অসাধু ডাক্তারদের ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

অসাধু চিকিৎসকদের ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেই। বছরে দু’-একটি অভিযান চালিয়েই সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব শেষ। তাদের পাশাপাশি অনেক প্রকৃত চিকিৎসকও ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছেন। অভিযোগ খোদ বিএমডিসির নেতাদের। তারা বলছেন, বারবার সতর্ক করে দেয়ার পরও এ সমস্যা দূর হচ্ছে না। স্বীকৃত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ নিজেকে ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন, যা বিএমডিসি আইনের পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিখিল মানখিন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’ লেখা দেখে চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রত্যাশিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। আবার ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস পাস না করেও অনেকে তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করে যাচ্ছেন। দেশের সর্বত্র চলছে বিএমডিসির দেয়া এমন সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি অমান্যের প্রতিযোগিতা। এতে একদিকে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা হয়ে পড়ছে প্রশ্নবিদ্ধ, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রোগীরা অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। একের পর এক সতর্কীকরণ বার্তা দিয়েও ভুয়া  ডিগ্রি ব্যবহার বন্ধ করতে পারছে না বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল।  

বিএমডিসির কর্মকর্তারা জানান, স্বীকৃত ডিগ্রিপ্রাপ্ত অনেকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিবন্ধন ছাড়া চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করছেন। কোনো কোনো নিবন্ধিত চিকিৎসক/ দন্ত চিকিৎসক তাদের সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশনের প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে, পিজিটি, এফসিপিএস (পার্ট-১,২), এমডি (ইন কোর্স, পার্ট-১,২, থিসিস পর্ব), এম,এস (পার্ট-১,২, থিসিস পর্ব, সিসি) ইত্যাদি ব্যবহার করছেন, যা কোন স্বীকৃত অতিরিক্ত চিকিৎসা যোগ্যতা নয়। এছাড়া স্বীকৃত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সার্জারি বিশেষজ্ঞ, গাইনি বিশেষজ্ঞ, শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি ব্যবহার করছেন, যা বিএমডিসি আইনের পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আবার কোনো কোনো চিকিৎসক তাদের ব্যবস্থাপত্রে এমন কিছু ওষুধ লিখছেন, যা নিষিদ্ধ। নিবন্ধিত চিকিৎসকদের উপরোল্লিখিত আইন পরিপন্থি কাজ থেকে বিরত থাকতে যথাযথ চিকিৎসা চালানোর জন্য জানানো যাচ্ছে।

২২(১) ধারা অনুযায়ী নিবন্ধন ছাড়া এলোপ্যাথি চিকিৎসা নিষিদ্ধ। অন্য কোন আইনে যা, কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীনে নিবন্ধন ছাড়া কোনো মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এলোপ্যাথি চিকিৎসা করতে, অথবা নিজেকে মেডিক্যাল চিকিৎসক, ক্ষেত্রমতে, ডেন্টাল চিকিৎসক বলে পরিচয় দিতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি এই ধারা লঙ্ঘন করলে তা হবে একটি অপরাধ এবং এর জন্য তিনি ৩ বছর কারাদণ্ড অথবা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

২৯(১) ধারা অনুযায়ী ভুয়া পদবি, ইত্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধ। এই আইনের অধীন নিবন্ধনকৃত কোনো মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোনো নাম, পদবি, বিবরণ বা প্রতীক ব্যবহার বা প্রকাশ করবেন না, যার ফলে তার কোনো অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে মর্মে কেউ মনে করতে পারে। যদি না তা কোন স্বীকৃত মেডিক্যাল চিকিৎসা-শিক্ষা যোগ্যতা বা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসা শিক্ষা যোগ্যতা হয়ে থাকে। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস  ডিগ্রিপ্রাপ্তরা ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি এই উপধারা লঙ্ঘন করলে তা হবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি ৩ বছর কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। অপরাধ অব্যাহত থাকলে প্রত্যেকবার তার পুনরাবৃত্তির জন্য অন্যুন ৫০ হাজার টাকা অর্থ দণ্ডে অতিরিক্ত হিসেবে দণ্ডনীয় হবেন।

এদিকে দেশের সর্বত্র চলছে বিএমডিসি আইনের লঙ্ঘন। স্বীকৃত চিকিৎসা থেকে ডাক্তার হয়েও অনেকে ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করেন। নামের আগে ভুয়া ডিগ্রি লাগিয়ে রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এ ধরনের চিকিৎসকদের মূল উদ্দেশ্য। তাঁরা রোগীদের ভালো-মন্দ বিবেচনায় রাখেন না। মহান পেশা চিকিৎসাসেবা তাদের কাছে হয়ে ওঠে ‘রোগী মেরে টাকা আয়ের কেন্দ্র’। স্বীকৃত চিকিৎসকদের পাশাপাশি অস্বীকৃত কোয়াক চিকিৎসকদের সংখ্যাও কম নয়। তারা চিকিৎসা সেক্টরের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ। দেশে রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ ‘কোয়াক চিকিৎসক’ বিরুদ্ধে। এ ধরনের চিকিৎসকদের থাকে না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না কোনো অভিজ্ঞতা। কোনো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে তারা কিছু চিকিৎসাজ্ঞান অর্জন করে। সেই সীমিত জ্ঞান দিয়ে তারা নিজেদের মতো করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যায়।

এতে অনেক রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সরকারি অনুমোদন না থাকলেও এ ধরনের চিকিৎসকরা দেশের আনাচে-কানাচে চিকিৎসাবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের চিকিৎসকেরা প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনার্সের মধ্যেও পড়ে না। জানান এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী। বেসরকারি চিকিৎসাসেবা আইন না থাকায় কোয়াক চিকিৎসকেরা নিজেদের বিভিন্ন পরিচয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের চিকিৎসকেরা প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনার্সের মধ্যেও পড়ে না। তবে তাদের অনেকে কাজ করতে করতে চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন। এ ধরনের চিকিৎসকদের একটি শ্রেণিতে ফেলে দিয়ে তাদের কার্যপরিধি নির্ধারিত করে দেয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

স্বাস্থ্যসংক্রান্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালো করার দাবি জানিয়েছেন ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সাবেক সভাপতি, বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদী-ই-মাহবুব। তিনি জানান, স্বাস্থ্য সেক্টরে দুর্বল মনিটরিংয়ের জন্য স্বাস্থ্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায়ী। কেউ কারও দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে না। দেশে ভুয়া  ডিগ্রির অভাব নেই, টাকা দিলেই পাওয়া যায়, যা অদক্ষ চিকিৎসক সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051281452178955