আবরারকে উদ্ধার করতে দু’বার পুলিশ গিয়েছিলো

বুয়েট প্রতিনিধি |

বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদের নির্যাতনের খবর শুনে পুলিশ হলে গিয়েছিলো। একবার নয়, দু’বার। কিন্তু ছাত্রলীগের বাধার কারণে হলের ভেতরে ঢুকতে পারেনি তারা। প্রথমবার হলের গেটেই থামিয়ে দেয়া হয়েছিলো তাদের। অগত্য গেস্টরুমে অপেক্ষা করেন। একঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে যান তারা। আর দ্বিতীয়বার যখন তারা হলে যান, ততক্ষণে পরপারে পাড়ি জমিয়েছিলেন আবরার। শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও  পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত এ খবরে এ তথ্য জানা যায়। 

শিক্ষার্থীরা বলছে, সময়মতো তাকে উদ্ধার করা গেলে হয়তো বেঁচে যেতেন দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী।  


 
প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামাল হোসেন শেরেবাংলা হলে পুলিশ গিয়ে ফিরে আসার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, খবর পেয়ে চকবাজার থানার একটি দল শেরেবাংলা হলের ফটকে গেলেও তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে পুলিশ ফিরে আসে। কারা ঢুকতে দেয়নি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যিনি গিয়েছিলেন, তার সঙ্গে কথা বলুন।

ওই রাতে খবর পেয়ে হলের ফটকে গিয়েছিলেন চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাত দেড়টার দিকে তিনি খবর পেয়ে সেখানে গেলে তাকে অভ্যর্থনাকক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (ঘটনার পর ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত) মেহেদি হাসান ওরফে রাসেল তাকে বসে থাকতে বলেন। তারা এক ঘণ্টা বসে থাকার পর ফিরে যান। একটি ছেলেকে মারধর করার খবর পেয়ে কেন বসে থাকলেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনুমতি ছাড়া হলের ভেতরে  গেলে অন্য কিছু হতে পারে ভেবে ভেতরে যাননি।

পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক নাঈম আহমেদ বলেন, যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে পুলিশের প্রধান কাজ হলো ঘটনার শিকার ব্যক্তিকে উদ্ধার করা। কেউ যখন মৃত্যুঝুঁকিতে থাকেন, শারীরিক ক্ষতির শিকার হওয়ার আশঙ্কায় থাকেন, তখন তাকে উদ্ধার করাই প্রধান কাজ।

আবরার হত্যা মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সূত্র জানায়, আবরারকে ডেকে আনা, মারধর করা এবং পুলিশকে খবর দেয়া থেকে শুরু করে সবকিছুই তদারক করছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল। লাশ গুম ও আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন ছাত্রলীগ  নেতারা। এ কাজে রাসেলকে সহায়তা করেন শাখা ছাত্রলীগের অন্য  নেতাকর্মীরা। পুলিশ মনে করছে, ২৪-২৫ জন এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ জনকে চিহ্নিত করে মামলার আসামি করা হয়েছে।

রাত দেড়টার পর ছাত্রলীগ নেতা রাসেল লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার কামাল হোসেনকে ফোন করে ঘটনা জানান। তবে কামাল বলেন, রাসেল তাকে ফোন করেননি, তিনি সরাসরি থানায় ফোন করেছিলেন। থানাে থেকে তিনি ঘটনা জানতে পারেন। রাসেলের ফোন  পেয়ে টহলে থাকা উপপরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন হলের সামনে যান। এ সময় ছাত্রলীগ নেতারা আবরারকে পুলিশে দেবেন, নাকি অন্য কিছু করবেন তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েন। তারা পুলিশকে জানান, তারা এক ‘শিবিরকর্মী’ ধরেছেন, তাকে পুলিশে না দিয়ে কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে  দেবেন। এ সময় পুলিশকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেন রাসেল। পুলিশ  সেখানে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে ফিরে যায়।

তবে ওই হলের একজন ছাত্র জানান, পুলিশ এসে ঘটনার বিবরণ শুনে  ভেতরে না ঢুকে চলে যায়। পুলিশ চাইলে ভেতরে গিয়ে আবরারকে হাসপাতালে নিতে পারতো। তাহলে হয়তো আবরার বেঁচে যেতেন।

অন্য একজন ছাত্র জানান, পুলিশ চলে যাওয়ার পর ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশে ছাত্রলীগের চার কর্মী আবরারকে চ্যাংদোলা করে ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে একটি বিছানায়  শোয়ানোর পরই নিথর হয়ে যান আবরার। এরপর ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীদের সেখানে ডাকা হয়। তারা ২০০৫ নম্বর কক্ষে গিয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলেন না। কেউ আবরারকে হলের বাইরে রাস্তায় ফেলে দিতে বলেন। কেউ বলেন সিঁড়ির গোড়ায় বা ছাদে রেখে আসতে। তখন আবরারকে সরিয়ে ফেলার জন্য কয়েকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা একটি চাদরে মুড়িয়ে আবরারের নিথর দেহটি দোতলা ও নিচতলার মাঝামাঝি সিঁড়িতে নিয়ে রাখেন।

হলের একজন কর্মী প্রভোস্ট জাফর ইকবাল খানকে ফোন করে ঘটনাটি জানালে তিনি গেটের সামনে আসেন। প্রভোস্ট বলেন, রাত পৌনে তিনটার দিকে খবর পাই একজন শিক্ষার্থী পড়ে আছে। তাৎক্ষণিকভাবে বুয়েটের চিকিৎসক মাসুক এলাহীকে জানাই। তিনি এসে জানান ছেলেটি  বেঁচে নেই। পরে পুলিশকে খবর দিই।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057621002197266