আবরার হত্যা বাংলাদেশে গভীর অন্ধকারের ইঙ্গিত: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

‘মানুষ তার মত প্রকাশ করবে, এটি সংবিধানে বলা আছে। বাকস্বাধীনতা রক্ষা সংবিধানের অঙ্গীকার। অথচ, মত প্রকাশের কারণেই বুয়েটের একজন শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হলো।’

‘নিহত আবরার ফাহাদ দেশের কথা বলেছিল, দেশের মানুষের কথা বলেছিল। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নানা চুক্তি করা হচ্ছে। এই চুক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেছিল আবরার। আবরারকে হত্যা, বাংলাদেশে গভীর অন্ধকারের ইঙ্গিত।’

বলছিলেন, ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, যিনি দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ হিসেবে পরিচিতি পেলেও এ অধ্যাপক সমতার ভিত্তিতে সমাজ, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও সক্রিয়।

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা এবং জাতীয় স্বার্থ নিয়ে তিনি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তা নিয়ে ফলপ্রসু আলোচনা হবে। রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনা হবে। এনআরসি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। তা হয়নি। উপরন্তু ফেনী নদীর পানি দিয়ে দেয়া হলো। গ্যাস রফতানি করা হচ্ছে। বন্দর ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হলো। এসব তো প্রত্যাশিত ছিল না।’

‘এমন অপ্রত্যাশিত রাষ্ট্রবিরোধী চুক্তি নিয়ে মানুষ বলবে, তা খুব স্বাভাবিক। আর এমন বলার কারণে যদি কাউকে হত্যার শিকার হতে হয়, তাহলে রাষ্ট্র, সমাজের জন্য বিপদ অনিবার্য।’

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শাসকরা ভুলে যায়, জন্মগতভাবেই মানুষ স্বাধীনচেতা। এ স্বাধীনতা চর্চা করে মানুষ কথা বলতে চায়। জাতীয় ইস্যুতে মানুষ বলবেই। আবরার ব্যক্তিগত ইস্যুতে বলেনি। এটি বলা তার নাগরিক অধিকার।’

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা যদি মত প্রকাশ করতে না পারে, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাই হচ্ছে, মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করবে, বিতর্ক করবে। কিন্তু সরকারি দলের আধিপত্যে সে পরিবেশ মারাত্মকভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এর প্রধানতম কারণ হচ্ছে, গত তিন দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্র সংসদ নেই। সম্প্রতি ডাকসুর যে নির্বাচন হয়, তাতে সরকারদলের জবর-দখলই দেখতে পেলাম। তার মানে গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের কোনো প্লাটফর্মই নেই।’

রাষ্ট্র, সমাজ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘একজন অপরাধ করলো, আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে আটক করে শাস্তি দিল, তাতে ত্রাসের রাজত্ব দূর হবে না। সবার আগে মানুষের স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। এ শ্রদ্ধা নেই বলেই বাংলাদেশ অন্ধকার গুহায় ঢুকে পড়েছে।’

‘এ অন্ধকার গুহায় এখনই আলো জ্বালাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, সমাজের সবচেয়ে অগ্রসর অঙ্গ। এ দেশে শিক্ষার্থীরাই সবার আগে অধিকার নিয়ে কথা বলে। স্বৈরাচারবিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। শিক্ষকরাও তাই। কিন্তু এখানেও পচন ধরেছে। এ পচন থেকে রক্ষা না মিললে সবই পচে যাবে। সুতরাং মানবতাকে রক্ষা করতে হলে এখনই ঘুরে দাঁড়াতে হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050408840179443