কক্সবাজার পেকুয়া উপজেলায় সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিচালিত ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) প্রকল্পের ৭৪টি আনন্দ স্কুলের দেড় হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষোপকরণ কেনার জন্য বরাদ্দের টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। কয়েক বছর ধরে পেকুয়া উপজেলায় আনন্দ স্কুলের প্রকল্প বাস্তবায়নের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ হলেও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরাবরের মতো এবারের শিক্ষোপকরণ বরাদ্দ নিয়ে আনন্দ স্কুলের পেকুয়া উপজেলা ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দের টাকা লুট করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের তদারকি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার ৭৪টি আনন্দ স্কুলের প্রতিজন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষোপকরণের জন্য ২০০ টাকা করে দেড় হাজার শিক্ষার্থীরা জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত জুন মাসের ৩০ তারিখের আগেই সে টাকা শিক্ষকরা চকরিয়া সোনালী ব্যাংক থেকে উত্তোলনও করেছেন।
কিন্তু আনন্দ স্কুলের পেকুয়া উপজেলা ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর (টিসি) মো. জুনাইদ ৭৪টি আনন্দ স্কুলের শিক্ষকদের পেকুয়া বাজারের ইসলামিয়া লাইব্রেরি থেকে নিম্নমানের শিক্ষোপকরণ ক্রয় করতে বাধ্য করেছেন বলে প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে। শিক্ষকরা বাধ্য হয়েই পেকুয়া বাজারের ইসলামিয়া লাইব্রেরি থেকে অত্যন্ত নিম্নমানের শিক্ষোপকরণ ক্রয় করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ইসলামিয়া লাইব্রেরির কর্মচারী মো: মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, পেকুয়া উপজেলার বেশিরভাগ আনন্দ স্কুলের শিক্ষোপকরণ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা তাদের দোকান থেকেই ক্রয় করছেন। প্রতিজন শিক্ষাথীদের জন্য তাদের দোকানে ১২৫ টাকা করে দিয়েছেন শিক্ষকরা। এর বাইরে তিনি আর কিছইু জানেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পেকুয়া বাজারের ইসলামিয়া লাইব্রেরি থেকে সরবরাহকৃত শিক্ষা উপকরণের মান খুবই নিম্ন। পেকুয়া উপজেলার টিসি মো. জুনাইদ পেকুয়া বাজারের ইসলামিয়া লাইব্রেরির মালিকের সঙ্গে আঁতাত করে ফায়দা লুটে নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা নিম্নমানের উপকরণ পেয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনন্দ স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, উপজেলার দেড় হাজার শিক্ষার্থীর জন্য গড়ে ২০০ টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও আনন্দ স্কুলের টিসি সেখান থেকে গড় প্রতি ২০ টাকা করে সর্বমোট ৩০ হাজার টাকা শিক্ষা অফিসারের নাম ভাঙিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে আদায় করেছেন।
তবে এ ব্যাপারে জানতে যোগযোগ করা হলে আনন্দ স্কুলের পেকুয়া উপজেলা টিসি মো. জুনাইদ জানান, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষোপকরণ ক্রয়ে অনিয়ম করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। তিনি শিগগিরই পেকুয়া উপজেলা প্রত্যেক আনন্দ স্কুলে গিয়ে তদন্ত করে দেখবেন। শিক্ষোপকরণের টাকা নিয়ে কোনো শিক্ষক অনিয়ম করলে যথাযথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিম্নমানের শিক্ষোপকরণ সরবরাহকারী পেকুয়া বাজারের ইসলামিয়া লাইব্রেরির সঙ্গে তার আঁতাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা সরাসরি অস্বীকার করেছেন। শিক্ষকদের বাধ্য করে ছাত্রপ্রতি ২০ টাকা করে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দেয়ার কথা বলে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো ধরনের সদুত্তর দিতে পারেনি। পেকুয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার ছালামত উল্লাহ খান জানান, তিনি সরেজমিনে বিভিন্ন আনন্দ স্কুলে গিয়ে তদন্ত করে দেখবেন। অনিয়ম হলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।