আবার সঞ্চয়পত্রে ফিরছে সাধারণ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ব্যাংকের চেয়ে সুদের হার বেশি হওয়ায় আবার সঞ্চয়পত্রমুখী হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ফলে টানা কমার পর কিছুটা গতি এসেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৪০ কোটি টাকা। এটি একক মাস হিসেবে চলতি অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

আগের মাস ডিসেম্বরে এ চিত্র ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। সেই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ছিল ঋণাত্মক ৪০৮ কোটি টাকা। আগের মাস নভেম্বরে ছিল মাত্র ৩২০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা, যা পুরো অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিআইএন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করা, মুনাফায় উৎসে কর বৃদ্ধি এবং অপ্রদর্শিত অর্থে ক্রয় প্রতিরোধ করাসহ নানা রকম কড়াকড়ি আরোপে প্রতি মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাচ্ছিল। 

তবে আগামী ১ এপ্রিল ব্যাংক আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ করার ঘোষণায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কিছুটা বাড়তে শুরু করে। জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্রের মোট ও নিট বিক্রির চিত্র সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে সাত হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। এটি গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া এ মাসে মূল্য পরিশোধের পর নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ২৪০ কোটি টাকা। যদিও এটি গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৬৩ শতাংশ কম।

জানা গেছে, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী জানান, ১ এপ্রিল থেকে সব ঋণের সুদহার হবে ৯ শতাংশ। আর আমানতের সর্বোচ্চ সুদ হবে ৬ শতাংশ। অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর মানুষ আবার সঞ্চয়পত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছে। 

যদিও গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করে শুধু ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার বেঁধে দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতের সুদহার বেঁধে না দিলেও বেসরকারি ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন এবিবি ফেব্রুয়ারি থেকে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিয়ম-কানুনে কড়াকড়িতে চলতি অর্থবছরের প্রতি মাসেই তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে।

যেমন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল প্রায় পাঁচ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে বিক্রি হয় দুই হাজার ১৬০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের আগস্টে বিক্রি হয়েছিল চার হাজার ২১ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবছরের আগস্টে বিক্রি হয় এক হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। 

গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয়েছিল চার হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয় ৯৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের নভেম্বরে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। সেখানে আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার ৮৩৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। আর চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ঋণাত্মক ৪০৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। 

আগের বছরের ডিসেম্বর মাসে নিট বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। আর ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয় ছয় হাজার দুই কোটি টাকার, সেখানে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হয়েছে দুই হাজার ২৪০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সাত হাজার ৬৭৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ঋণ নিয়েছিল। অস্বাভাবিক বিক্রি বাড়তে থাকায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঠিক করা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৪ হাজার কোটি টাকা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিক্রি হয় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন : সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ সীমা কমছে

জানা গেছে, বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। 

দুর্নীতি কিংবা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেইসে সংরক্ষণের লক্ষ্যে অভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার। চাইলেই ভবিষ্য তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026900768280029