অবশেষে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থে স্থান পেল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। পুনঃমুদ্রিত বইয়ের কয়েকটি অধ্যায়ে এসব ছবি অন্তর্ভুক্ত করেছে রিভিউ কমিটি। এর আগে প্রথমবারের মতো মুদ্রিত এই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ছবি না ছাপানো হলেও স্থান পেয়েছিল পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি। বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রন্থটি বাজারজাত করা থেকে বিরত থাকেন। পাশাপাশি একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন। ওই রিভিউ কমিটি বঙ্গবন্ধুর ছবি অন্তর্ভুক্ত করে গ্রন্থটি পুনরায় প্রকাশ করেন। প্রকাশিত গ্রন্থটি বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে দাখিল করা হয়।
গ্রন্থটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুর তিনটি ছবি ছাপানো হয়েছে। এর মধ্যে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক: সূচনা পর্ব’ অধ্যায়-১ এ জাতির পিতার একটি পোট্রেট এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) স্বাধীনতাকামী লক্ষ লক্ষ মানুষের উদ্দেশ্যে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের সেই ছবি রয়েছে। এছাড়া ‘অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থার পুনর্গঠন (১৯৭২-১৯৭৫)’- শীর্ষক তৃতীয় অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি ছবি স্থান দেয়া হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধুর নিকট বাংলাদেশের প্রথম কারেন্সি নোট ও মুদ্রা হস্তান্তর করছেন ব্যাংকের গভর্নর আনম হামিদুল্লাহ। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ও শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
এর আগে প্রথম মুদ্রিত বইয়ে জাতির পিতার ছবি না ছাপানোয় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল হাইকোর্ট। তখন আদালত বলেছেন, প্রথম মুদ্রিত বইয়ে জাতির পিতার ছবি না ছাপানো অমার্জনীয় ভুল। তার ছবি খুঁজে না পাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত। গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের আইনজীবী মো. আজিজ উল্লাহ ইমন বলেন, ইতিহাস সংক্রান্ত প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থটি নোটিস দিয়ে বাতিল করা হয়েছে। নতুন প্রকাশিত বইতে বঙ্গবন্ধুর একাধিক ছবি ও বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত বছরের ২৫ মার্চ ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন হয়। পরবর্তীকালে ইতিহাস বিকৃতির বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় বইটির বিতরণ বন্ধ রাখা হয়। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। ওই কমিটি তার প্রতিবেদনে বলেন, গ্রন্থে জাতির পিতার ছবি না ছাপানোয় ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে।
ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি পাননি শুভঙ্কর সাহা
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিহাস সংক্রান্ত গ্রন্থের সম্পাদক ব্যাংকটির সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়নি হাইকোর্ট। আগামী ৯ এপ্রিল তাকে আবারো আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। তলব আদেশে মঙ্গলবার হাইকোর্টে হাজির হন তিনি। একই সঙ্গে উক্ত গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ছবি না ছাপানোয় দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আদালত বলেন, আইয়ুব খান ও মোনায়েম খানের ছবি দিলেন অথচ বঙ্গবন্ধুর একটা ছবিও পেলেন না? রিটকারীর আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, ক্ষমা চেয়ে ইতিহাস বিকৃতির দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।