উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে ‘অভিজাত’ বেকারে পরিণত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে নীতি-নির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে তাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, “বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বা সার্কুলার জারি করে দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। অভিভাবকগণ অনেক কষ্ট করে তাদের ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষার ব্যয় বহন করে। তাই উচ্চ শিক্ষা নিতে এসে তারা যাতে শিক্ষিত ও অভিজাত বেকারে পরিণত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”
সরকারি চাকরিতে এক হাজার ৯০৩টি পদে নিয়োগে ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ‘নবম ইউজিসি স্বর্ণপদক প্রদান’ অনুষ্ঠানে একথা বলেন রাষ্ট্রপ্রধান।
শিক্ষার প্রসারে সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দেড়শ’র উপরে। এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৯ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়ার পর বিশ্বে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে।
“এটি একটি বিশাল অর্জন। দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র এখন পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বিস্তৃত। সরকারের যুগোপযোগী শিক্ষানীতি, শিক্ষায় অগ্রাধিকারসহ সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে আমি মনে করি।”
তবে সংখ্যা বৃদ্ধিতে সন্তুষ্ট না হয়ে উচ্চ শিক্ষার গুণগতমান বাড়ানোর উপর জোর দেন রাষ্ট্রপতি।
“আমাদের গুণগত উচ্চ শিক্ষার ওপর সমধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে, যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সাথে এগিয়ে যেতে পারে এবং নিজেদের স্থান করে নিতে পারে।”
এক্ষেত্রে ইউজিসিকে আরও উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
আবদুল হামিদ বলেন, “সময় এবং যুগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ব্যাপক ভিত্তিতে বেড়েছে। শিক্ষার্থীরাও এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে। মেয়াদ শেষে ডিগ্রিও পাচ্ছে।
“কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির মান নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ, অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধাসহ শিক্ষক স্বল্পতার কারণে মানসম্পন্ন পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। গবেষণা ও গবেষকদের মান নিয়েও ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাই উচ্চশিক্ষার প্রতিটি স্তরে মূল্যায়ন ও তত্ত্বাবধান জোরদার করতে হবে। এক্ষেত্রে ইউজিসিকে শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে।”
উচ্চ শিক্ষার প্রসারে বেসরকারি খাতের ভূমিকার প্রশংসা করলেও শিক্ষার নামে বাণিজ্যের বিপক্ষে নিজের অবস্থান জানান আবদুল হামিদ।
অনুষ্ঠানে ২০১৬ এবং ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ইউজিসি অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ৩৫ জনকে পদক দেন আবদুল হামিদ।
ইউজিসি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মৌলিক গবেষণা ও প্রকাশনায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন শাখায় প্রবন্ধ ও পুস্তকের জন্য এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।
ইউজিসির চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইউজিসির সদস্য দিল আফরোজা বেগম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশীদ প্রমুখ।