স্বাধীন দেশ হিসেবে সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও সেই স্বপ্ন অর্জিত হয়নি। দেশের প্রতিটি উন্নয়ন-রূপকল্পের ভিত্তিমূলেই রয়েছে বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের প্রতিধ্বনি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে সময় ও প্রয়োজনের সীমারেখা। অগ্রণী চিন্তায় আমার পৃথিবী উদ্ভাসিত হবে আমার জ্ঞানের আলোকে। এই শিক্ষা হবে আমার উপার্জনের হাতিয়ার। সারা বিশ্বের মানুষের প্রথম চাওয়া এখন সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা, আর শিক্ষা বলতেই বুঝি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতেই সর্বাগ্রে ভাবতে হয়, প্রতিষ্ঠান যাদের ঘিরে আবর্তিত হয়, সে শিক্ষকদের। যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাসম্পর্কিত সব উদ্যোগ, সব প্রক্রিয়া শ্রেণিকক্ষে সঞ্চালন করার অদ্বিতীয় সঞ্চালক হচ্ছেন শিক্ষক, সেহেতু তাকে নিতে হয় প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন প্রস্তুতি।
বর্তমান বিশ্বে চলছে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং গোটা বিশ্বের শিল্পকারখানা, প্রযুক্তি তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। পৃথিবীর উন্নত দেশে এখন আজীবন চাকরি বলে কিছু নেই, চাকরি আছে ততদিন যতদিন কাজ আছে এবং কাজ আছে ততদিন যতদিন ডিমান্ড আছে। শেয়ার মার্কেট নির্ধারণ করছে বর্তমান কর্মসংস্থান। শেয়ার হোল্ডার, রাজনীতি, ক্লাইমেট পরিস্থিতি, এসব বিশাল আকারে প্রভাব বিস্তার করছে শিল্প কারখানা এবং অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে। শিক্ষা ও শিক্ষার মান নির্ভর করছে গ্লোবাল চাহিদার উপর এবং তাও হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট লেভেলে। শেয়ার বাজার নির্ধারণ করছে চাকরি থাকবে কি থাকবে না। সেক্ষেত্রে নিশ্চিত করে বলা কঠিন কী পড়লে সারাজীবন চাকরির গ্যারান্টি মিলবে। তবে সারা জীবন টেকসই ইন্ডাস্ট্রি প্রভাইডার এবং যোগ্য নাগরিক হিসাবে বেঁচে থাকতে হলে দরকার সময়োপযোগী সুশিক্ষা। বাংলাদেশ উন্নয়নের সড়কে ঊর্ধ্বমুখী এক দেশ। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ও সময়ের স্রোতে এ দেশের সব সেক্টরেই লেগেছে আজ ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। কিন্তু আমাদের ধ্যানে-জ্ঞানে এ ছোঁয়া আজও লাগেনি! চাহিদা বলছে কী পড়তে হবে এবং কেন পড়তে হবে। এ সময়ে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এবং প্রত্যেকটি শিক্ষককে জানতে হবে চাহিদাগুলো কী এবং তার জন্য কী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং সকল শ্রেণিশিক্ষকের সুশিক্ষার আওতায় আনতে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হলে বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প নেই, দেশের সকল শিশু শিক্ষা থেকে শুরু করে সব স্তরের শিক্ষকবৃন্দ প্রশিক্ষণ প্রদান ও গ্রহণএর একটি সমন্বিত কার্যক্রম যেখানে দেশ, বিদেশের বড় বড় কোম্পানি বা সংস্থার মালিক বা সিইও , কর্মকর্তা , গবেষক ,রাজনীতিবিদ , বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকবৃন্দ একত্রিত হয়ে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষকদের পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি ও যুগোপযোগীকরণে সহায়তা দান করা এবং শিক্ষকদের ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি এবং নেতৃত্বের গুণাবলি জাগ্রত করা, নতুন নতুন শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে দক্ষতা ও কৌশল বৃদ্ধি করা হবে এই বিশেষায়িত শিক্ষা প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল উদ্দেশ্য।এটা পৃথিবীর প্রথম ভিন্নধর্মী একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে সকল শিক্ষকদের জন্য একটা মিলন কেন্দ্র। তাই সত্বর শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবর্তন আনতে না পারলে ঝরতে থাকবে নতুন প্রজন্ম আর নিভে জাবে সকল আশার আলো দিনে দিনে।
