বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আইয়ুব খানের মার্শাল ল’র প্রশংসা করেন সদ্যসরকারিকৃত একটি কলেজের একজন সহকারী অধ্যাপক। শৃঙ্খলা রক্ষায় আইয়ুব খানের মার্শাল ‘ল’ সঠিক ব্যবস্থা ছিল বলে মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুরের মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের এক শিক্ষক। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দিতে গিয়ে কলেজটির সহকারী অধ্যাপক মো. রুহুল আমীন মার্শাল ল’র প্রশংসা করেন। এ ঘটনা কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমীন শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ করেন না, ধরে রাখেন না। স্বাধীনতা পেয়ে যখন তখন তারা কলেজের বাইরে চলে যায়। আসলে আমাদের এ দেশে প্রয়োজন ছিল আইয়ুব খানের মার্শাল ‘ল’। যদিও তা নেই। আজ যদি আইয়ুব খানের শাসন থাকতো, তাহলে আপনারা এসব করতে পারতেন না।
শিক্ষকরা তাকে মূল্যায়ন করেন না উল্লেখ করে ওই শিক্ষক আরও বলেন, ‘আমি দেখেছি পাকিস্তানিরা যেমন করে বঙ্গবন্ধুকে মানেনি, তেমনি শ্রীপুর কলেজের শিক্ষকরাও আমাকে মানে না।’
তার এ বক্তব্যের পরপরই উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়।
কলেজের শিক্ষকরা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী এমন একটি বক্তব্য শুধু কলেজের ভাবমূর্তি বা শিক্ষকদের সম্মান নষ্ট করেনি, বরং একটি দেশের বিজয়ের ইতিহাসকেও অপমানিত করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ওই শিক্ষকের রাজনৈতিক অতীত স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া আর কিছুই নয় বলে দাবি করেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, একাধিক সিনিয়র শিক্ষক থাকার পরও নানাভাবে সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমীন কলেজের প্রশাসনিক কাজ ও সাধারণ শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। তিনি তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা নীতি শিক্ষকদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন।
আইয়ুব খানের মার্শাল ল’র সমর্থনে বক্তব্য দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী অধ্যাপক মো. রুহুল আমীন বলেন, আমি বলেছি আইয়ুব খানের শাসনটাই উত্তম ছিল, সবাই মানতো। শিক্ষকরা মাসে দুইদিন এসে বেতন নিয়ে যান, কলেজে এলেও ক্লাস নেন না, তাদের স্বার্থে আঘাত লাগলে অনেক কিছুই তারা বলে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কলেজের বর্তমান সভাপতি শেখ শামসুল আরেফীন বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের কোনও শিক্ষক আইয়ুব খানের মার্শাল ল’র প্রশংসা করতে পারেন না। শিক্ষক রুহুল আমীন যদি এমন মন্তব্য করে থাকেন, তা কোনোভাবেই সঠিক হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।
জানাা যায়, এই কলেজটিতে সিরাজুল নামের একজন প্রভাষক জামাত শিবিরের তৈরি করা বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও ভুইফোঁড় অনলাইনে সরকারবিরোধী প্রচারণা লিপ্ত থাকেন। সায়েদুজ্জামান, আসাদুজ্জামান ও আতিক হেলাল নামের তিনজন শিবিরনেতা পরিচালিত ফেসবুক গ্রুপ ও অনলাইন পত্রিকা খুলেছে। শিবির সংশ্লিষ্টতার দায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরি হারান আতিক হেলাল। আর সায়েদুজ্জামান ঢাকার একটি বেসরকারি কলেজের অবৈধভাবে খোলা শাখায় খন্ডকালীন চাকরি করেন। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি ওই স্কুল এন্ড কলেজের শাখাটি অবৈধ ও সব নিয়োগ বাতিল করার সুপারিশ করেছে। সায়েদুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার কার্ড বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে।