচির ৩২তম ও অনশনের ১৭তম দিনে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান নন এমপিও শিক্ষকদের অনশন ভাঙ্গান। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ২৫ জুন থেকে আমরণ অনশন করেন নন এমপিও শিক্ষকরা।  পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজও তারা রাজপথে আদায় ও ভুকা মিছিল করেন ননএমপিও শিক্ষকরা।  

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কয়েকটি শর্ত দিয়ে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে আলাদা বরাদ্দ রাখা হবে বলে বাজেটের আগে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু বাজেটে এমপিও নিয়ে কোনো ঘোষণা না থাকায় ফের আন্দোলনে নামেন নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা।

তাদের আন্দোলনের মধ্যে গত ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিওভুক্তির কার্যক্রম দ্রুত শুরুর কথা জানান সংসদে।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্বগ্রহণের পরই শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সারাদেশে এক হাজার ৬২৪টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।”

অবশিষ্ট নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করতে ইতোমধ্যে ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা ২০১৮’ জারির কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

 শেখ হাসিনা বলেন, “এই নীতিমালা অনুসরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ লক্ষ্যে অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা এবং বিধিমতে প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের জন্য পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।”

অনশনস্থলে এসে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে সমস্যার সমাধানের আশা দেখতে পাই। আশা করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমন উপায় বের করবে, যাতে এ অবস্থার সমাধান হয়।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অনশনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের একজন সহকর্মী হিসেবে উপস্থিত হয়েছি। আমি মনে করি, আপনারা দীর্ঘদিন ধরে যে আমরণ অনশন করে আসছেন, তাতে বাংলাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। সবাই চাইছেন অনশনে থেকে আর যেন ক্ষতি না হয়। সে জন্য সবার আবেদন, অনশন ভঙ্গ করে যেন কর্মস্থলে ফিরে যান।’

ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ ও পরিবার-পরিজনের কথা ভেবে তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানান। এরপর অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শিক্ষক-কর্মচারীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান। এসময়  সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি সারওয়ার আলী উপস্থিত ছিলেন।

অনশন ভাঙ্গার আগে ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, “আমরা জানি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছেন তার বাস্তবায়ন করবেন। জাতীয় অধ্যাপকসহ যে নেতৃবৃন্দ এসেছেন তাদের প্রতি সম্মান রেখে তারা যা বলবেন তাই করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে।”

এ সময় ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, “আমরা জানি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছেন তার বাস্তবায়ন করবেন। জাতীয় অধ্যাপকসহ যে নেতৃবৃন্দ এসেছেন তাদের প্রতি সম্মান রেখে তারা যা বলবেন তাই করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে।”

এ সময় ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায় বলেন, “আমাদের কষ্ট, শিক্ষকদের কষ্টের সাথে সামিল হয়ে জাতির বিবেক এসে আমাদের কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। আমরা যে দাবি নিয়ে এসেছি স্যারদের উপস্থিতিতে সে দাবিও পূরণ হবে। দাবিপূরণ হলে আমরা ধন্য হব।”   

 

অনশন ভাঙ্গার আগে এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে  বুধবার (১১ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সচিবালয়ে ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ফলপ্রসু বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে অনশনরত শিক্ষকদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ না করলেও সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে  জানিয়েছেন তিনি।  এমপিও নীতিমালার বিষয়ে শিক্ষক নেতাদের আপত্তির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এমপিও নীতিমালা কোনো ধর্ম গ্রন্থ নয়, যে এটি সংশোধন করা যাবে না। বৈঠকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য মন্ত্রণালয়ের দুটি কমিটি কাজ করছে। যে সব শিক্ষক এমপিওভুক্ত হবেন তারা জুলাই মাস থেকেই বেতন প্রাপ্য হবেন।

ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায়ের নেতৃত্বে পাঁচ শিক্ষক নেতা  শিক্ষা মন্ত্রীর দপ্তরে যান। অন্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি মো: শফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি মাওলানা তোহিরুল ইসলাম ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আনোয়ার হোসেন

অনশনে অংশ নেয়া শিক্ষকরা বলেন, সারা দেশে প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর ৮০ হাজার শিক্ষক কর্মচারী বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে আসছেন। তারা পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণ, চিকিৎসা দিতে না পেরে নিজেরাই বোঝা হয়ে গেছেন। অপরদিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও নেই। একটি স্বাধীন দেশে জাতি গড়ার কারিগররা সরকারের অবিবেচক সিদ্ধান্তের কারণে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ রাষ্ট্র নীরব, মনে হচ্ছে এ শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই।

 বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৫ লাখ। তাদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া ননএমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরে আছে ২ হাজারেরও বেশি ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলে এবং ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করলে মাসে আরও প্রায় দেড়শ কোটি টাকা খরচ হবে। যদিও সরকারের পরিকল্পনা হলো হাজারখানেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002485990524292