এ অবস্থায় শিশু শিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কড়া নজর দিতে হবে, কী শিক্ষা, কেন শিক্ষা, শিক্ষার উদ্দেশ্য কী এবং তা কিভাবে মনিটরিং করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। শিশু বিদ্যালয়, শিশুদের জন্য অনুকরণ এবং অনুসরণের জায়গা, সে ক্ষেত্রে এই শিক্ষাঙ্গনে থাকতে হবে শিশু মনোবৈজ্ঞানিক, সমাজকর্মী, দৃশ্যমান, বিজ্ঞান সম্পন্ন ও বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা প্রশিক্ষণ যেখানে চর্চা ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে শিশুদের জীবন এবং জীবনের শুরুটা। পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি ও যুগোপযোগীকরণে সহায়তা দান করা , শিক্ষকদের ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি এবং নেতৃত্বের গুণাবলি জাগ্রত করা, নতুন নতুন শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে দক্ষতা ও কৌশল বৃদ্ধি করা, দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতন থেকে কার্য সম্পাদনের জন্য শিক্ষকদের উৎসাহিত করা হবে। ভ্যালু অফ টিচিং ইচ লার্নিং ফ্রম লারনার্স।
এসব প্রস্তুতির জন্য সহায়ক মাধ্যম হচ্ছে প্রশিক্ষণ। আছে কি বাংলাদেশের শিশু বিদ্যালয়ে এমন কোন শিক্ষক বা শিক্ষাপদ্ধতি চালু, যেখানে চর্চা হচ্ছে এমন মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা? কিংবা সেভাবে তৈরি হচ্ছে কি তেমন শিক্ষক, যিনি পারবেন মোকাবেলা করতে ভবিষ্যতের এই শিক্ষাব্যবস্থাকে? তাহলে কি আমরা যেভাবে আছি ঠিক সেই ভাবেই থাকব? নাকি চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে নতুন প্রজন্মকে শুধু বাংলাদেশী নয় গোটা বিশ্বের নাগরিক করে গড়ে তুলব সুশিক্ষার মাধ্যমে? প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ধারার একমাত্র বাহক শিক্ষক সমাজই যদি মজবুত না হয়, শিক্ষার্থী নামক বাহনের অভিযাত্রীরা কি নির্বিঘ্নে শিক্ষা নামক বৈতরণী পাড়ি দিতে পারবেন? সে প্রশ্ন সব নাগরিকের, সব অভিভাবকের। আমরা জানি, শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দরকার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। গতানুগতিক, অসম্পূর্ণ, সনদপত্রসর্বস্ব, তত্ত্বীয় বিদ্যাপ্রধান, ব্যবহারিক শিক্ষা অপূর্ণ, মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল এবং পুরনো পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসারী, তাই আশানুরূপ ফল লাভ হচ্ছে না। শিক্ষক-শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের শিখন-শেখানো কলাকৌশল সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা, শিক্ষকদের পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি করা এবং সময়ের সঙ্গে যুগোপযোগীকরণে সহায়তা দান করা, শিক্ষকদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি এবং নেতৃত্বের গুণাবলি জাগ্রত করা, নতুন নতুন শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে দক্ষতা ও কৌশল বৃদ্ধি করা, দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতন থেকে কার্যসম্পাদনের জন্য শিক্ষকদের উৎসাহিত করা ইত্যাদি ইত্যাদি। উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে একটা বিষয় বেশ পরিষ্কার যে, বাংলাদেশে সুশিক্ষার জন্য মান সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ পরবর্তী ফলোআপ খুবই জরুরি। দেশে তার জন্য পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনও গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রাইমারী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আলাদা আলাদা ভাবে কিছু শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সেগুলো দেশে মান সম্পন্ন শিক্ষা বিস্তারে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়েরও কোন ব্যবস্থা নেই। আবার শিশু বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বস্তরের শিক্ষকদের জন্যও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ফলে দেশে দিনে দিনে শিক্ষিতের হার বাড়লেও বাড়ছে না শিক্ষার মান। তাই দেশের জনশক্তিকে দ্রুত জন সম্পদে রুপান্তর করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
