যখন এই লেখাটা লিখছি, তখন হঠাৎ করে দেখলাম, ভিকারুননিসা স্কুলের একটি কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। এই বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমি সবসময়ই এক ধরনের আত্মার সংযোগ অনুভব করি। খবরটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, আহা! অভিমানী এই কিশোরীটির সঙ্গে আমি যদি একটিবার কথা বলার সুযোগ পেতাম, তাহলে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে পারতাম, পৃথিবীটা অনেক বিশাল, একটা মানুষের জীবন তার থেকেও বিশাল। সবার জীবনেই কখনও না কখনও দুঃখ-হতাশা-লজ্জা-অপমান আসে, সেগুলো দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে এগিয়ে যেতে হয়। কারণ সবকিছুর পর এই জীবনটি অনেক সুন্দর।
আমি তাকে কিছু বলতে পারিনি, সারা পৃথিবীর ওপর তীব্র একটা অভিমান নিয়ে সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। আমি নিজে তীব্র অপরাধবোধে ভুগছি। মনে হচ্ছে, তার মৃত্যুর জন্য আমিও বুঝি কোনো না কোনোভাবে দায়ী। বড় মানুষদের আমরা শুধু শাসন করতে শিখিয়েছি, ছেলেমেয়েদের ভালোবাসতে শিখাইনি। কেউ কি জানে না, যদি তাদের গভীর মমতা দিয়ে ভালোবাসা যায়, তাহলে শুধু ভালোবাসার মানুষটি যেন মনে কষ্ট না পায়, সে জন্য তারা কখনও কোনো অন্যায় করে না? কেউ কি জানে না, এই বয়সটি কী অসম্ভব স্পর্শকাতর একটি বয়স! কেউ কি জানে না, অপমানের জ্বালা কত তীব্র? কেউ কি জানে না, পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ ব্যবহার করেও একটি হারিয়ে যাওয়া প্রাণকে ফিরিয়ে আনা যায় না?
অরিত্রি, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। আমরা তোমাকে এই পৃথিবীতে বাঁচতে দিইনি।
লেখক: অধ্যাপক, কথাসাহিত্যিক