আনন্দ মোহন কলেজ : বাড়তি শিক্ষার্থীর চাপ, ক্লাসও কম

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে প্রতিবছর ভর্তি করা হয় ১৭০ জন শিক্ষার্থী। ইংরেজি, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্মসহ আরও কয়েকটি বিভাগে স্নাতকে (সম্মান) ভর্তি করা হয় ২৪০ থেকে ২৭০ জন করে। কিন্তু একসঙ্গে সব শিক্ষার্থী বসার মতো বড় শ্রেণিকক্ষও নেই। শিক্ষার্থীর অনুপাতে পর্যাপ্ত ​শিক্ষকও নেই। তবে বাস্তবতা হলো, সব শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত থাকেন না। ক্লাসও হয় কম। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ ও জগলুল পাশা।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় সম্প্রতি সরেজমিনে গেলে ভূগোল বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, প্রতি কোর্সে ৬০টি ক্লাস দরকার। ক্লাস হয় তিন ভাগের এক ভাগের মতো। বিভিন্ন সময় পরীক্ষা লেগে থাকে। সারা বছর বড়জোর তিন-চার মাস ক্লাস হয়। তাঁদের বিভাগে শিক্ষকও কম, মাত্র আটজন আছেন। আবার ক্লাসে নির্ধারিত পরিমাণের (ন্যূনতম ৭০ শতাংশ) চেয়ে কম উপস্থিতি থাকলেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সুযোগ দিতে হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে শিখছেন না। হয়তো কোনোভাবে পরীক্ষায় পাস করেন।

অবশ্য এর মধ্যেও ১১১ বছরের পুরোনো এই কলেজ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে উচ্চমাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। গত বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা কলেজের তালিকায় আনন্দ মোহন ষষ্ঠ হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকের ফল আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে। এ বছর পাসের হার ৯৪ শতাংশের বেশি। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৪৩ জন।

তবে এই ভালো ফলের জন্য কলেজের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কোচিং ও প্রাইভেট পড়াও বড় ভূমিকা রাখছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি স্নাতক (সম্মান) স্তরের শিক্ষার্থীদের অনেককেই প্রাইভেট পড়তে হয়।

কলেজের অধ্যক্ষ নারায়ণ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, সমস্যার মধ্যেও ভালো করার জন্য তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ছাত্রীদের আবাসনসংকট দূর করতে আরও দুটি ছাত্রীনিবাসের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন ছাত্রীদের ওঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। একটি ১০ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। সহশিক্ষা কার্যক্রমও বাড়ানো হয়েছে।

সমাজহিতৈষী আনন্দ মোহন বসুর নামে ময়মনসিংহ শহরে এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও ২১টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও ২০টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ানো হয়। মোট শিক্ষার্থী ৩৬ হাজার ৩৮৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৯ হাজার ১৮১ জন এবং ছাত্রী ১৭ হাজার ২০৩ জন। শিক্ষক আছেন ২১১ জন। অর্থাৎ গড়ে ১৭২ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক রয়েছেন। অথচ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১ অনুপাত ২১।

পত্রিকায় তিন বছর আগে এই কলেজ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও এই সমস্যাগুলো উঠে এসেছিল। এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষক কিছু কমেছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও ​খুব বাড়েনি। তিন বছর আগে শিক্ষার্থী ছিলেন ৩২ হাজার। তখন শিক্ষক ছিলেন ২১৬ জন।

সম্প্রতি কলেজ ক্যাম্পাসে গেলে একাধিক শিক্ষক বলেন, তাঁদের কলেজে কত শিক্ষার্থী এবং কারা ভর্তি হবেন, সবই ঠিক করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না বাড়িয়ে কেবল বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার ফলে শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো পড়াশোনা হচ্ছে না। ফলে প্রথম বর্ষে উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি থাকলেও ওপরের শ্রেণিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে থাকে। স্নাতকোত্তরে গিয়ে উপস্থিতি ও ক্লাস দুটোই একেবারে কমে যায়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য হাফিজ মো. হাসান বলেন, কলেজগুলোর চাহিদার ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়।

আবাসন সমস্যা একই বৃত্তে

এখানে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদের জন্য তিনটি ছাত্রাবাস (একাধিক নামে মোট ৭টি ব্লক) রয়েছে। এসব ছাত্রাবাসে থাকতে পারেন ৯০০-এর মতো। বেশির ভাগ হল ভবনের অবস্থা করুণ। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন হলে গিয়ে দেখা যায় কক্ষগুলো জীর্ণ। এই হলের একজন ছাত্র জানান, হলে ওঠার জন্য ‘রাজনৈতিক বড় ভাইদের’ কিছু টাকাও দিতে হয়েছিল। এর বাইরে কলেজ প্রশাসনের নির্ধারিত ফি বছরে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা তো আছেই।

একতলাবিশিষ্ট সুকান্ত ভট্টাচার্য ছাত্রাবাসে তিন বছর আগের মতো এখনো করুণ দশা দেখা গেছে। অনুপ কুমার সাহা নামের একজন ছাত্র বলেন, বেশি বৃষ্টি হলে বারান্দায় পানি ওঠে।

ছাত্রীদের জন্য এত দিন দুটি হল ছিল। নতুন দুটি হল নির্মিত হয়েছে। এগুলো চালু হলে তাঁদের সমস্যা কিছুটা কমবে।

পর্যাপ্ত আবাসনসুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগকেই কলেজের আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় মেস করে থাকতে হয়। ফলে পড়াশোনার সার্বিক খরচ বেশি হচ্ছে। আবার পরিবহনের সমস্যাও প্রকট। মাত্র তিনটি বাস চলে, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054121017456055