দেশের প্রতিটি জেলায় ডিসি মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে "শিক্ষা ও উন্নয়ন" নামে একটা করে সেল রয়েছে। প্রাইমারি ও মাধ্যমিক শিক্ষা দেখাশোনার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাফিলিয়েটিং কর্তপক্ষ হিসাবে আছে শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বিদ্যমান শিক্ষা কাঠামোগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের তেমন ব্যবস্থা নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত পরিদর্শনও করা হয় না। ফলে প্রশিক্ষণ যতটুকু দেওয়া হচ্ছে তারও প্রয়োগ তেমন হচ্ছে না। শিশুদের প্রথম ১-১৫ বছরের মধ্যের সময়টা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। তাদের মানবতার ফর্মে আনতে হলে শিক্ষার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে এবং একই সাথে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরে এবং পর্যায়ক্রমে গড়ে তুলতে হবে সুপ্রশিক্ষণ যেখানে থাকতে হবে “আরনিং বাই লার্নিং প্রসেস, ফলোজ বাই রুলস এন্ড রেগুলেশন উইদাউট কারেকশন অর ইন্টারাপশন”।
বাংলাদেশী আমরা ধ্যানে-জ্ঞানে কোনো অংশেই খারাপ নই অন্য জাতি থেকে। আমরা সব পারি। দুঃখের বিষয় দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ ব্যবস্থাপনার অভাবে আজ শিক্ষার এই অধঃপতন। কিন্তু একই সাথে আমরা এই অবনতিকে সনাক্ত করতে পেরেছি। অতএব এখন সমাধানের সময়। তাই আর দেরি না করে এই বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে তৈরি করতে হবে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক। বর্তমান যে সব বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা জানে না কী ধরনের শিক্ষা দেওয়া দরকার একজন শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষককে। পুরো শিক্ষাঙ্গন খুঁজলে পাওয়া যাবে না গুণসম্পন্ন শিক্ষক, শিশু প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি। অতএব সময় এসেছে ভেবে দেখার মানুষ গড়ার কারিগর হতে হলে নিজেকে আগে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে তৈরি করতে/হতে হবে, মানুষের মত দেখতে হলেই মানুষ গড়ার কারিগর হওয়া যায় না। তার জন্য দরকার মিশন, ভিশন, পলিসি। সাথে ডিভোসন, প্যাশন, মোটিভেশন , গোলস, অবজেকটিভস এ্যন্ড আ্যকসন। এবং এর জন্য দরকার লারনিং ফ্রম ল্যারনার এ্যন্ড লারনিং বাই ডুয়িং টুলস। জানি না, কত শত হাজার শিক্ষক বর্তমান রয়েছে সারা বাংলাদেশে যাদের এ ব্যাপারে কোন ধারণাই নেই আমি যা ভাবছি সে বিষয়ে। তবে তাদেরকে সত্বর এই বিশেষায়িত শিক্ষা প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় এনে কাজের মাধ্যমে চাহিদা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করার সুযোগ করে মানুষ গড়ার কারিগর করতে হবে, এবং তখনই সম্ভব দেশে সুশিক্ষা ফিরিয়ে আনা। আমি এর আগে লিখেছি ডিজিটালাইজেশন, ম্যানেজমেন্ট বাই অবজেকটিভস, হাইয়ার এ্যন্ড ফাইয়ার কনসেপট প্রয়োগ করতে হবে এই মুহূর্তে। এবং তা করতে হবে দেশের বৃহহত্তর স্বার্থে। শিক্ষামন্ত্রণালয়ে রদবদল করতে হবে প্রথমে এবং জনগণের মনোনীত স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে এ কাজ শুরু করতে হবে।
বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনের এই দুর্দিনে সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগাতে হবে সক্রিয়ভাবে। আমার বিশ্বাস, তারাই পারবে এ দায়িত্ব পালন করতে (দেশের সবগুলো ক্যাডেট কলেজ তার প্রমাণ) বিশেষ করে প্লানিং টুল ফর এ্যাডমিনিসট্রেশন, ডিসিপ্লিন, সোর্স ইন্টিগ্রেশন, সিনক্রোনাইজেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে)।
ক) দেশে বিদ্যমান শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষাবিজ্ঞানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগসহ আধুনিক, যুগোপযোগী শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো অবিলম্বে গড়ে তুলতে হবে।
খ) মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন ও তত্ত্বাবধানের জন্য আরও কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। তার জন্য সরকারি কর্মকর্তা, সুধিজন, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক ও শিক্ষাবিদবৃন্দ, বিভিন্ন শিল্প সংস্থার কর্ণধার বা জনবল রিক্রুটিং সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন করে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে।
গ) দেশের ও আধুনিক বিশ্বের প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ শিক্ষা যেন দেশের জনগোষ্ঠী গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘ) শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখার জন্য সরকার, শিক্ষক ও সমাজের আরও সম্পৃক্ততার ব্যবস্থা করতে হবে।
ঙ) শিক্ষার জন্য গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমকে সুষ্টুভাবে পরিচালনার জন্য দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষকরা যেহেতু সুশিক্ষার মূল কারিগর তাই তাঁদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্হা করাই হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশের সবাই শিক্ষার বিষয়টি দেখছে, জানছে, জল্পনা-কল্পনা করছে। কিন্তু কীভাবে শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন করা যায়, তা নিয়ে খুব কমই কথা হচ্ছে। এখনও চলছে সেই সনাতন শিক্ষাদান পদ্ধতি যা বয়ে আনছে দেশে শুধু অন্ধকার। এই পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ বেকার যুবক সমাজ ধর্মকে বানাবে হাতিয়ার এবং ধর্মের অপব্যবহার করবে। বেকারত্ব বাড়বে এবং বাড়ছে। সরকারি সুবিধা পাবে কিছু সংখ্যক মানুষ। ধর্মীয় গোঁড়ামি বাড়তে থাকবে দিন দিন। সামাজিক অনাচার বাড়বে। অনায্যতা বাড়বে। বাড়বে “লো কোয়লিটি ডিগ্রিধারীদের সংখ্যা। কমবে সুশিক্ষিতের সংখ্যা। কিছু সংখ্যক লোক আরো অর্থবান হবে।
বৃটিশ, পাকিস্তানী যেমন শোষণ করেছিল তেমনটি হতে থাকবে যা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে কিছু সংখ্যক লোকের মধ্যে। আমাদের ভাগ্য আমাদের চিন্তা ধারা আমাদেরই করার সুযোগ করতে সাহায্য করবে, যদি আমরা সুশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাই। নইলে বহির্বিশ্বের কিছু লোক চুক্তি করবে এদেশের কিছু লোকের সাথে,করবে ব্যবসা যেমন গার্মেন্টসের মত বাণিজ্য আর গড়বে প্রাচীর, সাথে কলুর বলদের মত করে সারাজীবন খাটাবে দেশের মেহনতি মানুষকে। চিন্তাশক্তির যাতে লোপ পায় তার জন্য বিদেশি কূটনৈতিকরা সারাক্ষণ সরকারকে ব্যস্ত রাখবে দরিদ্রতা, দুর্নীতি,অরাজকতার মধ্যে দিয়ে। তাই এসব থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র উপায় হবে সুশিক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দেশবাসী এবং সরকারকে সত্বর হাত বাড়াতে হবে পরিবর্তনের জন্য,সাথে চালু করতে হবে এই বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই শিক্ষাঙ্গনে এক বিরাট পরিবর্তনের চাই সংশ্লিষ্ট সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
লেখক: পরিচালক ও পরামর্শক, স্টকহোম, সুইডেন।