অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় টেস্টে ফেল ৯ ছাত্রী

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষার হলে দেড় ঘণ্টা খাতা আটকে রেখে একই শ্রেণির নয় ছাত্রীকে ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ‘অনৈতিক প্রস্তাবে’ রাজি না হওয়ায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষক প্রশান্ত বড়ুয়া গণিত বিষয়ের খাতা আটকে রেখে পরীক্ষায় তাদের ফেল করিয়ে দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরের কৃষ্ণকুমারী সিটি করপোরেশন স্কুলে।

ছাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষক প্রশান্ত বড়ুয়াকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে। কিন্তু ওই নয় ছাত্রীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি।

নয় ছাত্রীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাদের অভিভাবকরাও।

এর আগে মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) ভুক্তভোগী নয় ছাত্রী তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দেন। তারা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ ও আসন্ন ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়ার আবেদন জানান।

আবেদনের প্রেক্ষিতে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং নয় ছাত্রীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কৃষ্ণকুমারী স্কুলের শিক্ষক প্রশান্ত বড়ুয়া দশম শ্রেণির ছাত্রীদের বিভিন্ন সময় ‘অনৈতিক প্রস্তাব’ দিয়েছেন। মোবাইল নম্বরসহ ছাত্রীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এ সংযুক্ত হতে আগ্রহ দেখান। পরবর্তীতে দশম শ্রেণির ছাত্রীরা স্কুলের প্রধান শিক্ষককে এসব বিষয়ে অভিযোগ করলে, ওই শিক্ষককে দশম শ্রেণিতে পাঠদান থেকে বিরত রাখা হয়।

এরপর থেকে তিনি দশম শ্রেণির বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন এবং প্রায় সময় পরীক্ষায় নম্বর ও ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান।

সম্প্রতি ওই শিক্ষার্থীদের এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষার গণিত বিষয়ে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ২০৪ নম্বর কক্ষে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষক প্রশান্ত বড়ুয়া। তখন তিনি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ পরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে ৯ ছাত্রীর পরীক্ষার খাতা নিয়ে নেন। পরে পরীক্ষা শেষ হওয়ার মাত্র ১০ মিনিট আগে খাতা ফিরিয়ে দেন।

ভুক্তভোগী নয় ছাত্রী পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়েই বিষয়টি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আহমেদ হোসেনকে অবহিত করেন। ওই সময় প্রধান শিক্ষক বিষয়টি দেখবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন।

এদিকে, নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফলে অন্যান্য সব বিষয়ে পাশ করলেও ওই নয় ছাত্রী গণিত বিষয়ে ফেল হওয়ায় আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়।

দিদারুল আলম নামে এক ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে  বলেন, ‘একজন শিক্ষক হয়ে যদি ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব ও অশোভন আচরণ করেন, তা কি মেনে নেওয়া যায়? ওই শিক্ষকের কারণে আমার মেয়ের এতো বছরের সাধনা কি নষ্ট হয়ে যাবে? সে কি এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে না? এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা  বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিটি মেয়র সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা দেখছি।’

নয় শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ যদি তাদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেন, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম  বলেন, ‘নয় ছাত্রীর অভিযোগের বিষয়টি জেনেছি। সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রাধীন স্কুলগুলোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনেরই। বিষয়টি সুরাহা করতে হবে সিটি করপোরেশনকেই। ওই শিক্ষকের কারণে যদি নয় ছাত্রী নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করে থাকে, তাহলে উপায় বের করে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’

কৃষ্ণকুমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আহমদ হোসেন  বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আগেও ছাত্রীরা অভিযোগ দিয়েছিলো। সর্বশেষ যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এসেছে সে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশনের নির্দেশনায় ওই শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।’

কাজী মো. মোসলেম উদ্দিন নামে ভুক্তভোগী আরেক ছাত্রীর বাবা  বলেন, ‘শিক্ষক সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু এই শিক্ষকের কারণে মেয়েদের শিক্ষাজীবন তো নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই ৩ ঘণ্টার পরীক্ষায় দেড় ঘণ্টা খাতা আটকে রাখায় এই নয়জন ছাত্রী নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল হয়েছে। অন্যসব বিষয়ে পাস করেছে।’

তিনি আরও জানান, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। প্রয়োজনে নয় শিক্ষার্থীদের পুনরায় ওই বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ে পাস করা সাপেক্ষে এসএসসি পরীক্ষায় সুযোগ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রার্থনা করছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক প্রশান্ত বড়ুয়ার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কল করা হলে তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030639171600342