১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকের কথা। তখন আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। নিজ গ্রামেই বাপ-চাচার দানকরা জমিতে প্রতিষ্ঠিত প্রাইমারি স্কুলটি সরকারি মডেল প্রাইমারি স্কুল হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত। এখন তো গ্রামে গ্রামে স্কুল। সে সময় এমনটি না থাকায় আশপাশের ১১ গ্রামের ছেলেমেয়েরা স্কুলটিতে পড়তে আসত।
শিক্ষকরা যেমন ভালো মানের ছিলেন, তেমনি শাসনও ছিল অতি উঁচু মানের। প্রায় বালকপ্রধান এ স্কুলে দেখতে-শুনতে লম্বা-চওড়া আমার হেডমাস্টার নানা (আপন নানা) ছাত্রদের শৃঙ্খলার বিষয়ে বড় টনটনে ছিলেন। পান থেকে চুন খসলেই হল, কোনো ছাত্রের একেবারেই নিস্তার ছিল না। প্রায়ই দেখতাম, স্কুলের মাঠে কয়েকজন ছাত্রকে কপালে ইট চাপিয়ে সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। একজন শিক্ষক পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতেন পাহারা দেয়ার জন্য, যাতে কেউ কপাল থেকে ইট ফেলে না দেয়।
ক্লাসকক্ষের ভেতরে আমরা ভয়ে আতঙ্কিত থাকতাম আর ফ্যাকাসে মুখে একবার মাঠের দিকে তাকাতাম এবং পরক্ষণেই ক্লাস-টিচারের ধমক খেয়ে বেঞ্চের ওপরে রাখা খোলা বইয়ের দিকে তাকিয়ে পড়ার ভান করতাম। মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো লজ্জায় লাল হয়ে যেত আর তপ্ত সূর্যালোকের কারণে গাল বেয়ে চোখের পানি পড়ত। ঠায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। ইট-কপালের দুর্ভাগ্য আমার হয়নি, তবে একদিন পাশে বসা ছেলেটির সঙ্গে কথা বলার অপরাধে নিলডাউন হয়ে, কান ধরে বেঞ্চের ওপর দাঁড়াতে হয়েছিল। কম্পমান পায়ের ব্যথার চেয়ে বেশি লেগেছিল অহংবোধে, আত্মসম্মানে। ঘৃণা ধরে গিয়েছিল শিক্ষকদের প্রতি। এমনকি শিক্ষক-নানাকেও এ কারণে আমার ভালো লাগত না। মামারাও শিক্ষক ছিলেন, তাদের এড়িয়ে চলতাম ছোটকাল থেকেই।
কিন্তু ভালো লাগত আমার বাবাকে, যিনি শিক্ষক হয়েও কখনও কাউকে লজ্জা দিয়ে কিছু বলতেন না। হাসিখুশি চেহারার সে শিক্ষক-বাবার কথা বেশি করে মনে পড়ছে যখন পত্রিকায় দেখলাম আমার নবম গ্রেডে পড়া নাতনির বয়সী অরিত্রী শিক্ষকের কাছে অপমানিত হয়ে, নিজের বাবাকে অপমানিত হতে দেখে, আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। এক অরিত্রী মরেছে, সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাজারও অরিত্রীর কী হবে? অরিত্রী একটি মেয়ে নয় শুধু। ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে নির্যাতিত শিক্ষার্থীর প্রতীক সে। তেমন ঘটনার শিকার হয়েছিলাম আমিও।
১৯৬৪ সাল। নবম শ্রেণীতে পড়ি। স্কুলের খ্যাতির বিস্তৃতি বহুদূর। খ্যাতির কাহিনী শুনে ভর্তি হলাম। মাস চারেক পরে অষ্টম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হল। প্রধান শিক্ষকের কাছে রেজাল্ট বিবরণী এসেছে; শুনলাম আমি নাকি প্রথম হয়েছি। ইতিমধ্যে আমাদের প্রথম ত্রৈমাসিক পরীক্ষার রেজাল্টও বেরিয়েছে। অঙ্কে পেয়েছি ৩৬, কোনোমতো পাস। আর যায় কোথায়? গুরুগম্ভীর প্রধান শিক্ষক (যিনি অঙ্কেরও শিক্ষক) তার অফিসে ডেকে নিয়ে সব শিক্ষকের সামনে এমন অপমানজনক কিছু কথা আমাকে বললেন যার কারণে আমি বহুদিন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেছিলাম; জ্বলেছি ভেতরে ভেতরে, মুখে বলতে পারিনি কিছুই। কাহিনী এখানেই শেষ নয়। অঙ্কে আমার সামান্যই উন্নতি হয়েছে।
মূল কারণ, অঙ্কের শিক্ষক নিজেই স্পষ্ট করে কোনো কিছু বোঝাতে পারেন না। তার ওপর প্রধান শিক্ষক। ওনার গম্ভীর চেহারা দেখলেই সব উৎসাহ হারিয়ে যেত। প্রশ্নের উত্তর দেয়া ওনার স্বভাবের মধ্যেই ছিল না। প্রশ্ন করা মানেই দুটি রক্তচক্ষুর কঠিন চাহনি দেখার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা। দিন যেতে থাকল; দশম শ্রেণীতে উঠলাম; অঙ্কের ‘কাঁচাত্ব’ আর ঘোচানো গেল না। প্রি-টেস্ট পরীক্ষা হল। অঙ্ক ছাড়া সব বিষয়ে কমবেশি ৮০% পেয়ে ক্লাসে প্রথম হলাম, কিন্তু অঙ্কে আগের মতোই নবডংকা। প্রথম হওয়াটাই ‘কাল’ হয়ে দাঁড়াল।
রেজাল্টের দিনই লাঞ্চের সময় অফিসের সামনে দিয়ে বেরিয়ে পাশের দোকানে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পেছন থেকে ভারিক্কি গলার ডাক; ডাক তো নয় যেন হুংকার ধ্বনি। চমকে তাকাতেই দেখি হেডমাস্টার স্যার আমাকেই ডাকছেন। আশপাশে অনেক ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকরাও আছেন। তিনি কোনো প্রকার ভণিতা না করেই যতটুকু গলার স্বর উঠানো যায় ততটুকু উঠিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশ্ন ছুড়লেন : আমার স্কুলের প্রথম শ্রেণী থেকে ফার্স্ট হওয়া ছেলেকে ডিঙিয়ে তোমার মতো ছেলে বাইরে থেকে এসে কী করে ফার্স্ট হতে পার? সব সময় অঙ্কে ডাববা; বৃত্তি পরীক্ষায় কীভাবে ফার্স্ট হয়েছ, বুঝি না। আরও অনেক কটুবাক্য ঝেড়েছেন। নবম শ্রেণীর অপমানটা তখনও গায়ে লাগা ছিল। আজ আবার একই কায়দায় সবার সামনে অপমান।
বার ভয়-শ্রদ্ধা সব পাশে ঠেলে রেখে প্রতিবাদ করলাম। তিনি ক্ষেপলেন। সব ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকরা দেখলেন, শুনলেন। কেউ কোনো কথা বললেন না। শিক্ষকরা নিচের দিকে আর ছাত্রছাত্রীরা আমার দিকে তাকিয়ে। হঠাৎ এমনটি দেখে বিস্মিত সবাই।
অনেকের সঙ্গেই তিনি এরূপ ব্যবহার করেন। উচ্চবাচ্য করলেই টিসি নামক ব্রিটিশদের নোংরা আবিষ্কারটি তিনি অবলীলায় কাজে লাগান। ভয়ে তাই কেউ টুঁ শব্দটি করে না। আমি ঝুঁকি নিলাম। বিকালে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে পরের দিন স্কুলে ধর্মঘট ডাকলাম। স্কুলের প্রায় ৩৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ধর্মঘট। অবিশ্বাস্য সবার কাছে। কিন্তু দেখলাম, আশপাশের গ্রামের বহু অভিভাবক আর সাধারণ মানুষ ভিড় করছে স্কুল প্রাঙ্গণে। অবাক সবাই। কিন্তু কেউ সাপোর্ট করেননি হেডমাস্টারকে। ছাত্রছাত্রী সবাই আমরা স্কুলের বাইরে রাস্তায়। দুই দিন ধরে ধর্মঘট।
বাংলা আর ইংরেজির আমার প্রিয় শিক্ষকদের পিতৃসুলভ স্নেহমাখা আহ্বানে সাড়া দিয়ে তৃতীয় দিনে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিই। সফল এ ধর্মঘটের ফল হল এই যে, তিনি যতদিন স্কুলে ছিলেন, ততদিন আর কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেননি। বাড়তি পাওনা হল- জেদ ধরলাম অঙ্ক ভালো করে শিখে দেখিয়ে দিব। একজন খারাপ হলেও অন্য শিক্ষকরা ভালো থাকলে কোনো কিছু শেখা কঠিন নয়। বাংলার শিক্ষকের কাছে অঙ্ক শেখা শুরু করলাম। তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে, অনেক যত্ন করে আমাকে শেখাতে থাকলেন। ফল দাঁড়াল- মাধ্যমিক পরীক্ষায় অঙ্ক, বাংলা, ইংরেজিসহ কয়েকটি বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করা।
গ্রামের স্কুল থেকে এমন রেজাল্ট কেউ বিশ্বাসই করতে পারেনি। উল্লেখ্য, তখন কোচিং আর নকল নামক বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। আমার বিশ্বাস, প্রতিরোধ সঠিক হলে, প্রতিরোধের কারণ যুক্তিযুক্ত হলে সবার সাপোর্ট পাওয়া যায়। এ শিক্ষা সারাজীবন কাজে লেগেছে।
