আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে জ্ঞান হারালেন নুসরাতের মা

ফেনী প্রতিনিধি |

ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন তার মা শিরিন আক্তার। বুধবার (১০ জুলাই)ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে এ ঘটনা ঘটে। জবানবন্দি ও জেরা শেষে একপর্যায়ে এজলাসে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান শিরিন আক্তার। 

পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ মামলায় পরবর্তী শুনানির জন্য আজ বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন আদালত। আজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক আবুল খায়েরকে উপস্থিত রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

গতকাল দুপুর ১২টা থেকে আদালতে নুসরাতের মা শিরিন আক্তারের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ সময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আদালতের কাঠগড়ায় মামলার আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা পপিকে দেখে কেঁদে ওঠেন তিনি। বেলা আড়াইটার দিকে এজলাসেই তিনি জ্ঞান হারান।

নুসরাতের মা শিরিন আক্তারের সাক্ষ্যগ্রহণের আগে মামলার ১৬ আসামিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল কক্ষে কাঠগড়ায় তোলে পুলিশ। পরে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ কার্যতালিকা অনুসারে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য শিরিন আক্তারকে ডাকেন। এ সময় আদালত শিরিন আক্তারের মানসিক ও শারীরিক বিপর্যস্ত অবস্থা 

বিবেচনা করে এজলাসে বিচারকের আসনের পাশে একটি চেয়ারের ব্যবস্থা করার জন্য পেশকারকে নির্দেশ দেন। ওই চেয়ারে বসেই তিনি জবানবন্দি দেন এবং আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। এ মামলার সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ জানান, 

জ্ঞান হারানোর পর শিরিন আক্তারকে গুরুতর অবস্থায় ফেনী হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রয়োজনে ঢাকায় স্থানান্তর করা হবে।

জবানবন্দি দেওয়ার সময় শিরিন আক্তার একমাত্র কন্যার শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তাকে বারবার চোখ মুছতে দেখা যায়। কথা বলার সময় কণ্ঠ জড়িয়ে আসছিল। তিনি নুসরাতের ওপর অধ্যক্ষ সিরাজের যৌন নির্যাতন থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত সব ঘটনা বর্ণনা করেন। এ সময় আসামি পক্ষে গিয়াস উদ্দিন নান্নু, কামরুল হাসান, আহসান কবির বেঙ্গল, মাহফুজুল হক, নুরুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম মিন্টুসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী বিচারকের পাশে দাঁড়িয়ে জবানবন্দি শোনেন ও পরে জেরা করেন।

জবানবন্দিতে শিরিন আক্তার বলেন, গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে অধ্যক্ষ সিরাজ মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিনের মাধ্যমে নিজের কক্ষে ডেকে নেয়। এ সময় নুসরাতের সঙ্গে তার বান্ধবী ফুতি ও নিশাত থাকলেও অধ্যক্ষ তাদের কক্ষে ঢুকতে দেয়নি। নুসরাতকে পরীক্ষা শুরুর আধাঘণ্টা আগে প্রশ্ন দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করবে বলে জড়িয়ে ধরে সিরাজ।

নুসরাতের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। নুসরাতের মা বলেন, তিনি এ ঘটনায় বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ সিরাজকে গ্রেফতার করে। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে শিরিন আক্তার বলেন, মৃত্যুর আগে নুসরাত বলেছিল- ৬ এপ্রিল পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে পাঁচজন বোরকা পরা লোক সিরাজের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। নইলে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। নুসরাত তখন বলে, 'আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। অধ্যক্ষের অপরাধের শাস্তি দেখে যেতে চাই।' তখন তারা নুসরাতের হাত-পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। 

নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। গত ২০ জুন এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

এদিকে, গতকাল বিকেলে ফেনীর পুলিশ সুপার খন্দকার নুরুন নবী পিপিএম নুসরাতের মা শিরিন আক্তারকে দেখতে হাসপাতালে যান। তিনি জানান, নুসরাতের মা এখন সুস্থ আছেন, মানসিক চাপের কারণে অসুস্থ হয়েছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005079984664917