অযত্নে থাকা ঢাবির সেই শহীদ মিনারে হবে “শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ”

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

স্বাধীনতার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও সেখানেই আটকে থাকে এর কার্যক্রম। মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মারক সেই উদ্যোগ ৪৭ বছরেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি। তবে এবার সেই শহীদ মিনারই হবে “শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ”।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে নির্মিত হতে যাচ্ছে তা। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ও বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ওই স্মৃতিস্তম্ভে ফুটিয়ে তোলা হবে।

 
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা বিষয়ক এক সভায় এ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

এর আগে ঢাবির শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি চাহিদা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রেরণ করা হয়। যেখানে শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে ২৫ কোটি টাকার চাহিদা পেশ করা হয়। সভায় শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।

পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তি সংগ্রামের পর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে স্থাপন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর। বঙ্গবন্ধুর শাসনামল ১৯৭২ সালে এর ভিত্তি স্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমেদ। ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শহীদ মিনারের পরিবর্তে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু ৪৭ বছর কেটে গেলেও নির্মাণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়নি এ স্থাপনাটির। অযত্ন অবহেলায় বর্তমানেও পড়ে আছে সেই ভিত্তিপ্রস্তর ও শহীদ মিনারের অংশবিশেষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত কোন অগ্রগতি হয়নি। অবশেষে শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেখানে ‘শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শহীদ মিনারের পরিবর্তে “মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ” নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সে বছরের ২৩ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মিজানুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেন। যাতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়া হবে।

ওই চিঠি পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। যে কমিটি ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি সভা করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ‘স্থান নির্বাচন’ কমিটি গঠন করে। ওই বছরের ২৮ মার্চ ‘স্থান নির্বাচন’ কমিটি সভা করে সুপারিশ দেয়। সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্ত্বর এলাকায় যেখানে ১৯৭২ সালে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমেদ শহীদ মিনারের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন; সেখানে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা যেতে পারে। পরে ৩১ মার্চ সুপারিশটি সিন্ডিকেট অনুমোদন দেয়। সার্বিক বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়ে ২৩ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়।

পরে স্মৃতিস্তম্ভের নকশার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নকশা করার জন্য ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ১৫ জানুয়ারি সেখান থেকে একটি নকশা ঠিক করা হয়। এই প্রতিযোগিতায় খরচ হয় পাঁচ লাখ টাকা। এরপর ৩০ জানুয়ারি কেমন খরচ পড়বে এই বিষয় জানতে চিঠি দেওয়া হয়। তারপরও আটকে ছিলো কার্যক্রম। শেষ পর্যন্ত সে উদ্যোগে নতুন মাত্র যোগ করতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো, আখতারুজ্জামান দ্যা ডেউলি ক্যাম্পাসকে বলেন, স্মৃতিস্তম্ভের ডিজাইন তৈরিসহ যাবতীয় কাজ বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব আর্কিটেক্ট (আইএবি)-কে দেয়া হয়েছে। এটি হবে দর্শনীয়, চমৎকার এবং সবুজের সমারোহে তৈরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত বছরের যে অর্জন এখানে সেগুলো প্রতিফলিত হবে। একেকটা বিষয় একেকটা ইতিহাসের কথা বলবে।

      


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048110485076904