গত কয়েক দিনে অরিত্রীকে নিয়ে অনেক মানুষ অনেক ক্ষোভ, হতাশা, ঘৃণা, আর শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখেছেন, শিক্ষকদের প্রতি বিষোদ্গার করেছেন। সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় লেখা হয়, কথা বলা হয়, বক্তৃতা-বিবৃতি হয়, মিটিং-মিছিল হয়, আলোচনা-সমালোচনা হয়, বাদ-প্রতিবাদ হয়, কমিটি হয়, তদন্ত হয়, প্রতিবেদন হয়, কত কিছু যে হয়! আসল কাজটা কতটুকু হয়? কে কার কথা শোনে? কার কী ঠেকা শোনার? আমিও লিখলাম। কার কী ঠেকা লেগেছে পড়ার?
কেউ পড়ুক আর না পড়ুক, লিখতে তো হবেই, বলতেও হবে। ঝিমধরা সমাজে আমরা বসবাস করতে পারি না। গা ঝাড়া দেয়ার সময় এখনই। যে দেশে অসংখ্য শিক্ষার্থী শিক্ষার পরিবর্তে তার প্রতিষ্ঠানে পায় অমানবিক আচরণ, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন আর অনাদর-অবহেলা, সে দেশে গর্জে উঠতে হবেই। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য, এগারো মাসে ১৭১ শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং ২ জন আত্মহত্যা করেছে (ইত্তেফাক, ৮ ডিসেম্বর)। এগুলো তো জনসমক্ষে আসা খবর। আরও কত অসংখ্য নির্যাতনপিষ্ট শিশু-কিশোর-কিশোরী নিজকে গুটিয়ে রাখছে, তার হিসাব কে রাখে? দেখা যাচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন শিশু-নির্যাতনের উন্মুক্ত শিবিরে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। হাতুড়ে-বৈদ্যের মতো হাতুড়ে-শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে, আর এসব হাতুড়ে-শিক্ষকের কারণে দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। হাতুড়েদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রোবট শিক্ষকরা। এরা শুধু শিক্ষার্থীদের শারীরিক-মানসিক নির্যাতনই করে না, এরা নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোচিং-বাণিজ্যের ছাত্র-মক্কেল ধরার উৎস হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের দুর্বৃত্তমনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সহযোগিতা করছে গভর্নিং বডির এক শ্রেণীর দুর্বৃত্ত সদস্যরা। দুর্র্বৃত্তায়নের চক্রে বাঁধা পড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হাতুড়ে শিক্ষক আর রোবট শিক্ষক সব কালেই ছিল, তবে এখন অনেক বেড়েছে। এদের যন্ত্রণায় অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিও স্কুল পালিয়েছেন- রবিঠাকুর, নজরুল, নিউটনের মতো ব্যক্তিরা।
এতকিছু হয়েছে, হচ্ছে কিন্তু কেউ কেয়ার করছে না। শিশুরা প্রতিভা বিকাশের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মননশীলতা হারিয়ে ট্রমায় আক্রান্ত হয়ে আতঙ্কিত ভীতু নাগরিকে পরিণত হচ্ছে। কারও সন্তানই নিরাপদ নয়- বর্তমান বা ভবিষ্যতের। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অরিত্রীর দুঃখজনক ঘটনায় সারা দেশের মানুষ রাগে-ক্ষোভে ফুঁসছে। পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই। সময় চলে গেলে সাধন হবে না।
আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীদের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা (যেমনটি থাকে নিজ সন্তানের প্রতি) আর সততা থাকলে একজন শিক্ষক কোনো অবস্থাতেই ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বিরূপ আচরণ করতে পারেন না। শিশু-কিশোর-তরুণদের আত্মসম্মানবোধের স্পর্শকাতর জায়গাটায় স্নেহের পরশ লাগাতে পারলে একজন শিক্ষক হতে পারেন তাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় রাখা একজন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। যে শিক্ষক স্কুল বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে গোয়ালঘর ভাবেন, তিনি তো শিক্ষকই নয়। তিনি তো অপরাধী; এমন অপরাধী ক্ষমা পেতে পারেন না। শিক্ষক নামের কালিমালিপ্ত এ ধরনের মানুষগুলোর মুখোশ খুলে দেয়া জরুরি।
আজ সময় এসেছে হাতুড়ে আর রোবট শিক্ষকদের মুখোমুখি হওয়ার। সময় এসেছে কিছু প্রশ্ন তোলার। শিক্ষক অমানবিক হলে তার মানসিক সুস্থতা আর সহ্যক্ষমতার পরীক্ষা নেয়ার দাবি কেন করা যাবে না? শিক্ষক প্রভুর মতো বা প্রতিপক্ষের মতো আচরণ করলে কেন তাকে শোধনাগারে পাঠানোর দাবি তোলা যাবে না? শিক্ষকের অন্যায়কে কেন শিক্ষার্থী চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিতে পারবে না? কেন উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য শিক্ষককে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা যাবে না? কেন অন্যায়ভাবে পরীক্ষায় কম নম্বর দিলে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না অথবা আদালতের আশ্রয় নিতে পারবে না? কেন হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখালে প্রতিবাদ করতে পারবে না? কেন ক্লাসে অপমান করলে রুখে দাঁড়াতে পারবে না? একজন অদক্ষ, অগ্রহণযোগ্য শিক্ষকের বহিষ্কার কেন দাবি করতে পারবে না? কোচিংবাজ শিক্ষককে কেন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা যাবে না?
তরুণ শিক্ষার্থীরা, আপন আত্মাকে কষ্ট দেয়ার চিন্তাও করো না, কখনও ভুলেও নয়। দোষ তোমার নয়; দোষ শিক্ষাব্যবস্থার, দোষ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার। তোমরা প্রতিবাদী হও বিনয়ের সঙ্গে। চ্যালেঞ্জ করো শির উঁচু করে। রুখে দাঁড়াও শান্ত চিত্তে। গুঁড়ো করে দাও অনিয়মের চক্রে বাঁধা ব্যবস্থাপনাকে। একবার ভুল করলে ভুল শুধরিয়ে নাও। ভুলকে বড় করে দেখছ কেন? ভুলের মধ্যেই সঠিক কাজটি করার বীজ লুকিয়ে আছে। তোমার বয়সটা ভুল করারই বয়স- তোমার বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাই তোমার বয়সে ভুল করেছেন। আবার শুধরেও নিয়েছেন। ভুল করতে করতেই মানুষ সঠিক পথের সন্ধান পায়। মানুষ ভুল করবেই; ভুল করে না শুধু ফেরেশতা। আমরা কেউ ফেরেশতা নই, ছিলও না কেউ, হবেও না কখনও।
যারা উত্তম শিক্ষক, তাদের চুপ করে থাকার অবকাশ নেই। এগিয়ে আসুন। সোচ্চার হোন। আপনার সামনেই আপনার অপমানের বিছানা যেসব হাতুড়ে-শিক্ষক আর রোবট-শিক্ষকরা বিছিয়ে দিচ্ছে, তাদের প্রতিহত করুন সংঘবদ্ধভাবে। ‘শিক্ষক’ না হয়ে ‘শিক্ষার সহায়ক’ (ফ্যাসিলিটেটর) হোন। দেখবেন ছাত্র এমনিতেই কোচিং সেন্টারের ধারেকাছেও যাবে না, নকল করবে না, বই খুলে দিলেও সেদিকে তাকাবে না, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করার তো প্রশ্নই উঠবে না। যে শিক্ষার্থী বিষয়বস্তু জানে, সে কখনও নকলের ধার ধারে না। শিক্ষাদান ত্রুটিপূর্ণ হলেই শিক্ষার্থীরা নকলের দিকে ঝুঁকে পড়ে, ফাঁসকরা প্রশ্ন পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ওঠে। এসব নির্মূল করার উপায় আছে আপনার হাতেই, হে উত্তম শিক্ষক!
লেখক : শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট; উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
সৌজন্যে: যুগান্তর