ভ্যান চালক বাবার দৈনিক আয় গড়ে দু’শ টাকা। ভিটা-বাড়ির ৪ শতক জমি ছাড়া কোন সম্পদ নেই। তার উপরে ঋণের কিস্তির বোঝা। সংসারের এমন অভাব-অনটনের সাথে নিত্য লড়াই করে এসএসসি পরীক্ষায় সেরা সাফল্য ছিনিয়ে এনেছে মো: সাজ্জাদ হোসেন।
সাজ্জাদ চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার স্কুলতো বটেই, আশেপাশের কয়েকটি স্কুলের মধ্যে তার ফলই সেরা। গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া সাজ্জাদের ইচ্ছে ভবিষ্যতে একজন প্রকৌশলী হওয়ার। কিন্তু এতোদিন কোনমতে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সাজ্জাদ তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সাজ্জাদের বাড়ি সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামে। মঙ্গলবার (৭মে) সকালে সেই গ্রামের বাড়ি গেলে দৈনিক শিক্ষাকে তার বাবা খলিলুর রহমান জানান, ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় অনেক ভালো সাজ্জাদ। অভাবের সংসারে ছেলের লেখাপড়ার খরচ ঠিকমত জোগাড় করতে পারেননি। তারপরেও সাজ্জাদ এ প্লাস পেয়ে সবার মুখ উজ্জ্বল করেছে। তিনি আরো জানান, তার একটি ভ্যানের আয়েই সংসার চলে। সব দিন সমান আয় হয়না। ধার দেনা করে চলতে গিয়ে বাড়ে ঋণের বোঝা। ভ্যান কেনা, দেনা শোধ, সংসারের অভাব মেটানো আর ছেলের খরচ জোগাতে দুই দফায় ইসলামী ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা ও আশা থেকে ৪৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। সপ্তাহে ১ হাজার ৭৫০ টাকা করে কিস্তি দিতে হয়। এই টাকা দেয়ার পর আয়ের সামান্য অংশ থাকে। সেটা দিয়েই সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করতে হয়।
সাজ্জাদের মা শামছুন্নাহার দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘হামরা গরীম মানুষ। ছৈলকে কেমন করি লেখাপড়া শিখামো, সেই চিন্তায় হামার নিন্দ(ঘুম) হারাম হইছে।
সাজ্জাদ জানায়, অভাবে বাড়িতে অনেক দিন না না খেয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে আমাকে। টাকার অভাবে ভালো মানের শিক্ষকের কাছে পড়তে পারিনি। বাড়ির পাশের কলেজের ছাত্র আসাদুজ্জামান ভাইয়ের কাছে অল্প কিছু টাকা দিয়ে কয়েকটি বিষয় পড়েছি। তাও বাকী পড়েছে টিউশনির ফি। টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় বই কিনতে পারিনি। বাকীতে বই কিনেছি। একজন প্রতিবেশী দুটি বই দিয়েছিলেন।
মূলত একাগ্রতা দিয়ে পড়াশোনা করে তার এই সাফল্য এসেছে বলে জানায় সাজ্জাদ। ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হবার ইচ্ছে প্রকাশ করে সাজ্জাদ জানায়, যত বাঁধাই আসুক না কেন, লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই আমি।
সাজ্জাদের স্কুল কাঁঠালবাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন জানান, সাজ্জাদ অত্যন্ত মেধাবী ছেলে। প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে সে এলাকার সবার মুখ উজ্জ্বল করবে।