আজ বিশ্বকাপ ফাইনাল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ইতিহাস বড় নিষ্ঠুর, স্বার্থপর। সে তার অতল গর্ভে পরম মমতায় আগলে রাখে শুধু বিজয়ীদের। পরাজিতের কোনো ঠাঁই নেই সেখানে। খেলার মাঠ হোক আর রণক্ষেত্র, জয় কীভাবে এলো, তা কেউ মনে রাখে না। সব ভুলে মানুষ কুর্নিশ জানায় শুধু বিজয়ীকে। হালের কর্পোরেট যুগ আরও বেশি বিজয়-পূজারি। অমোঘ সত্যটা ক্রোয়েশিয়াও জানে। এবারের বিশ্বকাপে তাদের সুন্দরতম রূপকথার শেষটা মধুর না হলে মানুষ একদিন ভুলে যাবে মাত্র ৪১ লাখ জনসংখ্যার ছোট্ট দেশটি ফাইনালে খেলেছিল। শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। শেষ ভালো মানেই চূড়ান্ত সাফল্য। ফুটবলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পা রেখে জগত জয়ের অবিনাশী তৃপ্তি। আজ সেই অমৃতের পেয়ালায় চুমুক দেয়ার জগত কাঁপানো লড়াই। এক মাস ও ৬৩ ম্যাচের আখ্যান শেষে রাশিয়া বিশ্বকাপের পরম আরাধ্য ফাইনাল আজ। শেষ যুদ্ধে ফ্রান্সের দামাল তরুণ ব্রিগেডের সামনে ক্রোয়েশিয়ার সোনালি প্রজন্ম। মস্কোর নন্দনকানন লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে দু’দল। ১৯৯৮-র চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের সামনে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। আর প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা ক্রোয়েশিয়ার সামনে নবম দল হিসেবে বিশ্বকাপজয়ী দেশগুলোর কাতারে নাম লেখানোর সুযোগ।

 ক্রোয়েশিয়া জিতলে বিশ্বকাপ পাবে নতুন চ্যাম্পিয়ন। আর ফ্রান্স জিতলে চ্যাম্পিয়নদের অভিজাত ক্লাবের সদস্য সংখ্যা আটেই আটকে থাকবে। ধারে-ভারে ফেভারিটের তকমা আজ ফ্রান্সের গায়েই। ইতিহাসও ফরাসিদের অনুকূলে। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ১৯৯৮ সালে নিজেদের বিশ্বকাপ অভিষেকেই তৃতীয় হয়ে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। সেবার এই ফ্রান্সের কাছেই ২-১ গোলে হেরে শেষ চারে থেমেছিল সুকের, বোবানদের সোনালি প্রজন্মের স্বপ্নযাত্রা। সব মিলিয়ে আগের পাঁচ দেখায় একবারও ফ্রান্সকে হারাতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু ইতিহাসের এই অগ্রগামিতা ফ্রান্সকে কোনো বাড়তি সুবিধা দেবে না। সব কিছুরই একটা প্রথম থাকে। এবারই যেমন প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। অঘটনপ্রসবা এই বিশ্বকাপে অনেক চেনা অঙ্কই মেলেনি। গত ১৪ জুন বিশ্বকাপের বোধনের সময় কেউ কি ভেবেছিলেন ফাইনালে দেখা হবে ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়ার? জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও স্পেনের মতো প্রথাগত ফেভারিটরা একে একে সেমির আগেই ঝরে গেছে। তরুণ ফ্রান্সকে নিয়ে অনেকের উচ্চাশা থাকলেও এমন ফরাসি বিপ্লব কারও কল্পনায়ও ছিল না। আর ‘আন্ডারডগ’ ক্রোয়েশিয়া তো চমকের পসরা সাজিয়ে সম্ভব-অসম্ভবের সীমারেখাই মুছে দিয়েছে। ফাইনালে তাই অচল ফেভারিট-তত্ত্ব নিয়ে কপচানির কোনো সুযোগ নেই।

মাঠে যাদের কৌশল হবে বেশি উদ্ভাবনী, ফাইনালের চাপ যারা ভালোভাবে সামলাতে পারবে এবং ভাগ্য যাদের সহায় হবে- তাদের গলাতেই আজ উঠবে বরমাল্য। ফ্রান্সের শক্তি তারুণ্য আর ক্রোয়েশিয়ার শক্তি অভিজ্ঞতা। ১৯ বছর বয়সী ফরাসি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে তার অভিশ্বাস্য গতি ও দক্ষতা দিয়ে হয়ে উঠেছেন বিশ্বকাপের সবচেয়ে শিহরণ জাগানো খেলোয়াড়। তাকে ঘিরে আছেন আঁতোয়া গ্রিজমান ও পল পগবা। মাঝমাঠে আস্থার প্রতীক এনগোলো কন্তে। ভারানে, উমতিতি, পাভার্ডরা রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি গোলও এনে দিচ্ছেন দলকে। শেষপ্রহরী হুগো লরিসও আছেন দারুণ ছন্দে। সবাইকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছেন কোচ দিদিয়ের দেশম। ’৯৮ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের সামনে দারুণ এক কীর্তির হাতছানি। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি আছে মাত্র দু’জনের। তবে জাগালো ও বেকেনবাওয়ারের পাশে নাম লেখানোর ব্যাপারটি একদমই টানছে না দেশমকে। ঘরের মাঠে ২০১৬ ইউরোর ফাইনালে পর্তুগালের কাছে হার তাকে করে তুলেছে ভীষণ বাস্তববাদী। অতীত বা ভবিষ্যতে ডুব না দিয়ে শিষ্যদের বর্তমানেই মন দিতে বললেন দেশম, ‘১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ের কথা ফ্রান্সের মানুষ জানে। আমাদের কৃতিত্ব কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। কিন্তু আমি পেছনে তাকাতে পছন্দ করি না, বর্তমানে বাঁচি। আমরা যখন বিশ্বকাপ জিতেছিলাম, এই দলের অনেকেরই তখন জন্ম হয়নি। আমি চাই ওরা ফ্রান্সের ফুটবল ইতিহাস নতুন করে লিখুক। সেজন্য অতীত-ভবিষ্যৎ না ভেবে বর্তমানেই মন দিতে হবে। মনে রাখতে হবে ক্রোয়েশিয়াও আমাদের মতো ক্ষুধার্ত। দু’দলেরই সুযোগ ফিফটি-ফিফটি। এখানে কোনো ফেভারিট নেই।’

দেশমের শেষ কথাটা ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাতকো দালিচও মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন। নিজেদের সামর্থ্যরে ওপর আস্থা রেখেই এতদূর এসেছে তারা। মডরিচ, রাকিতিচ, মানজুকিচ, সুবাসিচদের সোনালি প্রজন্মের জন্য অমরত্ম্যের পেয়ালায় চুমুক দেয়ার এটাই শেষ সুযোগ। তাদের যা বয়স, তাতে আগামী বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। মডরিচরাও জানেন, এবার নয়তো কখনই নয়। নকআউট পর্বে টানা তিন ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছে ক্রোটরা। তিনটি ম্যাচই গড়িয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু বিশ্বজয়ের হাতছানি যখন সামনে, ক্লান্তিকে পরোয়া নেই দালিচের, ‘এমন সুযোগ জীবনে একবারই আসে। অনেক কঠিন বাধা পেরিয়ে এখানে এসেছি আমরা। গোটা ক্রোয়েশিয়াকে গর্বিত করার এই সুযোগ আমরা কিছুতেই হাতছাড়া করতে পারি না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029940605163574