মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলগামী করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত আনন্দ স্কুলের শিক্ষকরা কোমলমতি শিশুদের ব্যবহার করে প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন আনন্দ স্কুলের নিবন্ধিত দশ শিক্ষার্থী রোববার শ্রীমঙ্গলের সাঁতগাও উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিতে এসে ধরা পড়েছে, যারা উপজেলার বিভিন্ন স্কুল থেকে চলতি বছরই অষ্টম শ্রেণির জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
সাঁতগাও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপ দত্ত বলেন, ওই দশ শিক্ষার্থী স্থানীয় চারটি আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধন নিয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিতে এসেছিল রোববার। কিন্তু কথা বলে তারা জানতে পারেন, তারা সবাই এ বছর বিভিন্ন স্কুল থেকে জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
কেন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিতে এসেছে এ প্রশ্ন করলে ওরা জানায়, আনন্দ স্কুলের শিক্ষকরা তাদের প্রবেশপত্র দিয়ে পরীক্ষা দিতে পাঠিয়েছে, তাই তারা এসেছে। আমরা যখন বললাম, তাদের জেএসসি পরীক্ষা এখন বাতিল হয়ে যাবে, তখন তারা কান্নায় ভেঙে পড়ল।
প্রধান শিক্ষক বলেন, বিভিন্ন স্কুলে নিয়মিতভাবে পড়ালেখা করছে- এরকম শিক্ষার্থীদের ‘ঝরে পড়া’ দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে প্রকল্পের তহবিল থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কোনো কোনো আনন্দ স্কুল। তারা কৌশল করে ওই শিক্ষার্থীদের ছবি দিয়ে প্রাথমিক সমাপনীর প্রবেশপত্র তুলেছে। পরে জেএসসি পরীক্ষা দেওয়া ছেলেমেয়েগুলোকে বুঝিয়ে সুজিয়ে পাঠিয়েছে প্রাথমিকের পরীক্ষা দিতে।
অনুপ দত্ত বলেন, ওই ১০ শিক্ষার্থী গরিব চা শ্রমিকের সন্তান। হয়ত বুঝতেও পারেনি তাদের দিয়ে আনন্দ স্কুলের শিক্ষকরা কী করিয়েছে। যেহেতু ওদের কোনো দোষ নেই, তাই আমরা ওদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পরীক্ষা থেকে বিরত রেখে তাদের ফেরত পাঠিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলের উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর আনন্দ স্কুলের স্থানীয় ট্রেইনিং কোঅর্ডিনেটরকে কারণ দর্শাও নোটিস দিয়েছি। এরকম আর কোনো ভুয়া পরীক্ষার্থী থাকলে যেন সামনে তাদের আর পরীক্ষা দিতে না পাঠায়, সে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।’
আনন্দ স্কুলের স্থানীয় ট্রেইনিং কোঅর্ডিনেটর মোস্তাক আহমেদ বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৮৫টি আনন্দ স্কুল থেকে এবছর ১ হাজার ৫২১ জন প্রাথমিক সমাপনী দিচ্ছে। এর মধ্যে সাঁতগাও সেন্টারের ওই ১০ শিক্ষার্থীকে সাঁতগাও এলাকার কয়েকটি আনন্দ স্কুল থেকে পিইসি পরীক্ষা দিতে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকদের বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব।